রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বকেয়া ঘিরে বিতর্ক আরও জটিল আকার নিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মেটানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নামছে একাধিক কর্মচারী সংগঠন। দাবি আদায়ের জন্য ইতিমধ্যেই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের কর্মচারীদের দাবি ছিল—২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার। সেই দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কর্মচারীরা।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকারকে ডিএ বকেয়ার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০,৪৪২.৭৩ কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও সেই টাকা এখনও মেটানো হয়নি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে কর্মচারী ফেডারেশনগুলি রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। অভিযোগ, রাজ্য সরকার ১৬ মে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশ অমান্য করেছে, যা সরাসরি বিচারব্যবস্থার অবমাননার শামিল। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাস্তাতেও নামতে চলেছেন সরকারি কর্মচারীরা। আগামী ২১ জুলাই শহিদ মিনারে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছে যৌথ কর্মচারী মঞ্চ। তাদের দাবি, দীর্ঘ অপেক্ষার পরও রাজ্য সরকার কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত নয়, বরং আদালতের কাছে ছয় মাসের সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছে। প্রশাসনের যুক্তি, একসঙ্গে এত বড় অঙ্কের অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব নয়, বিশেষত রাজ্যের সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে। এই ঘটনাপ্রবাহে আবারও সামনে এল দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পঞ্চম পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিএ বকেয়া বিতর্ক। একদিকে যেখানে কর্মচারীরা নিজেদের পাওনা বুঝে পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অন্যদিকে রাজ্য সরকার প্রশাসনিক ও আর্থিক অসুবিধার কথা বলছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন চাপানউতোর, যার সমাধান এখনও অনিশ্চিত।
প্রশ্নোত্তর (FAQ):
১. সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে কী নির্দেশ দিয়েছে?
সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তিন মাসের মধ্যে ডিএ বকেয়ার ২৫% অর্থাৎ ১০,৪৪২.৭৩ কোটি টাকা জমা দিতে বলেছে।
২. ডিএ বকেয়ার সময়সীমা কত?
ডিএ বকেয়ার সময়কাল ধরা হয়েছে ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
৩. কর্মচারীরা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তাঁরা মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং ২১ জুলাই শহিদ মিনারে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
৪. রাজ্য সরকারের যুক্তি কী?
সরকার জানিয়েছে, তারা আদালতের কাছে ছয় মাস সময় চেয়েছে এবং এখনও কোনও আদালত অবমাননা করেনি।
৫. এই বিরোধের কেন্দ্রে কোন কমিশনের সুপারিশ রয়েছে?
এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পঞ্চম বেতন কমিশনের মহার্ঘ ভাতার সুপারিশ।