সোনা নয়! চিরাচরিত প্রথা ভেঙে ইমিটেশনের গয়নায় সেজে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন কনে, প্রশংসা নেটদুনিয়ায়
সোনার দাম আকাশছোঁয়া। মধ্যবিত্তের পকেট পারমিট করেনা সোনার দোকানে গিয়ে। কিন্তু মেয়ের বিবাহ দিতে গেলে মা বাবাকে একটু গা ভর্তি গয়না দিতেই হয়। না হলে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে মান থাকেনা। ইমিটেশনের গয়না পরলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন খারাপ দৃষ্টিতে দেখতে পারে। নতুন বউ কিনা ইমিটেশনের গয়না পরে বিয়ে করতে এসেছে? এই অবস্থা আমাদের সমাজে এখনও মেনে নিতে পারে না। তবে সমস্ত সমালোচনা নিয়মকে ভেঙে এক যুবতী নিজের বিয়েতে পড়লেন ইমিটেশনের গয়না। সাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুন্দর করে গয়না কিনেছেন তিনি। তার এই অসাধারণ সাহসিকতা এবং সমাজকে পাল্টানোর ইচ্ছাকে স্যালুট জানিয়েছেন নাগরিকরা।
বিয়ের সাজ নিয়ে মেয়েদের মনে একটা স্বপ্ন থাকে। তবে আজকাল ছেলেরাও পিছিয়ে নেই। বিয়ের আগে ফেসিয়াল করা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু করে একেবারে বিয়ের দিন বর সেজে ফিটফাট হয়ে থাকতে ছেলেরা পছন্দ করে। কিন্তু তা স্বত্তেও মেয়েদের কাছে ছেলেদের এইটুকু সাজ কিছুই নয়। বিয়ের আগে একেবারে পরিপাটি করে সেজেগুজে সোনার গয়না সজ্জিত হয়ে বিয়ের দিনটাকে একটু অন্যরকম ভাবে কাটাবে এটা সমস্ত মেয়ের একটা স্বপ্ন থাকে।
স্বপ্ন শ্যামনগরের জুহির সাঁতরারও ছিল। কিন্তু স্বপ্নটা একটু অন্যরকম একটুও সবার থেকে হাটকে। গত ২১ নভেম্বর ২৫ বছরের জুহি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। এরমধ্যে আর নতুন কি আছে? ২১শে নভেম্বর পশ্চিমবাংলার প্রচুর যুবতী তার নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে। কিন্তু জুহি অন্যরকম লাল বেনারসি পড়েছেন ঠিকই কিন্তু মানানসই গয়না হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইমিটেশনের গয়না। বন্ধুর বিয়ে বা প্রতিবেশীর বিয়েতে অনেকেই ইমিটেশনের গয়না পড়েন। কারণ সোনা পরে রাস্তায় বেরোনো এখন সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু নিজের বিয়েতে কখনো পুরোটা ইমিটেশনের গয়না সেজেছে এমনটা শোনা যায়নি।
সোনার গয়না কিনে শুধু শুধু টাকা খরচ করাকে তিনি বিলাসিতা বলে মনে করেন। বাবা মায়ের উপরে কোনো এক্সট্রা চাপ তিনি চাপাতে চাননি। তাই এমন অসাধারণ সিদ্ধান্ত। মা-বাবাকে সারা জীবন রক্ষা করা মা-বাবার পাশে থাকাই একমাত্র স্বপ্ন জুহির। পুরনো প্রথাকে ভেঙে ফেলে একেবারে নতুন করে জীবনকে উপভোগ করার মধ্যে এই যে আনন্দ জুহি খুঁজে পেয়েছেন, আর শুধু তাই নয়, এই আনন্দ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে থাকা যুবক-যুবতীদের মধ্যেও। তার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে নয় হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে। বরযাত্রী ছিলেন ৪০ জন মাত্র ৮০ জনকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। বিবাহের কিছুদিন আগেই বাবা খুব অসুস্থ ছিলেন, তাই বিবাহের মধ্যেও বাবাকে নিয়ে প্রচন্ড চিন্তিত যুবতী।
বাড়ির কন্যা বা আশেপাশের কন্যাকে যখন দেখবেন তারা শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিজের বিয়েতে কিভাবে তারা সেলিব্রেট করবে কত দামি দামি গয়না পড়বে, কত দামের শাড়ি পরবে এই নিয়ে তারা যখন মত্ত থাকে, তাদের কাছে এই ধরনের মেসেজ যাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। জীবনটাকে পাল্টাতে হবে, জীবনটা শুধুমাত্র উপভোগ করার জন্য নয় জীবনের এমন কিছু মুহূর্ত আসে সে সময় আপনাকে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই ভীষণ খারাপ অবস্থার মধ্যে আছেন, এটা হয়তো শুনে অনেকেই বলবেন যে বিয়ে তো একবারই হবে, জুহি প্রথমবার এমন অসাধারণ বিয়ে করে দেখিয়ে দিয়েছে। বেশি টাকা খরচ করে সোনার গহনা না পরেও ইমিটেশনের গয়না সুন্দর করে সেজে সে কোন অংশে আর পাঁচটা বাঙালি কন্যার থেকে কম নয়। সোনার গয়না পরলে তাকে বেশি কিছু সুন্দর লাগত না, সে তো এমনি সুন্দর, তার মন সুন্দর সে প্রমাণ করে দিয়েছে।