বি.আর.চোপড়া (B.R.Chopra) নির্মিত ‘মহাভারত’-এ দ্রৌপদীর চরিত্রে এত বছর পরেও এখনও অবধি অম্লান রূপা গাঙ্গুলী (Rupa Ganguly)-র অভিনয়। মহাভারতের দ্রৌপদীকে বারবার হতে হয়েছে পরীক্ষার সম্মুখীন। অবলীলায় পাশা খেলায় তাঁকে বাজি রেখে তাঁর পান্ডব স্বামীর দল দ্রৌপদীকে মানুষ নয়, পণ্য আখ্যায়িত করেছিলেন। কারণ মানুষকে তো পাশা খেলায় বাজি রাখা যায় না। বস্ত্রহরণের সময় দ্রৌপদীর পাশে তাঁর সখা শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কেউই ছিলেন না। কিন্তু রূপার জীবনে কি সত্যিই কোনো কৃষ্ণ ছিলেন? বর্তমানে স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘মেয়েবেলা’-য় বীথির চরিত্রে রূপার অভিনয় সকলের কাছে নেশাগ্রস্ত মনে হয়। তাঁর চেহারায় বয়স কেটেছে আঁকিবুঁকি। কিন্তু একজন নারী হঠাৎই দ্রৌপদীর তেজ থেকে এতটা অবনমিত হলেন, তার খোঁজ কেউ রাখে না। আসলে নারীই স্রষ্টা হলেও তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো অজুহাত প্রাচীন কাল থেকেই তৈরি হয়েছে সমাজের অন্দরে। প্রশ্নপত্র সাজানো হয়েছে ধীরে ধীরে।
বাস্তবে রূপার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে কিছুটা হলেও মিল রয়েছে দ্রৌপদীর। 1992 সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ধ্রুব মুখোপাধ্যায় (Dhruba Mukherjee)-কে বিয়ে করে অভিনয় জগৎ থেকে বিদায় নিয়ে হোমমেকার হতে চেয়েছিলেন রূপা। কারণ তিনি জানতেন, একজন সেলিব্রিটি নারীকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করা একজন পুরুষের পক্ষে খুব কঠিন। এই কারণে সংসার টিকিয়ে রাখতে হোমমেকার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রূপা। কিন্তু তখনও তাঁর হাতে বেশ কয়েকটি প্রোজেক্ট ছিল যা সম্পূর্ণ করতেই হত। ফলে রূপা নির্মাতাদের অনুরোধ করেছিলেন সকাল ন’টার আগে যেন তাঁকে কলটাইম না দেওয়া হয়। এমনকি রাত দশটার মধ্যে মেকআপ না তুলেই বাড়ি ফিরে আসতেন রূপা। কিন্তু এত কিছুর পরেও বারবার ধ্রুব তাঁর উপর মানসিক নির্যাতন করেছেন।
View this post on Instagram
কলকাতায় ধ্রুবর সাথে সংসার টিকিয়ে রাখতে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন রূপা। কিন্তু তিনি অভিনয় ছাড়ার পর তাঁকে ন্যূনতম আর্থিক সহায়তা করতেন না ধ্রুব। ফলে নিজের খরচ চালাতে রূপা আবারও শুরু করেন অভিনয়। কিন্তু এরপর পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হলে রূপা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খেলেও চিকিৎসকের তৎপরতায় রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। এরপর 1997 সালে জন্ম হয় রূপার পুত্রসন্তান আকাশ (Akash)-এর। কিন্তু এরপরেও রূপা দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও সফল হননি।
2002 সালে রূপা তাঁর স্বামী ধ্রুবর কাছে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। এরপর 2005 সালে তাঁর তুলনায় তের বছরের ছোট অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী দিব্যেন্দু (Dibyendu)-র সাথে রূপার সম্পর্ক তৈরি হয়। রূপা তাঁর স্বামীর কাছে আবারও বিবাহ বিচ্ছেদ দাবি করেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর মুম্বইয়ে দিব্যেন্দুর সাথে লিভ-ইন করতে শুরু করেন রূপা। কিন্তু তাঁর পুত্রসন্তান আকাশ থেকে যান ধ্রুবর কাছে। প্রতি বছর মুম্বই থেকে কলকাতায় ছেলের সাথে দেখা করতে আসতেন রূপা। অপরদিকে রূপার অনুপস্থিতিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)-র সাথে দিব্যেন্দুর সম্পর্ক তৈরি হয়। শেষ অবধি 2009 সালে রূপার সাথে দিব্যেন্দুর ব্রেক-আপ হয়ে যায়।
View this post on Instagram