কঠিন পরিশ্রমের ফল, সিকিউরিটি গার্ডের ছেলে আজ IRS অফিসার

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সূর্যকান্ত লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করে আসছেন। তার চার সন্তান সন্দীপ, প্রদীপ, স্বাতী এবং কুলদীপ, এবং স্ত্রী মঞ্জু দেবীকে নিয়ে সংসার। বাবা, মা হিসেবে তারা দুজনেই মনে করতেন তাদের দারিদ্রতা দূর করার জন্য তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত হওয়া ভীষণ প্রয়োজন। তারা তাদের ছেলে মেয়েকে কখনো বিদ্যালয় যেতে, কিংবা পড়াশোনা করতে অনুৎসাহিত করতেন না।

এত কষ্ট করার পরেও যখন সেই সুন্দর একটি দিন এলো যেদিন তার চতুর্থ সন্তান কুলদীপ ভারতের একটি অন্যতম পরীক্ষা ইউ.পি.এস. সি-তে সফল হলেন। গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে তার র‍্যাংক হয়েছিল ২৪২। গ্রাজুয়েশনের পর এই তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তিনি নিউ দিল্লির মুখার্জি নগরে একটি ১০/১০ স্কয়ার ফিট ভাড়া বাড়িতে উঠে আসেন। এখানেই চলতে থাকে তার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার পড়াশোনা। তবে অর্থনৈতিক অসুবিধার জন্যও তিনি এই পরীক্ষার কোচিং ক্লাস গুলি কোনো ভাবেই নিতে পারতেন না। বাবার সারা মাসিক রোজগার ৬,০০০ টাকা। কুলদীপকে পড়াশোনা বাবদ বাড়ি ভাড়া নিয়ে ২,৫০০ টাকার বেশি তিনি পাঠাতে পারতেন না। পড়াশোনা করার জন্য কুলদীপ এর কাছে কোন ল্যাপটপ ছিলনা। মাঝে মাঝে বই বন্ধুদের থেকে ধার করে তিনি পড়াশোনা করেছেন।

শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে তার রুমমেট এর সঙ্গে একত্রিত হয়ে দু’বছর ধরে জমানো টাকা থেকে একটি ল্যাপটপ কিনেছিলেন। প্রথম বার পরীক্ষা দিয়ে তিনি ও সফল হয়েছিলেন। তারপরে সাংঘাতিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েন। তিন দিন পরে হয়তো বাড়িতে একবার ফোন করতেন। এর ফলে বাড়িতে তার বাবা-মা যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে পড়েন। মাঝে মাঝে ফোন করে বলতেন ‘আমি হয়তো আর পাবো না’। কিন্তু তার বাবা তাকে সাহস যুগিয়ে গেছেন। তার ভাই-বোনেরাও তাকে সমানে উৎসাহিত করে গেছেন। দ্বিতীয় বারের বার তিনি সফলতা অর্জন করেন। কুলদীপ তার চাকরি পাওয়ার পরে যখন তার বাবা সূর্যকান্ত কে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি কুলদীপ এর চাকরি পাওয়ার পর তার চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কেন তিনি চাকরি ছাড়বেন? যে চাকরি একসময় তাকে খাবার দিয়েছে, তার সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করার রসদ যুগিয়েছে সে চাকরি কখনো ছাড়া যায়!”