ভূত আছে কি নেই, তা নিয়ে বিতর্ক চিরন্তন। কেউ ভূতে বিশ্বাস করেন, কেউ করেন না। কিন্তু এমনও অনেকেই আছেন, যাঁরা ভূতের অস্তিত্ব টের পান। এবার জি বাংলার অন্যতম শো ‘দাদাগিরি আনলিমিটেড’-এর মঞ্চে সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly) ও সোহম চক্রবর্তী (Soham Chakraborty)-র কথায়। সোহম বললেন, তিনি প্যারানর্মাল অস্তিত্বের কথা বুঝতে পারেন।
এই বছর যাঁরাই ‘দাদাগিরি’-তে আসছেন, তাঁরাই চমকে দিচ্ছেন সৌরভকে। সোহমও চমকে দিয়েছিলেন তাঁকে। তবে প্রাথমিক বাউন্সার সামলে উঠে দাদা মারলেন সিক্সার। ফলস্বরূপ স্তম্ভিত হয়ে গেলেন উপস্থিত প্রত্যেকে। সৌরভ সোহমকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি ভূত দেখেছেন কিনা। সোহম উত্তর দিয়েছেন, তিনি বহুবার ভূত দেখেছেন। তখন সৌরভ জানালেন, কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ভূত দেখতে পান। সৌরভের একজন বন্ধু রয়েছেন এই দলে। এরপর সৌরভ শেয়ার করলেন তাঁর নটিংহ্যামে টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সময়ের একটি ঘটনার কথা।
তখন সৌরভ ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন। নটিংহ্যামে টেস্ট ম্যাচ খেলার সময় ভারতীয় টিমের সঙ্গে সৌরভ সবেমাত্র হোটেলে চেক-ইন করেছেন। তিনি হোটেলের রুমে প্রবেশ করার পর তাঁর বন্ধু তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। হোটেলের ওই নির্দিষ্ট রুমটিতে ঢুকে সৌরভের বন্ধু বলেন, এই ঘরটা পরিবর্তন করে অন্য ঘর নিতে। বিরক্ত হয়ে সৌরভ বলেছিলেন, আবারও তিনি তল্পিতল্পা নিয়ে কোথায় যাবেন! কিন্তু তাঁর বন্ধু বলেন, এই ঘরে ভূত আছে। এরপর ভূত আছে কি নেই, সৌরভ আর জানতে চাননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ঘর পরিবর্তন করেছিলেন।
এরপর সোহম শোনালেন, তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। আগে সোহম যে ফ্ল্যাটে থাকতেন , সেই স্থানে নেগেটিভ এনার্জির কারণে তাঁকে প্রায় দেড় মাস বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়েছে। তিনি দেখতেন, একটি পুড়ে যাওয়া বীভৎস মুখ তাঁকে অনুসরণ করছে। তিনি ঘরে শুয়ে থাকলে দেখতেন ওই মুখ দরজার কাছে বসে তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এরপর সোহম তাঁর এক পরিচিত প্রেততত্ত্ববিদের কাছে গিয়ে তাঁর সমস্যার কথা জানাতে তিনি সোহমের বাড়িতে এসে একটি নির্দিষ্ট দিকে দেখিয়ে বলেন, এই বাড়িতে একজন ব্যক্তির পুড়ে মৃত্যু হয়েছে এবং এই মুহূর্তে তিনি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তখন দাদা শেয়ার করলেন আরও একটি ঘটনার কথা।
সৌরভ গিয়েছিলেন নর্থ ইংল্যান্ডের ডরহ্যামে। সেখানে তিনি একটি হোটেলে উঠেছিলেন যেটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন দূর্গ ছিল। সেখানে মাঝরাতে সৌরভের ঘরের বাথরুমের কল নিজেই খুলে যেত। তিনি প্রথমে ভাবতেন, হয়তো কল বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি ঘুম থেকে উঠে আবারও কল বন্ধ করে দিতেন। সৌরভ আলো জ্বেলে ঘুমাতে পারেন না। ফলে ঘর অন্ধকার থাকত। আবারও কিছুক্ষণ পরেই আপনাআপনি কল খুলে যেত। সৌরভ আবারও উঠে গিয়ে কল খোলা দেখে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন গভীর রাত। তাঁর সতীর্থরা অন্য ঘরে ঘুমাচ্ছেন। পরের দিন ইংল্যান্ডের সঙ্গে ছিল ওয়ান ডে ম্যাচ। সৌরভ আবারও কল বন্ধ করে ঘরের আলো জ্বালিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। ঘুম আসছে না। কিন্তু পনের মিনিটের মধ্যেই সমস্ত কল তাঁর চোখের সামনেই খুলে গেল।
তখন সৌরভ ভয় পেয়ে মাথার বালিশ, চাদর সব নিয়ে রবিন সিং (Rabin Singh)-এর ঘরে গেলেন। রাত আড়াইটের সময় ঘুমন্ত রবিনকে তুলে সৌরভ বলেছিলেন, তিনি রবিনের ঘরের মেঝেতে শোবেন। তবে সেই রাতে রবিনকে কিছু বলেননি সৌরভ। পরদিন সন্ধ্যার সময় সৌরভ হোটেলের রিসেপশনিস্টকে গিয়ে তাঁর সমস্যার কথা জানিয়ে ঘর পাল্টে দিতে বলেন। তখন রিসেপশনিস্ট সৌরভকে জিজ্ঞাসা করেন, ওই ঘরটি তাঁকে কে দিয়েছে! সৌরভ জানান, একসঙ্গে টিম চেক-ইনের সময় তিনি রুটি পেয়েছিলেন। তখন রিসেপশনিস্ট হোটেলের তরফে ভুল স্বীকার করে বলেন, এতদিন ওই রুমটি সীল ছিল কারণ ওই রুমে একজন সাহেব মারা গিয়েছিলেন। নতুন ভাবে রুমটি রেনোভেশন করে আবার খোলা হয়েছে। সৌরভ রেগে গিয়ে বলেছিলেন, তাঁকেই দিতে হল ওই রুমটি! অন্য কারও কপালে জুটল না! এরপর চৈতি ঘোষাল (Chaiti Ghoshal) তাঁকে ভূত আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সৌরভ বলেন, একশো শতাংশ ভূত আছে। শোয়ে উপস্থিত ছিলেন ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ খ্যাত অভিনেতা সুমিত (Sumit)। পরিস্থিতি হালকা করার জন্য তিনি বললেন, তিনি নিজেই তো ভূত ওরফে ভূতনাথ ভাদুড়ী।
পরিশেষে এই কথা বলা যায়, এই প্রতিবেদন লেখার লক্ষ্য কুসংস্কার ছড়ানো নয়, কিছু ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা। তবে ভূত নিয়ে বিতর্ক চলছে ও চলবে। কিন্তু যদি ধরুন, বিতর্ক চলতে চলতে আপনার সামনে কেউ হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। তাই অনুরোধ, প্রতিবেদনটি নিজের রিস্কে পড়বেন। কারণ হতেই পারে, লেখাটিও ভূতুড়ে।