দীর্ঘদিনের দাবি ও আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে আশার আলো দেখছেন পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী। কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরেই ডিএ-র (Dearness Allowance) ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাজ্য। এবার সেই বকেয়া ডিএ-র একাংশ শোধের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখের মধ্যে ২৫ শতাংশ ডিএ বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
কী জানাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ?
২০২৫ সালের ১৬ মে জারি হওয়া একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশে, সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের ডিএ বকেয়ার ২৫ শতাংশ আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্য সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ, জুন মাসের মধ্যেই সেই টাকা কর্মীদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছনো বাধ্যতামূলক।
টাকার অঙ্কে কতটা বোঝা পড়ছে সরকারের উপর?
রাজ্য সরকারের হিসেবে, বকেয়া ডিএ-র মোট পরিমাণ প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা। তার ২৫ শতাংশ অর্থাৎ, এই পর্যায়ে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকারও বেশি কর্মীদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই রাজ্য ইতিমধ্যে বাজার থেকে ৪,০০০ কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়েছে, যার মেয়াদ ২০ থেকে ২২ বছর এবং সুদের হার প্রায় ৭.১ শতাংশ।
তবু প্রশ্ন উঠছে সরকারি কর্মী সংগঠনগুলোর তরফে
রাজ্যের কর্মচারী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সরকারি রিজার্ভে ১.১৬৫ লক্ষ কোটি টাকা থাকলেও ঋণ নিয়ে দায় সারা হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, এই অর্থ সরকারি কোষাগার থেকেই দেওয়া যেত। ঋণ নিয়ে চাপ বাড়ানো হয়েছে ভবিষ্যতের উপর।
ডিএ-র ফারাক কোথায়?
বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান, যেখানে কেন্দ্রীয় কর্মীরা পান ৫৫ শতাংশ ডিএ। ফলে এখনও ৩৭ শতাংশ ডিএ-র ফারাক থেকে যাচ্ছে। আগামী আগস্ট ২০২৫-এ ফের শোনা হবে মামলার পরবর্তী পর্যায়, যেখানে বাকি ডিএ পরিশোধ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQs):
১. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কবে নাগাদ টাকা পাওয়া যাবে?
আগামী ৩০ জুন, ২০২৫-এর মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধ করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
২. রাজ্য সরকারের কাছে মোট কত টাকার ডিএ বকেয়া আছে?
সরকারি হিসেবে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকার ডিএ বকেয়া রয়েছে।
৩. রাজ্য বর্তমানে কত শতাংশ ডিএ দেয় কর্মচারীদের?
বর্তমানে রাজ্য সরকার ১৮% হারে ডিএ প্রদান করছে।
৪. কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ-র মধ্যে কত শতাংশ পার্থক্য রয়েছে?
বর্তমানে কেন্দ্রের থেকে রাজ্যের ডিএ ৩৭% কম।
৫. কর্মচারী সংগঠনগুলোর আপত্তি কী নিয়ে?
তাঁরা মনে করছেন রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থাকলেও সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ নিয়ে চাপ তৈরি করেছে এবং তা অনৈতিক।