২০১১ -এ পরিচয় হয়েছিল ওম সাহানি ও মিমি দত্তের। রূপসী বাংলার ধারাবাহিক ‘আলোর বাসা’-এ কাজ করতে গিয়ে তাঁদের আলাপ। ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে দু’জনের মধ্যে কোনও যোগাযোগ ছিল না। ২০১৭ সালে ফের দেখা হয় দু’জনের। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। এরপর নতুন বছরে পরিবারের উপস্থিতিতে নিজেদের আইনি বিয়ে এরপর গতকাল ছিল সামাজিক বিয়ের পালা। বিয়ে হয় গোধূলি লগ্নে। লাল টুকটুকে বেনারসিতে সেজেছেন মিমি। গা ভর্তি সোনার গয়না অভিনেত্রীকে রাজরানি। ওদিকে টোপর মাথায় ছাতনাতলায় ওম হাসতে হাসতে হাজির।
গত কাল ছিল ওম মিমির বিয়ে। এই বিয়ে ছিল ঠিক যেন সিনেমার মতো। হ্যা রিল থেকে বেরিয়ে রিয়েলে এদের বিয়ে সম্পন্ন হল। আমরা প্রত্যেকেই ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ সিনেমাটি দেখেছি। রাজ্যের প্রথম মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিকের জীবনের উপর বানানো হয়েছিল এই সিনেমা । মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন ঋতাভরী চক্রবর্তী । সেই নন্দিনী ভৌমিকই নিজের হাতে বৈদিক নিয়মে বিয়ে দিলেন ওম-মিমির । সংস্কৃত বিশুদ্ধ মন্ত্রাচারণ, রবীন্দ্র সঙ্গীত গানের তালে, সুরের ছন্দে একসঙ্গে পথচলার শপথ নিলেন ওম মিমি। দুজনের শুভদৃষ্টি, সাতপাক থেকে মালাবদল সবই হল বৈদিক মতে। এই বিয়েতে ছিলনা কোনো কন্যা দান। সিদুঁর দান পর্বে ও ছিল এক নতুন চমক। ওম যেমন মিমিকে সিদুঁর পড়ালেন ঠিক একইভাবে মিমিও নিজের স্বামী ওমের মাথায় নিজের হাতে সিদুঁর পড়িয়ে দিলেন। এরা দুজনেই বিয়েতে ভাঙা চক থেকে বেরিয়ে এলেন।
টেলি জগতের জনপ্রিয় জুটি ওম-মিমির বিয়ে বলে কথা। এই তারকার বিয়ের আসর বসেছিল কলকাতার ক্লাব ভার্দে ভিস্তা-তে। আর এতে তারকাদের সমাবেশ থাকবেনা তা কি হয়। রাত যত বাড়ল, ততই টেলিভিশনের নামী দামী সেলিব্রেটিদের ভিড় বাড়লো বিয়ে বাড়িতে। বিয়ে শেষ হওয়ার পরে টলিউডের প্রথম সারির প্রযোজক ও পরিচালক জুটি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় উপস্থিত হলেন অনুষ্ঠানে। গতকাল শিবপ্রসাদ সেজেছিলেন কালো শার্ট ও সাদা-কালো চেক ব্লেজারে। আর কালো-লাল শাড়ি পরে ছিলেন নন্দিতা রায়। বিয়ে শেষে নতুন দম্পতিকে আশীর্বাদ করলেন একসঙ্গে। রচনা ব্যানার্জি হাজির হয়েছিলেন নব দম্পতিকে শুভ কামনা জানাতে।
এবার এই মিষ্টি দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, চুমকি চৌধুরী ও সুভদ্রা চক্রবর্তী। এছাড়া সকাল থেকেও মিমির কাছের দুই বান্ধবী সান্তয়নী গুহঠাকুরতা এবং দেবপর্ণা চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। সান্তয়নীর পরণে ছিল লাল শাড়ি ও নীল ব্লাউজ সাথে ম্যাচিং গহনাতে লাগছিল সুন্দরী সায়ন্তনী। আর দেবপর্ণা লাল বেনারসি ও লাল ব্লাউজে সেজেগুজে উপস্থিত হন। এছাড়া বিয়ের শেষে স্বামী স্ত্রী পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় আর মানালী দে। মানালির পরনে ছিল খয়েরি রঙের শাড়ি ও ব্লাউজ। স্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে একই রঙের একটি ব্লেজার ও নীল জিনস্ পরে এলেন পরিচালক অভিমন্যু। নব দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি গল্প-আড্ডা তো চললই। সঙ্গে চলল ঝলমলে সাজে একে-অপরের সঙ্গে সেলফি তোলার পর্ব।
বাঙালি বিয়ে বলে কথা। খাওয়া দাওয়া ম্যান্ডেটারি। তাই সব ডায়েট ভুলে বাঙালি হরেক রকমের খাওয়াদাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সকলে। এদের বিয়ের মেনুতে কি কি ছিল এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। র আনুষ্ঠানিক বিয়ে উপলক্ষে ওম মিমি অতিথিদের আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখেননি। এই বিয়েতে ছিল আমিষ-নিরামিষ হরেক রকমারি রান্না। বিয়ের শুরুতে সকলের হাতে হাতে চলে এল ক্রিসপি চিলি পনীর, ফিশ ওরলি, মালাই টিক্কা কাবাব, ফ্রুট পাঞ্চ, চিলি প্রন, ফিশ ব্যাটার ফ্রই। এরপর রাতের নৈশভোজে ছিল এলাহি আয়োজন। শুরুতেই ভেজিটেবল জয়পুরি, ডাল মাখানি, বাটার নান, মসালা কুলচা। এরপর মেন কোর্সে সাদা ভাত, পিস পোলাও গ্রিলড ফিশ ইন লেমন বাটার সস, মাটন রারার। বাঙালির বিয়েতে শেষ পাতে মিষ্টিমুখ হবে না তা কি হয় তাই তো শেষপাতে মিক্সড ফ্রুট চাটনির সঙ্গে রোস্টেড পাপড় আর চকোলেট মন্টে কার্লো ও বেকড রসগোল্লা। খাওয়া দাওয়া জমে ক্ষির।