সম্প্রতি কল্লোল লাহিড়ী (Kallol Lahiri)-র বিখ্যাত উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে হইচই-এর নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। দেবালয় ভট্টাচার্য (Debalay Bhattacharya) পরিচালিত এই ওয়েব সিরিজে পঁচাত্তর বছর বয়সী ইন্দুবালার চরিত্রে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন শুভশ্রী গাঙ্গুলী (Subhashree Ganguly)। ইন্দুবালার কাহিনীকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সমালোচকরা। কিন্তু মঙ্গলবার, 21 শে মার্চ কেটেছে তাল। দেবালয়ের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্টে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জয়তী চক্রবর্তী (Jayati Chakraborty)। তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে না জানিয়েই ওয়েব সিরিজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর গান।
মঙ্গলবার জয়তী ফেসবুকে একটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এ তাঁর কন্ঠে একটি গান রয়েছে বলেই জানতেন তিনি। অনেক আশা নিয়ে ওয়েব সিরিজটি দেখতে বসে জয়তী জানতে পারেন, তাঁর কন্ঠের গানটি বাদ দিয়ে এক অতি সুযোগ্য গুণী শিল্পীর কন্ঠে তা গাওয়ানো হয়েছে। এই ঘটনায় যথেষ্ট আঘাত পেয়েছেন জয়তী। তাঁর মতে, যদি আগে থেকে তাঁর গানটি বাদ দেওয়ার কথা জানানো হত, তাহলে তিনি সকলকে বলতেন না, এই ওয়েব সিরিজে তিনি গান গেয়েছেন। পাশাপাশি জয়তী জানিয়েছেন, তাঁর কন্ঠের গান না ওয়েব সিরিজে না থাকলেও টাইটেল কার্ডে ওই শিল্পীর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর নাম। তাঁর মতে, এই ঘটনা ওই শিল্পীর ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত অপমানের।
জয়তী অভিমান নিয়ে লিখেছেন, কখনও কোনো শিল্পীর আশা ভঙ্গ হওয়ার দায় কেউ নেননি ও নেবেনও না। কিন্তু জয়তীর মনে হয়েছে, যাঁদের তিনি নিজের কন্ঠে গান গাওয়ার কথা বলেছেন, তাঁদের সাথে মিথ্যাচার হয়েছে। ফলে তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তিনি ফেসবুক পোস্টটি করেছেন। জয়তীর কন্ঠে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর গান ‘আমি একা চিনি’ বর্তমানে স্পটিফাই-তে শোনা গেলেও ওয়েব সিরিজে নেই। এই ঘটনায় মর্মাহত সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র (Lopamudra Mitra) জয়তীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, মন খারাপ না করতে। তাঁর মতে, এই বিনোদন জগতে তাঁদের মতো শিল্পীদের স্থান নেই।
এর আগেও দেবালয় পরিচালিত ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-কে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন এই ওয়েব সিরিজের সঙ্গীত পরিচালক অমিত চট্টোপাধ্যায় (Amit Chatterjee)। তিনি বলেছিলেন, তাঁকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, সম্ভবতঃ কোথাও দুইয়ে দুইয়ে চার হয়েছে। জয়তীর অভিযোগটি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, শুধুমাত্র দেবালয় নয়, তাঁর অভিযোগের তীর কিন্তু অমিতের দিকেও। এবার আসা যাক একটি বিশেষ প্রসঙ্গে। টলিউডের কিছু প্রযোজক রয়েছেন যাঁরা পরিচালক ও সঙ্গীত পরিচালকদের বাধ্য করেন তাঁদের পছন্দের শিল্পীকে দিয়ে গান গাওয়াতে। এমনকি ওই প্রযোজনা সংস্থাগুলির সাথে যৌথ ভাবে কোনো প্রোজেক্ট নির্মাণ করলে তাঁদের সাথে চুক্তিবদ্ধ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মুখ্য চরিত্রে কাস্টিং করতে হয়। একসময় বলিউডে টি-সিরিজের তরফে গুলশন কুমার (Gulshan Kumar) ও কতিপয় প্রযোজক এই ধরনের প্রভাব খাটাতে পছন্দ করতেন। বর্তমানে বলিউডে কর্পোরেট লেভেলে কাজ হয়। কিন্তু বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখনও অবধি প্রযোজনা সংস্থার মাফিয়া রাজ থেকে মুক্ত নয়। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর নির্মাতা এসভিএফ। অমিত বা দেবালয়ের উচিত মিডিয়ার সামনে এসে সত্যের প্রকাশ ঘটানো এবং একই সাথে জানানো উচিত, কোনো শিল্পীকে দিয়ে গান গাওয়ানোর পর তাঁর নাম টাইটেল কার্ডে কেন দেওয়া হয়নি! কারণ লোপামুদ্রার মতো শিল্পীরা যখন অনুভব করছেন বাংলার বিনোদন জগৎ-এ তাঁরা প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না, তার অর্থ আবারও অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।