“বাংলাকে আমি খুব ভালোবাসি। বাংলার মানুষও আমায় খুব ভালোবাসে”- লতাজি বলে গিয়েছেন।লতাজির চলে যাওয়াটা সংগীতপ্রেমীদের মনে একটা কালো ছায়ার মতো। গতকালই সুরেশ্বরীর অস্থি বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। অবিশ্বাস্য বিষয়! বাংলার এক ব্যক্তিও মাতৃজ্ঞানে নিজের সমস্ত ধর্মীয় নীতি অনুসারে লতাজির শ্রদ্ধানুষ্ঠান পালন করছেন। বাংলার যে তিনি কতটা নিজের বোঝাই যাচ্ছে।
হাওড়া জগতবল্লভপুরের মাজুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর অমর বিলুই। মায়ের মত ভালোবাসতেন সুরের রাণীকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে মস্তক মুন্ডন করে পরম শ্রদ্ধা ভরে মা লতার পারলৌকিক ক্রিয়া করেছেন। গতকাল ঘাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি হব্যিষী খাবারও খেয়েছেন। আজ শ্রদ্ধানুষ্ঠান পালন করবেন। অমর বিলুই এও জানিয়েছেন, তিনি সবশেষে শনিবার নিয়মভঙ্গ অনুষ্ঠানও করবেন নিজেরই বাড়িতে প্যান্ডেল করে। সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
পারিবারিকসূত্রে জানা গিয়েছে, অমরবাবুর মা মারা গিয়েছেন কিছু বছর আগেই। জগৎবল্লভপুরের মাজু গ্রামে একটি ছোট্ট টেলারিং শপের মালিক। তিনি বলেন, যে মা জন্ম দিয়েছেন তাঁর জন্যও সমান ভাবে শ্রদ্ধানুষ্ঠান পালন করেছিলেন তিনি। আর এই সুর সম্রাজ্ঞী মাও তাঁর অনেক নিজের। সেই কারণেই এইভাবে সমস্ত রীতিরেওয়াজ মেনে এমনতর অনুষ্ঠান করছেন। ওই মাজুরই বাসিন্দা অমর সিংহ জানিয়েছেন, দোকানে নিজের বসার জায়গার ঠিক মাথার উপরে অমর বাবু সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের একটি ছবি লাগিয়ে রেখেছেন। প্রায়শই তাঁর দোকান থেকে ভেসে আসে লতা মঙ্গেশকরের গান।
বলা বাহুল্য, একটু গান পাগল মানুষ অমর বিলুই। ছোটবেলা থেকেই লতাজির আওয়াজকে শ্রদ্ধা সহকারে ভালোবেসে এসেছেন। বড় হয়ে দর্জির দোকান খোলার পর লতাজির সুর ও ছবিই প্রথম স্থান পায় সেখানে। স্বর্গীয় লতাজির উদ্দেশ্যে করা শ্রদ্ধানুষ্ঠানেও অনবরত বাজিয়ে চলেছেন লতাজির গান। আসলে ভালো গান তো মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাঁটি গেড়ে বসে। আর লতাজির অতুলনীয় সুর প্রত্যেকটি সংগীতপ্রেমীর রন্ধ্রেই স্থান করে নিয়েছেন। সেখান থেকেই তাঁর প্রতি এই মাতৃভক্তি। মা-এর মতোই একান্ত আপন হয়ে উঠেছেন আপামর মানুষের কাছে।