১ কোটিরও বেশি গাছ লাগিয়ে নজির গড়লেন এই বৃদ্ধ, পেয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার
অতিরিক্ত পরিমাণে গাছ কাটার ফলে পৃথিবী এখন মহাসংকটে। বন্যা, ভূমিকম্প, বিশ্ব উষ্ণায়নের জর্জরিত। জমাট বাঁধা বরফের জায়গা ও ক্রমশ গলে যাচ্ছে। কিন্তু তবে পৃথিবীকে বাঁচাতে একমাত্র মানুষই পারে। গাছ রোপন, কোন জিনিসের পুনর্ব্যবহার, এই ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীতে পরিবর্তিত করে তোলা যায়। কিন্তু মানুষ এখনো পর্যন্ত প্রস্তুত নয় এই পরিবর্তন গুলি করতে। তবে সব মানুষ তো আর সমান হয় না। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পৃথিবী কে নিয়ে সত্যিই চিন্তিত।
তেলেঙ্গানায় বসবাসকারী এক মানুষ যিনি নিজে হাতে রোপন করেছেন এক কোটির ও বেশী গাছ। তার নাম দারিপাল্লি রামাইয়া, যিনি চেট্টা রামাইয়া নামেও পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই তার মাটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। ১৯৩৭ সালে তেলেঙ্গানার খাম্মাম জেলায় রেড্ডিপাল্লি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একেবারেই উচ্চ শিক্ষিত নয়, দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ছোটবেলা থেকে তিনি তার মাকে দেখতেন, বিভিন্ন সবজি থেকে বীজ সংগ্রহ করে রাখতেন, পরের ঋতুতে সেগুলি চাষ করবেন বলে। ইচ্ছাটা সেখান থেকেই শুরু হয়। তিনি তার মায়ের কাজে সাহায্য করতেন। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন এবং তিনি ভেবে নেন, শহরায়নের দৌলতে যে সবুজ ধ্বংস হয়েছে সেই সবুজকে তিনি ফিরিয়ে আনবেন। তিনি যখনই রাস্তায় বেরোতেন তার পকেট ভর্তি থাকে গাছের বীজ আর সাইকেলে সব সময় বাধা থাকে গাছ। ঘুরতে ফিরতে এদিক ওদিকে তিনি বীজ ফেলতে ফেলতে যান। আর সবুজায়নের স্বপ্ন দেখেন। এক সময় তার স্ত্রী জানাম্মা, এবং বিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রীর সাহায্য তিনি পান।
স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি তার তিন একর জমি বিক্রি করে দিয়ে গাছের চারা ও বীজ কেনেন। পুঁথিগত বিদ্যা তার নেই বলে এ বিষয়ে তার কোনো অসুবিধা হয়নি। কারণ গাছ সংক্রান্ত তিনি বিভিন্ন রকম বই নিয়ে পড়াশোনা করেন। অনেকেই অবশ্য তার এই গাছ প্রেম নিয়ে রসিকতা করেন। তবে কোনো কিছুই তাঁর মনের ইচ্ছাকে টলাতে পারেনি। যেখানেই ফাঁকা জমি দেখেন সেখানেই তিনি বীজ ছড়াতে থাকেন এবং স্বপ্ন দেখেন একদিন সেই জায়গাটা সবুজ হয়ে উঠবে। ২০১৭ সালে তার এই অপ্রতিরোধ্য মনের জোরের জন্য তিনি ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব পান। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির হাত থেকে তিনি খেতাবটি গ্রহণ করেন। তবে তার এই সবুজায়নের স্বপ্নের পাশে রয়েছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কালভকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও।