কলকাতার বুকে এক ঐতিহাসিক সূচনা হয়েছিল ১৮০৬ সালে। উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সামরিক অভিযানের অর্থ জোগান। সেখান থেকেই যে প্রতিষ্ঠান আজ বিশ্বের সেরা ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে, তার নাম স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)। এই ব্যাঙ্কের যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল ২ জুন, ১৮০৬, ‘ব্যাঙ্ক অফ কলকাতা’ নামে। ১৮০৯ সালের ২ জানুয়ারি, এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল’। সেসময় ব্রিটিশ রাজত্বের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিল এটি। পরবর্তী সময়ে এই ব্যাঙ্ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে শাখা খুলতে শুরু করে—রেঙ্গুন (১৮৬১), পাটনা (১৮৬২), মির্জাপুর (১৮৬২) এবং বারাণসী (১৮৬২)-তে। এ ছাড়াও, ব্যাঙ্ক অফ ঢাকা-র সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কানপুরে সম্প্রসারণ ঘটায়।
শুধু প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, একসময় এই ব্যাঙ্কের গ্রাহক তালিকায় ছিলেন দেশের বহু বিশিষ্ট মানুষ। যেমন, দাদাভাই নওরোজি, জগদীশচন্দ্র বসু, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর মতো মনীষীরা। এই তিনটি প্রেসিডেন্সি ব্যাঙ্ক—ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল, ব্যাঙ্ক অফ বম্বে এবং ব্যাঙ্ক অফ মাদ্রাজ—১৯২১ সালের ২৭ জানুয়ারি একত্রিত হয়ে তৈরি করে ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এরপর দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের পর, ১৯৫৫ সালে এই ব্যাঙ্কটি জাতীয়করণ করা হয় এবং নাম দেওয়া হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)।
বর্তমানে, এসবিআই ভারতের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক হিসেবেই শুধু নয়, বিশ্বের প্রথম ৫০টি ব্যাঙ্কের মধ্যে নিজের স্থান করে নিয়েছে। শুধু নগদ লেনদেন নয়, গ্রাহক পরিষেবা, ডিজিটাল ব্যাংকিং, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক স্তরে SBI-এর কাজ প্রশংসনীয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আজকের দিনে শুধুমাত্র একটি ব্যাঙ্ক নয়, SBI একটি জাতীয় চেতনার নাম। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছনোর ক্ষমতা, সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং-এর আওতায় আনা, এবং সময়োপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার SBI-কে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs):
১. SBI-এর যাত্রা কবে থেকে শুরু হয়েছিল?
→ ১৮০৬ সালের ২ জুন, ‘ব্যাঙ্ক অফ কলকাতা’ নামে এর শুরু।
২. ব্যাঙ্ক অফ কলকাতা কীভাবে SBI-তে রূপান্তরিত হয়?
→ প্রথমে এটি ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল নামে পরিচিত হয়, পরে অন্যান্য প্রেসিডেন্সি ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিলে ১৯২১-এ ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্ক হয়। এরপর ১৯৫৫-তে জাতীয়করণ করে নাম রাখা হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
৩. বর্তমানে SBI-এর বিশ্বব্যাপী মান কেমন?
→ এটি বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ ব্যাঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
৪. SBI-এর শাখা প্রথম কোথায় কোথায় খোলা হয়েছিল?
→ রেঙ্গুন, পাটনা, মির্জাপুর এবং বারাণসীতে প্রথম শাখা খোলা হয়।
৫. এই ব্যাঙ্কের উল্লেখযোগ্য গ্রাহকদের মধ্যে কারা ছিলেন?
→ দাদাভাই নওরোজি, জগদীশচন্দ্র বসু, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ছিলেন এর গ্রাহক।