অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অসাধারণ সুন্দরী হাঁস, জানুন এর পরিচয়
প্রজননের সময় স্ত্রীকে কাছে ডাকার জন্য নাচ দেখায় রংবেরঙের মান্দারিন হাঁস, সংকটে প্রজাতিটি
মান্দারিন হাঁস বা সুন্দরী হাঁস আনাটিডি পরিবারের অন্তর্গত। মান্দারিন হাঁস এর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ টোপড় পড়া ডুবুরি। সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে গত কয়েক দশকে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছে। বাংলাদেশে এরা পরিযায়ী পাখি হিসাবেই আসে। তবে ইউরোপ-এশিয়ার বিস্তৃত জায়গায় দেখা যায়। চীন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান আর রাশিয়ার এরা আবাসিক। যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ডে মান্দারিন হাঁস পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, হংকং প্রভৃতি জায়গায় এরা পরিযায়ী হিসাবে আসে অর্থাৎ অতিথি পাখি।
বর্তমানে এই প্রজাতিটি সংকটে রয়েছে। বিগত কয়েক শতাব্দীতে রাশিয়া এবং চীনের ব্যাপকভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করার ফলে এই হাঁসের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে করতে শুরু করে। তবে তারপরে বিভিন্ন বনভূমি থেকে এগুলিকে নেওয়া হয় এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় বাড়িতে বাড়িতে এই হাঁস পোষা শুরু হয়। যাতে কোনোভাবে এর সংখ্যা একটু বাড়ানো যায়। এই সবকিছুর ফলে ইউরোপে এদের সংখ্যা খানিকটা বাড়লেও এশিয়াতে এদের সংখ্যা এখনো আশঙ্কাজনক। সমগ্র এশিয়াতে মাত্র ২০ হাজার এই হাঁস দেখা যায়। আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের মাংসের বিদঘুটে স্বাদই এদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে খেতে যতই খারাপ হোক গুলিকে দেখতে কিন্তু চমৎকার।
পুরুষ মান্দারিন হাঁস দেখতে অসাধারণ হয় সারা শরীর জুড়ে নানান রঙের পালকের ছড়াছড়ি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষের ডানা কমলা হয়ে যায়, ডানায় নৌকার পালের মত দুটি খাড়া পালক থাকে। মাথা গোল, মাথার চাঁদি বাদামী, চাঁদের সামনের দিকটা নীলচে-সবুজ। স্ত্রী মান্দারিন এর আবার এত রঙের বাহার নেই সে বেশ সাদামাটা সহজ-সরল। দেহের নিচের দিকটা সাদা। এই চোখে সাদা চশমা থাকে চক্ষু রেখা সাদা ঠোঁট হলদেটে। এই হাঁসের ডিমে কোন স্বাদ নেই, স্ত্রী হাঁসের মাংস বেশি স্বাদ নেই। পুরুষ হাঁসের মাংসের স্বাদ আছে, কিন্তু তা মোটেই পাতিহাঁসের মত নয়। এরা সাধারণত ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এরা ভালো সাঁতারু হয়, দ্রুত উড়তেও পারে। ফলে তবে ভালো করে ডুব দিতে পারেনা। দিনের অন্য সময় তারা বিশ্রাম করে, উষা আর গোধূলিতেই এরা বেশি কর্মদক্ষ হয়ে ওঠে। এরা সাধারণত জলজ উদ্ভিদ শস্যদানা, ছোট মাছ, শামুকের জলজ পোকা-মাকড় ইত্যাদি খায়। হাঁসের প্রজনন ঋতু এদের ডাকাডাকি বেড়ে যায়, পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য এক ধরনের নাচ প্রদর্শন করে। পুরুষ ঘাড় লম্বা করে মাথা উপর নিচ করতে থাকে এক মৃদু শব্দ হতে থাকে, যা অনেকটা ঢেঁকুর তোলার মতো। এরা সাধারণত ঘন বনের মধ্যে জলাশয় এর কাছাকাছি কোন গর্ত গাছের কোটরে বা কোন গুহায় লতাপাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে। প্রতিটি মান্দারিন হাঁস জলের বন্ধন বেশ শক্ত থাকায় চীনা সংস্কৃতিতে এরা ভালোবাসা আর পারস্পরিক সম্প্রীতির প্রতীক।