তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে নিমেষেই বিক্রি হয়ে যান: স্মরণে মৃত্যুঞ্জয়ী ক্ষুদিরাম বসু
“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি” হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে ছিলেন। নাহ্ সেদিন তিনি ভয় পাননি। বরং যখন ফাঁসির আদেশ নিজের কানে শুনলেন শুধু মুচকি হেসেছিলেন। বয়স তখন কত? মাত্র ১৮ বছর ৭ মাস। খুব কম বয়সে মাকে হারান তিনি, মায়ের মৃত্যুর এক বছর পর বাবা মারা যায়। মা বেঁচে থাকাকালীন তার দিদির কাছে তিন মুঠো চালের খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন, সেই থেকেই নাম হয় ক্ষুদিরাম। হ্যাঁ তিনিই হলেন সেই তরুণ বিপ্লবী যিনি তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে শ্রীমদ্ভগবদগীতা পড়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন।
খুব অল্প বয়সে বিপ্লবী রাজনৈতিক দল ‘যুগান্তরে’ যোগ দেন তরুণ ক্ষুদিরাম। মেদিনীপুরের ছেলে এই ক্ষুদিরাম খুব কম বয়স থেকেই বুঝেছিলেন ‘স্বরাজ’ এর মানে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ ছিল তীব্র। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা আজও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয়। ১৮৮৯ সালের ৩ রা ডিসেম্বর ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের নৃশংস আইন ব্যবস্থা তার প্রাণ কেড়ে নেয় মাত্র ১৮ বছর বয়সেই।
সে এক ছিল উল্লেখযোগ্য সন্ধ্যে। বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে তরুণ ক্ষুদিরাম হাত মেলায়। তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য একটাই ভারত থেকে ব্রিটিশ উচ্ছেদ। গোপন সূত্রে খবর ছিল, ব্রিটিশ বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সেই পথ দিয়ে যাবেন। গুপ্ত হত্যা করার ছক নিয়ে বোমাসহ হাজির ছিলেন এই দুই বিপ্লবী। সেদিন ক্ষুদিরাম বোমা ছুড়ে ছিলেন। কিন্তু সেই বোমা কিংসফোর্ডের গাড়ির সামনে পড়েনি। যেই গাড়ির সামনে বোমাটি গিয়ে পড়ে সেই গাড়িতে ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। পরবর্তী গাড়িতে ছিলেন কিংসফোর্ড। দুর্ভাগ্যবশত মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মারা যান। আসল কিংসফোর্ড হত্যা আর হলো না। বরং সেদিন প্রফুল্ল চাকী নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। এদিকে ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা হয়। বিচার হয়, আদালতে ওঠেন তিনি। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়।
সেদিন ক্ষুদিরামের বয়স ছিল খুবই কম। ভুলবশত কিংসফোর্ডের বদলে মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মারা যান। কিন্তু ক্ষুদিরাম পালিয়ে যাননি। হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে ছিলেন। সেদিন মহাত্মা গান্ধীও তাকে সাপোর্ট করেনি। মহাত্মা গান্ধীর চোখে ক্ষুদিরাম ছিলেন অপরাধী। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষুদিরামের হিংসাত্মক মনোভাবকে তীব্র নিন্দা করেন মহাত্মা গান্ধী। দেশ স্বাধীনের পর পাঠ্য বইগুলি তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে কতটা সম্মান দিতে পেরেছে তা আজও সন্দেহজনক। তবে তিনি যে তরুণ সমাজের প্রেরণা হতে পারেন তাতে সন্দেহ নেই।