Hoop PlusTollywood

Sandhya Roy: পেটের জ্বালায় জুনিয়র আর্টিস্ট হয়েছিলেন জমিদারবাড়ির মেয়ে সন্ধ্যা

বাংলা সিনেমার ইতিহাসের গাঁথনির শুরুতে একের পর এক অভিনেত্রীরা এসেছেন। কালের গতিতে কেউ হারিয়ে গিয়েছেন। কেউ বা অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে ঝড়কে বশ মানিয়ে হয়েছেন নায়িকা। কিন্তু প্রত্যেকেই বিশেষ হলেও সন্ধ্যা রায় (Sandhya Roy) একটু আলাদা। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে আসার যুগ ছিল না তখন। জমিদারবাড়ির কন্যা থেকে দারিদ্র্যের জ্বালায় কখন তিনি এসে পড়েছিলেন স্টুডিওপাড়ায়। তবে নিজের বংশকৌলীন্য সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতেন না সন্ধ্যা। কিন্তু একসময় তিনিই হয়ে উঠেছিলেন দীপাবলীর সন্ধ্যাপ্রদীপ।

হয়তো অনেকেরই শুনে অবাক লাগবে, নিজের জন্মসাল জানেন না সন্ধ্যা। তৎকালীন যুগে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সন্তানের জন্ম হত বাড়ির কোণের আঁতুড়ঘরে। প্রসব করাতে বাড়িতেই নিয়ে আসা হত অভিজ্ঞ দাইমাকে। ফলে সেকালের মানুষদের অধিকাংশই জানেন না তাঁদের জন্মসাল। কন্যাসন্তান হলে তো আরও মনে রাখার প্রয়োজন থাকত না। জন্মলগ্ন থেকেই তাকে পার করার চেষ্টা চলত। কিন্তু সন্ধ্যার কাহিনী একটু আলাদা। তাঁর মা নবদ্বীপের পোড়ামা তলার থানে মানত করে এই মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। যশোর জেলার মাগুরা সাব ডিভিশনের বেজপাড়া গ্রামের জমিদার ছিলেন সতীশচন্দ্র গুহ রায়চৌধুরী। তাঁর স্ত্রীর গর্ভেই জন্ম হয়েছিল সন্ধ্যার। তবে যশোরে নয়, সন্ধ্যা জন্ম নিয়েছিলেন তাঁর দিদিমার বাড়ি নবদ্বীপে। সেই সময় সতীশচন্দ্রের জমিদারি তলানিতে ঠেকলেও রক্ষণশীলতা ছাড়তে পারেননি তিনি।

ফলে একরত্তি কন্যাসন্তান সন্ধ্যাও হয়ে গিয়েছিলেন অসূর্যম্পশ‍্যা। ছোট্ট, অবুঝ বালিকার বারান্দায় দাঁড়ানো নিষেধ ছিল। পাঠশালায় যেতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। বাড়ির অন্য মেয়েদের মতোই বাড়িতে বসে পড়াশোনা করার ফলে তা বেশি দূর এগোল না। কিন্তু রক্ষণশীলতার পর্দা সরিয়ে একসময় পথে নামতেই হল সতীশচন্দ্রকে। ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেল। কিন্তু দেশটা দুই টুকরো হয়ে গেল। প্রাণভয়ে সবকিছু ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কলকাতায় কর্মসংস্থান করতে এলেন সতীশচন্দ্র। অবশেষে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করতে হলে বাড়ির মেয়েদের পর্দার আড়ালে রাখলে চলবে না। তাঁদের শিক্ষিত করতে হবে। অতএব ছোট্ট সন্ধ্যাকে ভর্তি করা হল কলকাতার স্কুলে। বালিকার কিন্তু ভালোই লাগত পড়াশোনা করতে। তবু তার নাম যে সন্ধ্যা। জীবনে ঘনিয়ে এল আঁধার। পর পর দুই বছরের মধ্যেই চলে গেলেন মা-বাবা। মাত্র নয় বছরের অনাথ বালিকা জানতেই পারল না তার জন্মক্ষণ। কিন্তু দিদিমা অনেক আন্দাজ করে বললেন, সালটা ছিল 1946। ফলে ওই সালটিই মনে রেখে দিল সে।

