গত বছর লকডাউনের সময় থেকে সেলিব্রিটিরাও ক্রমশ সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে পড়েছেন। বাড়িতেই ন্যুনতম সেট-আপ থাকলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও ভালো ভালো কাজ দর্শকদের উপহার দিতে পারছেন তাঁরা। মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty), কাজী তৌকির (Kaji Touqeer) কেউ বাদ নেই এই তালিকায়। এবার জনপ্রিয় গায়ক রূপঙ্কর বাগচী (Rupankar Bagchi)-ও খুলে ফেলেছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল।
রূপঙ্করের মতো ভার্সেটাইল গায়ক সঙ্গীত জগতে অত্যন্ত দুর্লভ। যেকোন গান অনায়াসেই নিজের গায়কীতে গাইতে পারেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে রূপঙ্করের মতো গায়করাও কখনও কখনও বঞ্চিত হচ্ছেন। কেউ মুখ খোলেন, কেউ চুপ করে থাকেন। কয়েক বছর আগে রূপঙ্কর বলেছিলেন, গান না গাইলে তেলেভাজা ভাজবেন। একজন শিল্পী নিজের অন্তরে কতটা ক্ষুব্ধ হলে, তবে তাঁর মুখ দিয়ে এই কথা বার হয়, তা ধারণার বাইরে। কিন্তু এবার রূপঙ্কর নিজের গায়কীর সাথে সুবিচার করলেন। খুলেছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে এই কথা জানালেন তিনি নিজেই।
এই ভিডিওতে রূপঙ্কর জানালেন, ফিল্মে তাঁকে কেউ সুর করতে বলেন না। অন্য মিউজিক কম্পোজার ডাকলে তিনি গান গেয়ে থাকেন। একটা সময় ছিল মিউজিক অ্যালবামের যুগ। সেই যুগ আজ ক্রমশ অন্তর্হিত। গানের সিডি বেরোয়। কখনও কখনও রূপঙ্কর গান তৈরি করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন। তবে তার সাবস্ক্রিপশন এখনও অবধি আঠারো হাজার ছুঁয়েছে। লাইক পড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার মতো। ইউটিউব চ্যানেল বুস্ট করার পয়সা বা ভিডিও করার পয়সা রূপঙ্করের নেই। কারণ ভিডিও করতে গেলে যে লেভেলে ভিডিও করতে হবে, তার খরচ অনেক। মাঝে মাঝেই রূপঙ্কর অন্য কোম্পানীতে ট্রাই করেন। তালিকায় রয়েছে আশা অডিও, এসভিএফ মিউজিক-এর মতো কোম্পানী। আশা অডিও থেকে রূপঙ্করের গান রিলিজ হলেও তার প্রোমোশন হয় না। এসভিএফ মিউজিক সরাসরি না করে দেয়। এমতাবস্থায় তাঁর একটাই অবলম্বন তাঁর ইউটিউব চ্যানেল এবং ‘গানা’, ‘সাবন’-এর মতো অডিও প্ল্যাটফর্মগুলি। ‘বিলিভ ডিজিটাল’ নামক একটি কোম্পানির মাধ্যমে এই অডিও প্ল্যাটফর্মগুলিতে গান দেন রূপঙ্কর।
কিন্তু এগুলিতে রূপঙ্করের পুরানো গানগুলিই রয়েছে। অথচ তিনি নতুন গান বানাচ্ছেন। কিন্তু না কেউ শোনার আছে, না কেউ দেখার আছে। এই কারণে রূপঙ্কর অনুরোধ করেছেন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটিকে যাতে তাঁর অনুরাগীরা সাবস্ক্রাইব করেন এবং তাঁদের বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করেন। তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে তাঁর চ্যানেলের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন রূপঙ্কর। রাত্রিবেলা অনুষ্ঠান ও দিনের বেলা রেওয়াজ মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে রাজি নন রূপঙ্কর। রাণা সরকার (Rana Sarkar) ও সুদেষ্ণা রায় ( Sudeshna Ray)-এর কাছে কৃতজ্ঞ রূপঙ্কর। কারণ তাঁরা তাঁকে ‘প্রেম বাই চান্স’ ফিল্মের গান তৈরি করার ও সুর করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্মটি ফ্লপ করে। গানগুলিও ফ্লপ করেছিল। তারপর থেকে রূপঙ্করকে আর কেউ মিউজিক কম্পোজ করতে ডাকেননি। তাছাড়া তাঁর পিআর লেভেল ভালো নয় বলে জানিয়েছেন রূপঙ্কর। তা নিয়ে রূপঙ্কর কিছু মনে করেন না। তবে গান তৈরি করলে সেটি যখন অনুরাগীদের কাছে পৌঁছায় না, তখন তাঁর মধ্যে খারাপ লাগা তৈরি হয়। এই কারণে রূপঙ্কর বারবার অনুরোধ করেছেন, সমস্ত কাজের ফাঁকে কয়েক সেকেন্ড ব্যয় করে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করতে। প্রায় চুয়ান্নটা ভিডিও আপলোড করে ইউটিউব থেকে এখনও অবধি রূপঙ্করের আয় হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। 2017 সাল থেকে এখনও অবধি ইউটিউব থেকে এখনও অবধি এটাই তাঁর রোজগার। রূপঙ্কর ভেবেছিলেন চ্যানেলটি বন্ধ করে দেবেন। কারণ তিনি হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু চ্যানেল বন্ধ করলে গানগুলি কোথায় পাবলিশ করবেন, তা ভেবেই আর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেননি রূপঙ্কর।