কলকাতায় এবার শহরের বুকজোড়া পাল্টে যাচ্ছে ভাষার চালচিত্র। সিটি অফ জয় এবার আরও গর্ব করে বলবে—এ শহর বাংলার, ভাষাও বাংলা। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (KMC)-এর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে জানানো হয়েছে, পৌরসভার সমস্ত সেশনে এখন থেকে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেওয়া বাধ্যতামূলক। শুধুই সেশনেই নয়, এই ভাষা নীতির প্রয়োগ হচ্ছে শহরের ব্যবসায়িক পরিসরেও। অর্থাৎ দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, অফিস—যেখানেই হোক না কেন, সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা লেখা থাকতেই হবে। ইংরেজি বা অন্য ভাষা থাকতেই পারে, কিন্তু বাংলা অনুপস্থিত হলে চলবে না।
এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য, বাংলা ভাষার মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এবং তা প্রতিদিনের ব্যবহারে নিশ্চিত করা। বহুদিন ধরেই শহরের নানা প্রান্তে ইংরেজি আধিপত্য লক্ষ করা গিয়েছিল—বিশেষ করে বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং, এবং নামফলকে। এবার সেখানে বাংলা ফিরিয়ে আনতে জোরকদমে উদ্যোগ নিয়েছে পৌরসভা। জানা গিয়েছে, ২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শহরের সমস্ত বাণিজ্যিক সাইনবোর্ডে বাংলা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পৌরসভার সেশনে কাউন্সিলরদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। কেউ যদি ইংরেজিতে প্রশ্ন তোলেন, তাঁকে বাংলা ভাষায় উত্তর দিতে হবে—এমনও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। ভাষার প্রতি এই আবেগপূর্ণ দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট: বাংলা ভাষার গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা।
এ প্রসঙ্গে পৌরসভার এক কর্তা বলেন, “এটা শুধু ভাষার প্রশ্ন নয়, এটি শহরের পরিচয় ও আত্মমর্যাদার বিষয়।” মেয়র ফিরহাদ হাকিমও আগে এই ইস্যুতে বারবার জোর দিয়েছেন, এবং এবার প্রশাসনিক স্তরেই তা কার্যকর করার কাজ শুরু হল। এই সিদ্ধান্ত শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই একে স্বাগত জানালেও, কেউ কেউ বলছেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা ঠিক রাখতে বাধ্যবাধকতার চেয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। তবে একমত সকলেই—শহরে বাংলা ভাষার দৃশ্যমানতা বাড়লে তার সাংস্কৃতিক প্রতিচ্ছবিও উজ্জ্বল হবে।
পাঠকের সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ):
প্রশ্ন: এই ভাষা নীতি কোথায় প্রয়োগ করা হচ্ছে?
উত্তর: KMC-র সেশন এবং শহরের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এই নিয়ম প্রযোজ্য।
প্রশ্ন: ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে কী উত্তর বাংলা ভাষায়ই দেওয়া হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, কাউন্সিলর বা আধিকারিকরা বাংলা ভাষায়ই উত্তর দেবেন।
প্রশ্ন: দোকান বা রেস্তোরাঁতে বাংলা সাইনবোর্ড কী বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, বাংলা লেখাই আবশ্যিক, সঙ্গে অন্য ভাষা থাকতে পারে।
প্রশ্ন: এই নীতির প্রয়োগের শেষ সময়সীমা কী?
উত্তর: ২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নিয়ম কার্যকর করতে হবে।
প্রশ্ন: ভাষা আদর্শ এই উদ্যোগ কি সাংস্কৃতিক ঐক্য তৈরির অংশ?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি ভাষার মর্যাদা ও ঐতিহ্য রক্ষার দিকেই এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।