ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এক লক্ষ শিশুর মুখে তুলে দিচ্ছেন খাবার, স্যালুট সাহসী কন্যা
আঁচল ছোটবেলা থেকেই নানান রকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শিকার হয়েছেন
লড়াই করেছেন ক্যান্সারের সঙ্গে। আজ খাবার তুলে দিচ্ছেন এক লক্ষ বস্তির বাচ্চার মুখে। তিনি নিজে একজন অটো ড্রাইভার এর কন্যা। এই কন্যার নাম আঁচল শর্মা। বস্তির বাচ্চাদের কাছে তিনি দিদি নামে পরিচিত। এই দিদি তাদের কাছে একেবারে সুপার হিরো। খেতে না পেয়ে ঘরোয়া অত্যাচারের শিকার হন অনেক ছোট ছোট মেয়েরা। আঁচল ছোটবেলা থেকেই নানান রকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শিকার হয়েছেন। তবে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ২০১৭ থেকে যখন তার তৃতীয় পর্যায়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু সমস্ত রকম বাধা-বিপত্তিকে কাটিয়ে উঠে সে এখন প্রতিদিন ১০০থেকে ২০০ বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।
আঁচল একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যেখানে সংসারে রয়েছে পাঁচজন সদস্য। বাবা ছিলেন পেশায় অটো ড্রাইভার। আঁচল জানায়, তার বাবা প্রায়শই মদ্যপান করে মাকে মারতেন। তিনজন বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মাকে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে হতো। সময় এর বেশি কাজ করতে সে কখনও দ্বিধাবোধ করেননি। কিন্তু হঠাৎ করেই সে তার চাকরিটা হারিয়ে ফেলেন। অর্ধেক দিন তাদের খাওয়াই জুটত না। যেদিন খাওয়ার জুটত সেদিন খাদ্যতালিকায় ছিল চাপাটি আর লঙ্কাগুঁড়ো।
ছোট বোন বিয়ে করতে চেয়েছিল। আঁচল তাকে সাহায্য করেছিল পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে। ছোট বোন যাকে বিয়ে করেছিলেন তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু পাঁচ মাস যেতে না যেতেই ছোট বোন কে তার বর মেরে ফেলে। আঁচল সুবিচার চেয়েছিলেন। তার জন্য তাকে অনেক রকম বাধা-বিপত্তি হুমকি ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। একদিকে মা অসুস্থ, অন্যদিকে বাবা একজন টিবি রোগী, এসবের মধ্যে দিয়ে তার জীবন চলতে থাকে।
তারপরে আসে সেই ভয়ঙ্কর সময়, যখন তিনি জানতে পারেন তিনি স্তন ক্যান্সারের তৃতীয় পর্যায়ে আছেন। চিকিৎসা চলাকালীন তিনি যখন একটি ট্রাফিক সিগনাল এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন কয়েকজন বস্তির বাচ্চা তার কাছ থেকে টাকা চায় কিন্তু আঁচল তাদেরকে টাকা দেননি। বরঞ্চ তাদেরকে নিয়ে গিয়ে খাবার খাওয়ান। রংপুরি বস্তির বাচ্চাদের জন্য তিনি প্রথমে পাঁচ, ছটি খাবারের বাক্স তৈরি করে তিনি বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করতেন। এখন আঁচল দিনে ৫০০০ বাচ্চাকে রোজ খাওয়াতে পারেন। তবে আরেকটি সুখবর হলো চার বছর টানা চিকিৎসায় থাকার পর আঁচল ক্যান্সার থেকে একেবারে মুক্তি পেয়েছেন। আসলে সব কিছুই বোধ হয় ঈশ্বরের কৃপায়। এত সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্যই আজ ঈশ্বর তার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। তাকে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত করে দিয়েছে। কারণ আমাদের সমাজে তার মতন মানুষের বড় প্রয়োজন। তাই তাকে অনেকদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকতে হবে। এমন কন্যাকে সত্যিই স্যালুট জানাতে হয়।