Tourism: অন্ধকার আকাশে ঝলমল করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, যাবেন নাকি সবুজে ঘেরা নিরিবিলি গ্রামটিতে?
আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।
মেঘ পাহাড়ের প্রেমের গল্পের কবিতা পড়তে পড়তে মনটা যেন সেই মেঘ পাহাড়ের দেশে কোথাও ভেসে বেড়াচ্ছে। মনটা যখন এতটাই পাহাড়ে যেতে ইচ্ছা করছে তাহলে চলুন না সবাই মিলে কিংবা মনের মানুষটাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি মেঘ পাহাড়ের পথে? বুঝতে পারলেন না তো? যেখানে পাহাড়ের গায়ে সাদা সাদা মেঘ খেলে বেড়ায়, আজকে আমাদের অফবিট ডেস্টিনেশন এমন একটি স্বর্গীয় স্থান।
রাতের অন্ধকারেও ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আপনি এখান থেকে দেখতে পাবেন। দেখবেন, যাওয়ার আগে যেন ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না। এমন অসাধারণ স্বর্গীয় দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি না করলে সারা জীবনের জন্য অনেক কিছু মিস করে যাবেন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কোন রকমে নাকে, মুখে গুঁজে অফিসের উদ্দেশ্যে দৌড় দেওয়া, সারাদিন কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে মনে হয় যেন প্রাণটা এবার বেরিয়েই যাবে। এমন পরিস্থিতিতে মন যখন বলবে পালাই পালাই তখন দিঘা, পুরী, দার্জিলিং নয়, আজকে আমাদের ডেস্টিনেশন সিকিমের একটি ছোট্ট গ্রাম কেউজিং।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত অসাধারণ এই গ্রামটি। প্রায় ২০০ জনের বাস এই ছোট্ট গ্রামটিতে। স্থানীয় ভুটিয়া ভাষায় কিউসিং কথাটির অর্থ হল গমের ক্ষেতের জমি। তবে অনেকে এই গ্রামকে সুইজিং নামেও ডাকেন, যার অর্থ হলো চেষ্টনাট বনের জমি। প্রকৃতির মা যেন তার রং তুলি দিয়ে মনের ইচ্ছামতন সাজিয়েছেন এই ছোট্ট গ্রামকে। একবার বেড়াতে গেলে ভুলে যাবেন সব কিছু। একবার গেলে মন বলতে বারবার চলে যাই এই ছোট্ট গ্রামে।
চারিদিকে এতটা পরিবেশ দূষণের মাঝে দূষণমুক্ত এমন একটি গ্রাম যে পাওয়া যায় তা আপনার কাছে একটা লটারি টিকিট পাওয়ার মতন হবে। দূষণ প্রায় শূন্য, যেখানে বিশাল এলাকায় সবুজ সবুজ বনে আচ্ছাদিত এবং সিকিমের কিছু বিদেশী পাখির আবাসস্থল। গ্রামটি এলাচ ও চা বাগানে ঘেরা।কেউজিং-এর চারদিকে বৌদ্ধ মঠ। দক্ষিণ-পশ্চিমে তাশিডিং মঠ, পশ্চিমে মাংব্রু এবং পেমায়েংটশেন মঠ, দক্ষিণ-পূর্বে রালং এবং রাবাংলা মঠ।
দক্ষিণ সিকিম থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কেউজিং। এখানে গেলেই চোখে পড়বে সারি সারি হোমস্টে। এখানে তাদের নিজস্ব বিশেষত্বতার জন্যই পর্যটকদের কাছে প্রিয় জায়গায় পরিণত হয়েছে। গ্যাংটক থেকে পেলিং যাওয়ার পথে পড়বে রাবাংলা আর রাবাংলা থেকেই আপনি চট করে ঘুরে আসতে পারেন এই ছোট্ট গ্রামটিতে। তবে গ্রামটির অসাধারণ মনোরম দৃশ্যও আপনাকে বাধ্য করবে গ্রামটিতে কয়েকটা রাত কাটাতে।
রাতেই তো দেখতে পাবেন সেই অসাধারণ দৃশ্য। নীচে ঝলমলে শহর আর উপরের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। সকালবেলা লেপের ভেতর থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই জানলা দিয়ে ঢুকে আসবে সাদা ধবধবে মেঘ। রাবাংলায় গেলে শহুরে ব্যস্ততা চোখে পড়বে। কিন্তু তার থেকে একটু দূরে এই ছোট্ট গ্রাম কিন্তু একেবারে নিস্তব্ধ।
সুন্দর সবুজ গ্রামটিতে থাকতে থাকতে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের কিছু গন্তব্যস্থলে যেমন টেমিটি গার্ডেন, নামচি চারধাম, রালোং মনাস্ট্রি, বন মনাস্ট্রি। তবে যারা পর্যটক যান তাদের মধ্যে অনেকেই ট্র্যাকিং করতে ভালোবাসেন। যারা ট্রেক করতে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই মৈনাম ট্রেকে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা একটুখানি বাড়িয়ে নিতে পারেন। আর হাতে একটু সময় থাকলে অবশ্যই ঘুরে আসুন কাছের অসাধারণ আরেকটি সুন্দর গ্রাম হল বোরং।
কিভাবে যাবেন –জায়গাটার বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে তো, এক্ষুনি ব্যাগটা গুছিয়ে সকলে মিলে চলে যাই কিংবা নতুন বিয়ের পরে হানিমুন স্পট হিসাবে বাছতেই পারেন অসাধারণ এই জায়গাটি। কিন্তু সকলকে নিয়ে যাবেন কি করে জেনে নিন তার এক ঝলক। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে চার ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। এই জায়গাটিতে যেতে গাড়ি ভাড়া করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন, এই অসাধারণ গ্রামটিতে। গাড়ি ভাড়া করলে মোটামুটি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিতে পারে।
থাকার জায়গা – এখানে থাকার জন্য আছে বেশ কিছু হোমস্টে। হোমস্টেতে থাকার অভিজ্ঞতা একেবারে যে অসাধারণ হবে তা বলাই বাহুল্য। হোমস্টে গুলো থেকে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা নয়, মাউন্ট নরসিংহ কেও আপনি দেখতে পাবেন পরিষ্কার ঝকঝকে।