বয়স ধরে রাখতে প্রতিদিন মেনে চলুন কিছু টিপস
৪০ বছরেও একেবারে কুড়ি বছরের মতন ত্বক পেতে প্রতিদিন মেনে চলুন এই নিয়মগুলি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বক ঝুলে যাওয়া, ত্বকে বলিরেখা, পিগমেন্টেশন ইত্যাদি দেখা যায়। ত্বকের ট্রিটমেন্ট করাতে কতইনা টাকা আমরা পার্লারে গিয়ে দিয়ে থাকি। কিন্তু এতে শুধু পকেটটাই খালি হয়, আর সাময়িকভাবে উপকার পাওয়া গেলেও পরে ত্বকের আরো ক্ষতি হয়। তাই ঘরোয়া কিছু উপাদান ব্যবহার করলেই আপনি এই সমস্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
১) সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি করার জন্য বেছে নিন ঘরোয়া উপাদান কে। ক্লিনজিং এর ক্ষেত্রে যদি তৈলাক্ত ত্বক হয় তাহলে এক চামচ মুলতানি মাটি, এক চামচ বেসন, এক চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিয়ে মুখে মেখে কিছুক্ষণ পরে মুখ ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। আর যদি শুষ্ক ত্বক হয় তাহলে এক চামচ কাঁচা দুধ এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে গোটা মুখে ভালো করে মেখে কিছুক্ষণ পরে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
টোনিং এর ক্ষেত্রে উভয় ত্বকের জন্যই ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, তৈলাক্ত ত্বক যাদের তারা এক চামচ গোলাপ জল, এক চামচ মসুর ডাল বাটা, এক চামচ কাঁচা দুধ ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে গোটা মুখে ভালো করে মেখে নিন। তারপর ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বক যাদের তারা এক চামচ গ্লিসারিন, এক চামচ নারকেল তেল, একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে গোটা মুখে মেখে ফেলুন। কিছুক্ষণ পরে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
২) সকালে উঠে শুধু ত্বকের উপর থেকে চর্চা করলেই হবেনা ভেতর থেকেও ত্বক যাতে ভালো থাকে তার জন্য ঘুম থেকে উঠেই কমপক্ষে ৪ গ্লাস জল খেতে হবে। সারা দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ লিটার জল পান করতে হবে। মাঝে মাঝে উষ্ণ জল পান করুন।
৩) স্নানের সময় কখনো সাবান ব্যবহার করবেন না। সব সময় ঘরোয়া উপাদান এর উপরে নির্ভরশীল হওয়া। প্রতিদিন স্নানের সময় একটি স্ক্রাবার ব্যবহার করতে পারেন সেটি তৈরি করতে লাগবে-
এক চামচ চালের গুঁড়ো, প্রয়োজনমতো কাঁচা দুধ, এক চামচ বেসন, এক চামচ মুসুর ডাল বাটা, এক চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে মুখে, গলায়, যদি সম্ভব হয় সারা শরীরে মেখে নিন। কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৪) ত্বকের চর্চায় নিয়মিত ব্যবহার করুন নারকেল তেল। আমরা মনে করি শীতকালেই শুধুমাত্র আমাদের শরীরকে তেল দিতে হয় তা নয় গরমকালেও শরীরের লাবণ্য ধরে রাখার জন্য নিয়মিত তেল মাখুন। শুধু মাখার সময়টা একটু বদলে যাবে। গ্রীষ্মকালে স্নানের আগে ভালো করে তেল মাখতে হয়। বাড়িতেই তৈরি করে ফেলতে পারেন ত্বক কে ভালো রাখার জন্য একটি অসাধারণ বডি অয়েল। এটি তৈরি করতে আপনার লাগবে –
এক চামচ নারকেল তেল, এক চামচ তিল তেল, এক চামচ কর্পূর, এক চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো, একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, এক চামচ গ্লিসারিন ভালো করে মিশিয়ে নিন, স্নানের আগে এটি সারা শরীরে ভাল করে মেখে স্নান করুন। সপ্তাহে দুদিন এটি করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়। ত্বক বেশ টানটান হয়।
৫) ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য গ্রিন টির জুড়ি মেলা ভার। প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে এক কাপ করে গ্রিন টি পান করুন। গ্রিন টির মধ্যে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা ত্বকের মধ্যে লাবণ্য আনতে সাহায্য করে। তবে গ্রিন টি শুধুমাত্র খাওয়াই নয়, গ্রিন টি খাওয়ার পরেই গ্রিন টির যে ব্যাগ ফেলে না দিয়ে সেই ব্যাগ কেটে নিয়ে ভেতর থেকে সমস্ত উপাদান বার করে নিয়ে সামান্য টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে যদি মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে ভালো করে স্ক্রাব করতে পারেন, এতে ত্বক অনেক উজ্জ্বল হবে।
৬) ত্বকের উজ্জ্বলতায় ব্যবহার করুন কফি পাউডার। তৈলাক্ত বা শুষ্ক যেকোনো ত্বকের জন্যই কফির ব্যবহার করা যেতে পারে। এক চামচ কফি, এক চামচ কাঁচা দুধ, এক চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে স্ক্রাব করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনার জন্য কফির জুড়ি মেলা ভার।
৭) সবশেষে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, রাতে শুতে যাওয়ার সময় ত্বকের যত্ন নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। সারাদিনের পরিশ্রম, রান্নাঘরের তেলের ময়লা, বাইরে বেরোলেই ধুলোবালি ইত্যাদি ত্বকের ক্ষতি করে তাই রাতে শুতে যাওয়ার আগে ১৫ মিনিট নিজের জন্য সময় দিন। মুখ ভালো করে কাঁচা দুধ দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে, এক চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চামচ গ্লিসারিন, একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, একটি ভিটামিন সি ক্যাপসুল ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে পুরো মুখে মেখে নিন। তৈলাক্ত ত্বক যাদের তারা বেশ কিছুক্ষণ রাখার পরে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। কিন্তু যাদের শুষ্ক ত্বক তারা সারারাতই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন।
৮) সুষম এবং পরিমিত আহার করুন, সারা দিনে অন্তত একটি ফল খান, একেবারে বেশি খাবার খেয়ে নেবেন না, প্রচুর পরিমাণে জল খান, অন্তত ১৫ মিনিট নিয়মিত যোগাভ্যাস করুন, ৮ ঘন্টায় নিশ্চিন্তে ঘুমান। এই ছোট ছোট জিনিস গুলি মেনে চলতে পারলেই আপনি সমস্ত রোগ থেকে মুক্ত হবেন এবং ত্বকও অনেক সুন্দর ও সুস্থ থাকবে।