Hoop PlusTollywood

Abhishek-Tapas: সদ্যই তিনিও স্বামীহারা, দেওর অভিষেকের মৃত্যুতে মুখ খুললেন তাপস পত্নী নন্দিনী

বুধবার মধ্যরাতে চলে গিয়েছেন অভিষেক চ্যাটার্জী (Abhishek Chatterjee)। ইন্ডাস্ট্রিতে হয়তো সেদিন শুটিং বন্ধ হয়নি। কিন্তু কষ্টটা চারিয়ে গিয়েছে অন্দরে। নন্দিনী পাল (Nandini Pal) কয়েক বছর আগে হারিয়েছেন স্বামী তাপস পাল (Tapas Pal)-কে। তাঁর জীবনে অভিষেকের হঠাৎই চলে যাওয়া একটি বড় আঘাত। গোটা ইন্ডাস্ট্রিতে ‘মিঠুদা’ নামে পরিচিত ছিলেন অভিষেক। কিন্তু নন্দিনী তাঁকে ডাকতেন ‘মিঠাই’ বলে। রক্তের সম্পর্ক ছিল না তাপসের সঙ্গে। কিন্তু তবু তাঁরা ছিলেন দুই ভাই।

‘পথভোলা’ ফিল্মের শুটিং চলছে এনটিওয়ান স্টুডিওতে। নন্দিনী তখন অন্তঃসত্ত্বা। তাপসের সঙ্গে সেদিন সেটে তিনিও উপস্থিত। আলাপ হল অভিষেকের সাথে। তখন তিনি বিয়ে করেননি। এরপর কখন যে নন্দিনী-তাপসের পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছিলেন অভিষেক, তা তাঁরা নিজেও বুঝতে পারেননি। নন্দিনী যখন কন্যা সোহিনী (Sohini Pal)-কে স্কুল থেকে আনতে যেতেন, কখনও কখনও জেদ করে অভিষেক তাঁর সঙ্গী হতেন। সোহিনীর ছুটির দেরি হলে দাঁড়িয়ে থাকতেন স্কুলের গেটের সামনে। কিন্তু তারপরেই গাড়িতে বসে নন্দিনীকে বলতেন গাড়ি ঘোরাতে, ইংরাজি গানের সিডি কিনতে যাবেন। মিঠাই-এর আবদার নন্দিনী কিনে দিতেন ইংরাজি গানের সিডি।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by KLiKK (@klikk.tv)

টলিউডের এক নামী প্রযোজকের মেয়ের বিয়েতে পাঁচতারা হোটেলে নিমন্ত্রণ ছিল নন্দিনীর। তাপস আউটডোর শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। নন্দিনী ও সোহিনী গিয়েছিলেন নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। হঠাৎই পিছন থেকে এসে নন্দিনীকে ধরলেন অভিষেক। বায়না, বাড়ি গিয়ে রান্না করে খাওয়াতে হবে। ওদিকে নন্দিনীর তখন একটু স্ন‍্যাক্স খাওয়ার ইচ্ছা। অভিষেক সটান বলে দিলেন, নন্দিনী কি বাড়িতে খেতে পান না! অতএব সেই রাতে বাড়ি ফিরে মিঠাই-এর জন্য কাতলা মাছের ঝোল রাঁধতে হয়েছিল নন্দিনীকে। আলু, ফুলকপি দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল ছিল অভিষেকের খুব প্রিয়। বেশি মশলাদার রান্না পছন্দ করতেন না।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Gallinews (@gallinews_com)

তাপসের সঙ্গে ছিল গাঢ় বন্ধুত্ব। ঘটনাচক্রে তাঁর শেষ ফিল্মে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তাপস ও অভিষেক। একবার একটি ফিল্মে ফাইট সিকোয়েন্স করতে গিয়ে মুখে কেটে গিয়েছিল অভিষেকের। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নন্দিনীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁর মুখে দাগ হয়ে যেতে পারে। আর কি তিনি অভিনয়ে ফিরতে পারবেন! তাঁকে ডাবের জল কিনে দিয়েছিলেন নন্দিনী। মুখে দাগ ছিল না।

অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এসে নন্দিনীর মনে হয়, অভিষেক ও তাপস দুজনেই ছিলেন আবেগপ্রবণ। অঙ্ক কষে ইন্ডাস্ট্রিতে চলতে শেখেননি তাঁরা। ফলে ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি বুঝতে পারেননি। কিন্তু, তবু নন্দিনীর চোখে তাঁরা জয়ী। কাজের জন্য কখনও কাউকে ম্যানিপুলেট করেননি তাঁরা। মিষ্টি কথায় কাউকে পিছন থেকে ছুরি মারেননি। কারচুপি করেননি। অভিষেক ও তাপস দুজনেই স্পষ্টবক্তা ছিলেন। যথেষ্ট প্রভাবশালী হলেও দুজনেই প্রভাব খাটাতে চাননি। ফলে রাজনীতি তাঁদের প্রতিভাকে গ্রাস করেছিল।

অভিষেক তবুও ফিরে আসতে পেরেছিলেন। শেষ দিন অবধি কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু তাপস আর ফেরেননি। অভিষেক চলে গেছেন। নেই তাপসও। অভিষেক চলে যাওয়ার পর থেকে তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেক শিল্পীই বলছেন অভিষেকের অভিমানের কথা, প্রতিভা থেকেও সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার কষ্টের কথা। এই কথাগুলি যদি আগে উচ্চারণ করতেন তাঁরা, তাহলে হয়তো আজ অভিষেক বেঁচে থাকতেন। কিসের ভয়? প্রতিভা তো সারস্বত। তাহলে প্রতিভাকে জিতিয়ে দিতে কি অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদ করা যায় না?

Related Articles