মেয়ে বলেছিল ‘মা তুমি আর দুষ্টু রোল করবে না’। মন খারাপ হয় অনামিকার। এরপর বেশ কয়েকটি মুভি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ঠিক এরপরেই অনুপ সেনগুপ্ত একটি পজিটিভ রোলের স্ক্রিপ্ট দিলেন, সেই মুভির নাম ছিল ‘মায়ের আঁচল’, সেখানেই মায়ের পাঠ করেন অনামিকা। বাংলাদেশের মেয়ে অনামিকা। কলকাতায় পড়াশুনো। ১৯৭৩ এ ‘আশার আলো’ দিয়ে কেরিয়ার শুরু। ১৯৯৬ পর্যন্ত প্রায় ১৫ টি মুভিতে অভিনয় করেন তিনি। উত্তম কুমারের সঙ্গে করেছেন ‘বাঘ বন্দী খেলা’, ‘দুই পুরুষ’। এমনকি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও গানের দৃশ্যে অভিনয় করেন অনামিকা সাহা। ‘প্রতিশোধ’, ‘বিষে বিষে বিষক্ষয়’ সিনেমায় অনামিকা সাহা কাজ করেছেন চুটিয়ে। ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি ‘মা’ ও ‘শাশুড়ি মা’ চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৯৬ তে শেষ অভিনয় তাঁর ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’। এরপরেই দীর্ঘদিনের বিরতি নেন।
২০০২ এ ফিরলেন ‘সাথী’ দিয়ে। কিন্তু সেই সময়েও তাঁর আক্ষেপ নেগেটিভ চরিত্র নিয়ে। বাংলা সিনেমায় খল নায়িকার চরিত্র করতে করতে রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলা ছবির ভ্যাম্প হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে পর্দায় দেখলে দর্শকরা ভাবতেন এই বুঝি দামামা বাজতে চলেছে গল্পে। এমনকি একটা সময় তাঁর শ্বশুর মশাই পর্যন্ত বলতেন যে বউমা ওসব রোল আর করনা। তখন শ্বশুর মশাইয়ের আশীর্বাদ নিয়ে রেডিওতে কাজ শুরু করলেন। আকাশবানীতে কাজ করে অনামিকা বিরাট সাফল্য পান। ২০০২ এর পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় ২০ টির মত ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। যার মধ্যে হিট হয়, ‘সাথী’,’মায়ের আঁচল’, ‘জোর’, ‘বাজি’ সহ আরও কয়েকটি।
এখানেই শেষ নয়, ভয়েস ডাবিং এর কাজও তিনি করেছিলেন চুটিয়ে। বোম্বের আর্টিস্টদের ভয়েস ডাবিং করতেন তিনি। এমনকি মহুয়া রায়চৌধুরী যখন অকালে বিদাই নিলেন তখনও তাঁর কিছু অসমাপ্ত ছবিতে ডাবিং এর কাজ করেছেন অনামিকা সাহা।
ভারত-বাংলাদেশ ব্যাপী সুপারহিট ছবি “বেদের মেয়ে জ্যোসনা” তেও অনামিকা অডিশন দিয়ে জায়গা বানিয়ে নেন। তখন তিনি খুব রোগা ছিলেন। সেই সময় ভাতের ফ্যান খেয়ে মোটা হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
দেবের সঙ্গে কাজ করার ভীষণ ইচ্ছে অনামিকা সাহার। টলিউডের সমস্ত হিরোদের সঙ্গেই কাজ করেছেন, তা উত্তম কুমার হোক বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কিন্তু দেবের পাশে অভিনয় না করার আক্ষেপ ছিল এই প্রবীণ অভিনেত্রীর। এখানেও ঈশ্বর অনামিকার আক্ষেপ মিটিয়ে দিয়েছেন, হইচই আনলিমিটেডের হাত ধরে কমেডি রোল করে ফেললেন দেবের সঙ্গে। এরপরে জিৎ এর সঙ্গে করলেন ‘বাচ্চা শ্বশুর’।
একটা সময় চুটিয়ে মা-শাশুড়ির ভূমিকায় কাজ করতেন অনামিকা কিন্তু তাও মনে একরাশ অভিমান। হ্যাঁ, সৃজিত-কৌশিক ছবিতে নেন না এরকম আক্ষেপ রয়েছে তাঁর। বর্তমানে টলিউড থেকে প্রায় ব্রাত্য অনামিকা। তবে খুশি সুদেষ্ণা রায় অভিজিৎ গুহর তৈরি ‘বেঁচে থাকার গান’ মুভি নিয়ে। নিজেকে পজিটিভ রোলে আজও দেখতে চান বয়স ৬৫-৬৬ এর এই কিংবদন্তী প্রবীণ অভিনেত্রী। সম্প্রতি তাঁকে গিয়েছে বাংলা সিরিয়াল ‘আলো ছায়া’ তে। মিষ্টি ঠাকুমার পাঠ করেন অনামিকা সাহা সেখানে। বার্ধক্যে অনেকটা লুটিয়ে গেছেন তিনি, তাও নিজেকে ফিট রেখেছেন, মনে এখনো আশা ‘পজিটিভ চরিত্র’ করার।