Aindrila Sharma: ‘মনে হচ্ছে আমি বেঁচে আছি তো?’ ঐন্দ্রিলার কষ্টে কেঁদে ফেললেন স্বয়ং রচনা
‘লড়াকু’, ‘সাহসী’, ‘দৃঢ়’, ‘অনমনীয়’! অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার প্রশংসায় এই শব্দবন্ধগুলির ব্যবহার করতে দেখা গেল রচনা বন্দোপাধ্যায়কে। দিদি নং ১-এর মঞ্চে ঐন্দ্রিলার এই লড়াই করার অদম্য ক্ষমতাকে কুর্নিশ জানালেন দিদি।
গতকাল দিদি নং ১-এর মঞ্চে আবার স্বমহিমায় ফিরে এলেন তিনি। আবার গেয়ে উঠলেন তার চেনা ছন্দে। এই ক্যামেরার সামনেটাই তো তার জীবন। ক্যামেরার ওদিকটায় লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ অতীত। দিদি নং ১-এর মঞ্চে সেই অন্ধকার ভয়াবহ রাতগুলোর কথাই মনে করেন তিনি। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,” কি যে কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। ক্লাস ইলেভেনে একবার বোন ম্যারো ক্যান্সার ধরা পড়ে। তারপর অনেক চিকিৎসা করার পর পরের ছয় বছর সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। জমিয়ে অভিনয় করছিলাম। গত বছরের মার্চ মাসে হঠাৎ করে একদিন আমার ডান দিকের কাঁধে অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম কোন কারণে হয়তো ব্যথা হচ্ছে বা হয়তো মাসেল পুল হয়েছে। আমার মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র ক্যান্সারেল ভাবনা আসেনি তখন।কারণ আমি তো নিয়মিত চেকআপ এই ছিলাম।
আমরা সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে রওনা দিই। সেখানেই ধরা পড়ে আমার ক্যান্সার। যেহেতু আমার কাছে ক্যান্সারের যন্ত্রনা অনেক আগে থেকেই পরিচিত আমি জানি যে একটা মানুষকে কতটা যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাই আবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া আমার পক্ষে মেনে নেওয়া ভয়াবহভাবে কঠিন ছিল। অপারেশনের পর বেঁচে থাকারই সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু তোমার লাইফে সমস্ত ডিসিশন তোমাকেই নিতে হবে। আমি এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে অপারেশনের জন্য রাজি হয়ে যাই।” ভাঙ্গা গলায় বলতে থাকেন অভিনেত্রী চোখে তাঁর অঝোর অশ্রুধারা।
এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শুনতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন স্বয়ং রচনাও। ক্যামেরার আড়ালে তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়।
আবার বলতে থাকেন ঐন্দ্রিলা, “সেই সময়টা আমি অনেক দিদি নাম্বার ওয়ানের এপিসোড দেখতাম। একদিন দেখলাম একটা মেয়ের অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে দুটো পা বাদ চলে গেছে। অথচ মেয়েটি কি অসম্ভব অনমনীয়! এগুলোই আমায় দিনের শেষে অনুপ্রেরণা দিত। আমি আমার মনকে শক্ত করে বোঝাতাম আমি একা যে কষ্ট পাচ্ছি তা নয়, দিনের শেষে আমার থেকেও হাজার হাজার মানুষ কষ্টে আছে। অপারেশন হয়, অপারেশনের পর যখন চোখ খুলি তখন আমার চারিদিকে আলো। আমি তখন শুধু ভাবছি আমি বেঁচে আছি তো?”
রচনা সব্যসাচী প্রসঙ্গেও তাঁকে প্রশ্ন করেন। রচনা বলেন, “ঐন্দ্রিলার মা-বাবা ছাড়াও আরও একটি মানুষ ঐন্দ্রিলার পাশে ছিল”
ঐন্দ্রিলা অকপটে তা মেনে নেন। তিনি বলেন,” দিল্লিতে আমার যখন দ্বিতীয়দিনের কেমো চলছে আমি হঠাৎ করে চোখ খুলে দেখি আমার সামনে সব্যসাচী দাঁড়িয়ে। ওর মুখ দেখতে আমার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করতে লাগলো। ও যা করেছে আমার জন্য তা আমি ভাষায় প্রকাশ করে বলে বোঝাতে পারবো না। পুরো ট্রিটমেন্ট জুড়ে আমার শারীরিক কষ্ট ছিল ভয়ানক কিন্তু মানসিক কষ্ট একবিন্দুও ছিল না। তার একমাত্র কারণ সব্যসাচী।”
দীর্ঘ রোগভোগের পর ক্যামেরার সামনে প্রথমবার এলেন তিনি। এবার ধীরে ধীরে শরীরকে সুস্থ রেখে কাজের জগতে ফিরে যেতে চান ঐন্দ্রিলা।