তবে সন্ধ্যার স্থান হল পাইকপাড়ায়, তার এক দূর সম্পর্কের জামাইবাবুর কাছে। দু’মুঠো ভাত পেলেও পরনের কাপড় ছিল অধিকাংশ সময় ছেঁড়া। জামাইবাবু অভিভাবকের পরিচয় দিলেও দায়িত্ব পালনে ছিলেন বিমুখ। দারিদ্র্য সহ্য করতে না পেরে একদিন পাড়ার এক দিদির হাত ধরে মাত্র বারো বছর বয়সে টালিগঞ্জের স্টুডিওর দরজায় পা রাখলেন যশোরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমিদার-কন্যা। দাঁড়ালেন জুনিয়র আর্টিস্টের লাইনে।

তখন স্টুডিওতে চলছে রাজেন তরফদার (Rajen Tarafdar) পরিচালিত সিনেমা ‘অন্তরীক্ষ’-র শুটিং। বারো বছরের মিষ্টি মেয়েটিকে পছন্দ হয়ে গেল পরিচালকের। গ্রামের মেয়ের ভূমিকায় রাজেনবাবুর কথা অনুযায়ী অভিনয় করল সন্ধ্যা। জলখাবার ছিল শালপাতায় মোড়া দুটি সিঙাড়া। রাজেনবাবু বললেন, দশ দিন শুটিং করতে হবে। প্রতিদিন দুপুরের খাবার দেওয়া হবে স্টুডিও থেকে। এছাড়াও প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবে সন্ধ্যা। সেদিনের বারো বছরের বালিকা নায়িকা হতে চায়নি। সে শুধু পেটভরে খেতে চেয়েছিল। একটা ভালো জামা পরে লজ্জা নিবারণ করতে চেয়েছিল। তবে দশ দিন নয়। ‘অন্তরীক্ষ’-এ সন্ধ্যা অভিনীত চরিত্রটির শুটিং চলেছিল মোট ষাট দিন ধরে। এরপর রাজেনবাবু পরিচালিত সিনেমা ‘গঙ্গা’, ‘জীবন কাহিনী’, ‘পালঙ্ক’, ‘নাগপাশ’-এর মাধ্যমে বাংলা সিনেমার আকাশে উদয় হল সন্ধ্যাতারার মতো সুন্দরী নায়িকা সন্ধ্যা রায়ের।

একসময় শমিত ভঞ্জ (Shamit Bhanja)-র সাথে সন্ধ্যার জুটি পছন্দ হতে লাগল নতুন প্রজন্মের। পরবর্তীকালে সন্ধ্যার জীবনের আকাশগঙ্গার গতি খুবই অদ্ভুত। বিয়ে করেছিলেন তরুণ মজুমদার (Tarun Majumder)-কে। কিন্তু ভেঙেছিলেন কি? রাজনীতিতে এসে জনপ্রিয়তা পেয়েও অন্তরালে চলে যাওয়াই মনস্থ করলেন কেন? অনেক প্রশ্ন জীবন জুড়ে। স্পটলাইটে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে আনেননি সন্ধ্যা। স্বর্ণযুগের মিষ্টি নায়িকা থেকে তাপস পাল (Tapas Pal), প্রসেনজিৎ (Prosenjit Chatterjee)-এর স্নেহময়ী বৌদি এবং অবশেষে নমনীয় অথচ প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া মায়ের চরিত্র অবলীলায় ধারণ করেছেন তিনি। কখনও টাইপকাস্ট হননি। কিন্তু সন্ধ্যা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে চাইলেও বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু এত আড়াল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে দেওয়া যাক পাঠককুলের হাতে। একবার নিজের মতো করে অনুধাবন করুন নায়িকা নয়, মানবী সন্ধ্যাকে। খুব শীঘ্রই সরে যাবে হিমেল হাওয়ায় কুয়াশার চাদর। কলমে ফুটে উঠবে এক রূপকথার প্রেমকাহিনী।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Udayan (@hail_udayan)

whatsapp logo