সাদা কালো পর্দার স্নেহময়ী জননী কিংবা লক্ষ্মীমন্ত বউ কে, এমন প্রশ্ন যদি করা হয়, উত্তর কী আসবে? সেইসময় অনেকেই ছিলেন এবং এখনও আছেন যারা সাদা কালো পর্দার সুপার হিট অভিনেত্রী। তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা আলাদা খিদে, আলাদা লড়াই ছিল। প্রত্যেক অভিনেত্রীকে আলাদা করা যেত তাদের স্বতন্ত্র অভিনয় দেখে। এখন এর চিত্র কিছুটা হলেও বদল হয়েছে। আশির বা নব্বইয়ের দশকের অভিনেত্রীদের দিকে তাকালে আজও মনে হয় এরা জীবন্ত, এরা সত্যি গল্প বলতে এসেছে। যে মায়ের পাঠ করে তাকে দেখলে যেন মনে হয় আহা মা বটে, আবার যে স্ত্রীর পাঠ করেন, তখন মনে হয় এমনটাই তো হওয়া উচিত। এই কথা গুলো লেখার মানে এই নয় যে এখনকার অভিনেত্রীদের মধ্যে সেই স্বতন্ত্র ব্যাপার নেই। এখন সবাই সমান, আর সেইজন্যেই হয়তো সবটা মিলে মিশে গেছে। আমাদের আজকের অভিনেত্রী প্রসঙ্গ হল সন্ধ্যা রায়। আজ তিনি ৮০ তে পা রাখলেন।
পর্দায় কখনো তিনি ছিলেন স্নেহময়ী জননী তো কখনো আদর্শ পতিব্রতা স্ত্রী। সাবলীল অভিনয় দর্শকদের মন বিগলিত করত। তাছাড়াও অমন লক্ষ্মীমন্ত মুখ, ঘরোয়া গরণ আরো দর্শকদের কাছে আসতে বাধ্য করতো।
জীবনে একটা সময় কঠিন লড়াই করেছিলেন তিনি। সেই লড়াই শুরু একদম শৈশব থেকে। তিনি ৭ বছর বয়সে তার বাবাকে এবং ৯ বছর বয়সে তার মাকে হারান। তার একজন ভাই আছে। তার মা-বাবা মৃত্যুর পর তিনি তার মামার কাছে চলে যান এবং স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে, তিনি আবার ভারতে ফিরেন। তখনকার দিনে মেয়েদের অভিনয় করাকে সমাজ ভালো চোখে দেখত না, কিন্তু নিজের লড়াই নিজেই চালিয়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। চলচ্চিত্র জগতে আসবেন ঠিক করেই প্রথম হাতেখড়ি দেন “মামলার ফল” দিয়ে, যেখানে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন। তার জীবনের সেরা হিট ছবি ছিল বাবা তারকনাথ, অশনী সংকেত, মা আমার মা, ঠগিনি, খনা এবং আরও অন্যান্য। নায়িকার চরিত্রে না থাকলেও তিনি যেই চরিত্রে থাকতেন তাতে করে সমস্ত আকর্ষণ তার দিকেই মুখিয়ে থাকতো। অবশ্য অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানেও তিনি যথেষ্ট পরিচিত। তিনি সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ২০১৪-র সাধারণ নির্বাচনে ১৬ তম লোকসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হন।
একটা সময় চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের বহু ছবিতে মুখ্য চরিত্রে দেখা গেছে সন্ধ্যা রায়কে। পরবর্তীতে তরুণ – সন্ধ্যা দুজনে বিয়ে করেন। কিন্তু, এরপরেও তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, যেদিন তাপস পাল মারা গেলেন সেদিন সন্ধ্যা রায় সন্তান হারা শোক অনুভব করেছিলেন। দাদার কীর্তি থেকেই তাপস পালকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি।
প্রবীণ অভিনেত্রীদের মধ্যে এখনও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন সাবিত্রী, সন্ধ্যা, মাধবীরা এখনও আছেন, যাদের অভিনয়ে আজও সকলে মুগ্ধ।