মা দুর্গার হাতের দশটি অস্ত্রের মাহাত্ম্য কি? উত্তর রইল অজানা রহস্যের
আজ মহালয়া আর কয়েকদিন পরেই সন্তান সন্ততি কে নিয়ে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসছেন মা। মা দূর্গার দশ হাতের দশটি অস্ত্র। কিন্তু এই দশটি অস্ত্রের মাহাত্ম্য কি! চলুন জেনে নেওয়া যাক:-
ত্রিশূল-»
ত্রিশূল হলো মা দূর্গার প্রধান অস্ত্র। পুরাণ অনুযায়ী, মা দূর্গা যখন মহিষাসুরবধ করেছিলেন সেই সময় সমস্ত দেবতারা দেবীকে একটি একটি করে অস্ত্র দিয়েছিলেন। তার মধ্যে মহান অস্ত্র হল ত্রিশূল। এই অস্ত্র দান করেছিলেন মহাদেব। এই অস্ত্র দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেন দেবী দুর্গা। ত্রিশূল তিনটি গুণের প্রতীক।
সতঃ, এই গুণটি হল দেব গুণ। এই গুণ একমাত্র দেবতাদের মধ্যে থাকা সম্ভব।
রজঃ, এই গুণটি হল মানুষের গুণ। জীবকুলের মায়া বলতে এই গুণকে বোঝায়।
তমঃ, এই গুণটি হল রাক্ষসের শক্তির প্রকাশ।
ত্রিশূল যার স্পর্শে এই তিনটি গুণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
শঙ্খ-»
বরুণদেব মা দুর্গাকে এই শঙ্খ দিয়েছিলেন। শঙ্খ হল জাগরণের প্রতীক। তাইতো যে কোনো যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে শত্রুপক্ষকে সতর্ক করার জন্য শঙ্খ বাজানো হয়। এ তো গেল পৌরাণিক কাহিনী। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বলা হয় পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু হয়েছিল জলের মধ্যে। জলের মধ্যে প্রথম প্রাণের স্পন্দন পাওয়া গিয়েছিল অ্যামিবা নামে এক এককোষী প্রাণীর মধ্যে দিয়ে। শঙ্খ এক ধরনের জলজ প্রাণী। তাই ধরে নেওয়া হয়, শঙ্খের মধ্যেই প্রথম প্রাণের স্পন্দন দেখা যায়।
চক্র-»
সুদর্শন চক্র হল এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রতীক। হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত সুদর্শন চক্রের গতিময়তার সঙ্গে নাসার বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কিত যে সমস্ত তথ্য তার সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া যায়। শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দূর্গা হলেন এই ব্রহ্মাণ্ড প্রসবিনী।
খড়্গ-»
হাতে থাকা খড়্গ দিয়ে দেবী অসুরের মাথা ছিন্নভিন্ন করে সেই মাথা গুলিকে মুণ্ডমালা ধারণ করেছিলেন নিজের কন্ঠে। দেবীর হাতে থাকা এই খড়্গ হল মোক্ষ লাভের প্রতীক। এই মোক্ষই একমাত্র মানুষকে মুক্তি লাভের পথ দেখাতে পারে।
গদা-»
গদা বা কাল দণ্ডকে দেবী দূর্গার হাতে দেখা যায়। এটি হলো আনুগত্যের প্রতীক।
ধনুর্বাণ-»
দেবী দূর্গাকে ধনুর্বাণ দিয়েছিলেন পবনদেব। জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ করতে সঠিক পথ নির্বাচন করতে হয়। একমাত্র সঠিক পথ নির্বাচন করলেই জীবনের সমস্ত পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। আর এই কাল্পনিক তীর-ধনুকই হল সেই জীবনের লক্ষ্যভেদ এর একমাত্র অস্ত্র যা দেবী দূর্গার হাতে থাকে।
ঘন্টা-»
দেবী যখন মহিষাসুরকে যুদ্ধে আহবান করেছিলেন তখন সেইখানে সতর্কবার্তা স্বরূপ দিয়ে অট্ট হাসি এবং আশপাশ থেকে শঙ্খধ্বনি ও ঘন্টা বেজে উঠেছিল। নির্দেশ দিয়েছিল এইবার যুদ্ধ শুরু হবে।
নাগপাশ-»
এই অস্ত্রটি বরুন দেব দেবীকে দান করেছিলেন। তবে এ নিয়ে আবার মতানৈক্য আছে। অনেকে বলেন, অনন্তনাগ এটি দান করেন। দেবী তার হাতে নাগপাশে আবদ্ধ করে অসুরকে ধরেন এবং অসুরের উরুতে নিজের বাঁ পা রেখে সেই অসুরকে বধ করেন।
বজ্র-»
এই অস্ত্রটি দেবীকে দান করেছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। এটি কঠোর এবং সংহতির প্রতীক। জীবনে চলার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই চরিত্রের মধ্যে কঠোরতা প্রয়োজন। তাই স্বয়ং দূর্গাই এই অস্ত্রকে ধারণ করেছে।
পদ্ম, কমণ্ডলু, অক্ষমালা-»
দেবী দূর্গাকে এই তিনটি দান করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। পদ্ম পাঁকে জন্মগ্রহণ করেও সে পবিত্র। অন্ধকারের মধ্যেও তার মধ্যে রয়েছে একটা আলোয় উত্তরণের পথ। শুধুমাত্র অক্ষমালা, কমণ্ডলু দুটোই পবিত্রতার প্রতীক।