বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি লঘুচাপ রাজ্যবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, এই নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে আগামী ঘণ্টাগুলিতে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর ফলে রাজ্যের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলিতে শুরু হতে চলেছে ঝড়ো হাওয়া, বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বর্ষণ এবং সম্ভাব্য প্লাবন। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুসারে, দুপুরের পর থেকেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। বিশেষ করে উপকূলবর্তী জেলা যেমন পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪৫ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সমুদ্রের জলস্তর ৭–৮ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় অনেক বেশি এবং বিপজ্জনক।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর দপ্তরগুলি তৎপর হয়ে উঠেছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাছ ধরার ট্রলার এবং নৌযানগুলিকে অবিলম্বে উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী নৌযান পরিষেবাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। উপকূলবর্তী গ্রামবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে। স্থানীয় স্কুল, ক্লাব ও সরকারি ভবনগুলিকে অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে রূপান্তর করার কাজও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন নিম্নচাপ বর্ষাকালে বিরল নয়, কিন্তু এই মুহূর্তে ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই প্রশাসনের তরফে মানুষের উদ্দেশ্যে বারবার সতর্কতা জারি করা হচ্ছে। প্রত্যেককে আবহাওয়ার খবরে নজর রাখতে এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলেদের ক্ষেত্রে এই সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আবহাওয়ার পরিবর্তন খুব দ্রুত হতে পারে, ফলে পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সমুদ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই এখন একমাত্র বুদ্ধিমানের কাজ।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১. বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে?
লঘুচাপটি যদি আরও শক্তি অর্জন করে এবং সমুদ্র থেকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা সংগ্রহ করে, তবে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
২. কোন কোন জেলায় দুপুরের পর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে?
পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গের অন্তত ৮-১০টি জেলায় আজ থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
৩. উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের জলস্তর কতটা বাড়তে পারে?
৭–৮ মিটার পর্যন্ত জলস্তর বাড়তে পারে, যা নিম্নাঞ্চলে প্লাবনের কারণ হতে পারে।
৪. উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের কী ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়েছে?
নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, জরুরি প্রয়োজনে ত্রাণশিবিরে আশ্রয়, ও নৌযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫. নৌচালনা ও মাছ ধরার ওপর কী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে?
সমস্ত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলে ফেরত আসতে বলা হয়েছে এবং যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।