বলিউড, এক স্বপ্নের দুনিয়া, যার আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে অনেক প্রেমকাহিনী। কিছু বা আবার বিবাহ-বহির্ভূত। কিন্তু বারবার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে কেন জড়িয়ে পড়েছেন বলিউড তারকারা? কখনও এই ঘটনা ঘটেছে একটানা রোম্যান্টিক ফিল্মে অভিনয় করতে গিয়ে, কখনও বা তাঁদের সুপ্ত বাসনা থেকে। বলিউডের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথমেই যাঁর নাম আসে, তিনি হলেন শো-ম্যান রাজ কাপুর (Raj kapoor)।
রাজ কাপুর বারবার জড়িয়ে পড়েছেন একাধিক নায়িকার সঙ্গে। রাজ ও নার্গিস (nargis dutta)-র প্রেম কেন মেনে নিয়েছিলেন রাজের স্ত্রী কৃষ্ণা (krishna Raj) তা আজও অজানা। কিন্তু কৃষ্ণা মানতে পারেননি বৈজয়ন্তীমালা (vaijayantimala)-র সঙ্গে রাজের প্রেম। রাজ ও বৈজয়ন্তীমালার সম্পর্ক তাঁর কানে এসে পৌঁছতেই এক রাতের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে কৃষ্ণা একটি হোটেলে গিয়ে উঠেছিলেন, এমনটাই পরবর্তীকালে জানিয়েছিলেন ঋষি কাপুর (Rishi kapoor)। বহুগামী রাজ অদ্ভুতভাবে সব কিছু ছাড়তে পারতেন, কিন্তু ছাড়তে পারতেন না কৃষ্ণাকে। ফলে পরে রাজ অনেক সাধ্য-সাধনা করে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন কৃষ্ণাকে। ভেঙে গিয়েছিল রাজ ও বৈজয়ন্তীমালার সম্পর্ক।
কিংবদন্তী অভিনেতা গুরু দত্ত (Guru dutt) একসময় বাঙালি মেয়ে গীতা(Geeta)-র প্রেমে পড়ে তাঁকে বলেছিলেন, গীতাকে ছাড়া তিনি বাঁচবেন না। বিয়ে হয়েছিল গুরু ও গীতার। কিন্তু তাঁদের সুখী দাম্পত্যে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়াহিদা রহমান (wahida Rehman)। গুরু দত্তের হাত ধরেই বলিউডে প্রবেশ করেন ওয়াহিদা। ‘মেন্টর’ গুরু দত্ত ক্রমশ ওয়াহিদার দিকে ঝুঁকতে থাকেন। কিন্তু একসময় যখন গুরু দত্ত-র প্রযোজিত ফিল্মগুলি অসফলতার মুখ দেখতে শুরু করে তখন ওয়াহিদা ধীরে ধীরে গুরুর জীবন থেকে দূরে চলে যান। ততদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। শেষ মুহূর্তে যখন গুরু নিজের ভুল বুঝেছিলেন তখন গীতা তাঁর সন্তানদের নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেছেন। বারবার খবর পাঠানো সত্ত্বেও ফিরে আসেননি গীতা। এক রাতে গুরুর গীতার কাছে খবর পাঠিয়ে সন্তানদের দেখতে চান। কিন্তু গীতা তাঁর কথায় কর্ণপাত করেননি। পরের দিন গুরুর ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। এই ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি গীতা। গুরুর মৃত্যুর এক বছরের মাথায় তিনিও মারা যান।
অমিতাভ বচ্চন (Amitabh bachchan) ও রেখা (Reekha)-র প্রেম কারও অবিদিত নয়। তা নিয়ে বলিউডে কম জলঘোলা হয়নি। অমিতাভ তখন বিবাহিত এবং তাঁর ও জয়া (Jaya Bachchan)-এর দুটি সন্তান রয়েছে, অভিষেক (Abhishek Bachchan) ও শ্বেতা বচ্চন (sweta bachchan)। তখন সর্বত্র অমিতাভ ও রেখাকে একসঙ্গে দেখা যেত। অনেকে বলেন, তাঁরা নাকি গোপনে বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু পরে জানা গেছে, কথাটি ঠিক নয়। জয়া পৌঁছে গিয়েছিলেন সহ্যের শেষ সীমায়। একদিন বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে রেখাকে ডেকে এনে জয়া ওয়ার্নিং দিয়ে বলেছিলেন, অমিতাভকে জয়ার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সেদিন শান্ত জয়ার উদ্ধত মুর্তির কাছে হার মেনেছিলেন রেখা। শেষ হয়ে গিয়েছিল অমিতাভ-রেখার সম্পর্ক।
উনিশ বছর বয়সে ধর্মেন্দ্র (Dharmendra)-র বিয়ে হয়েছিল প্রকাশ কৌর (prakash kaur)-এর সাথে। চার সন্তানের পিতা ধর্মেন্দ্র একসময় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উঠতি নায়িকা হেমা (Hema malini)-র সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই সম্পর্কের ফলে জিতেন্দ্র (jitendra)-র সঙ্গে হেমার বিয়ে ঠিক হয়েও ভেঙে যায়। ধর্মেন্দ্র ও হেমার জুটি তখন রূপোলি পর্দায় সুপারহিট। কিন্তু প্রকাশ ডিভোর্স না দেওয়ায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হেমাকে বিয়ে করেন ধর্মেন্দ্র। তখনকার মিডিয়া ধর্মেন্দ্রকে ‘চরিত্রহীন’ বলায় অদ্ভুতভাবে রুখে দাঁড়িয়ে প্রকাশ বলেছিলেন হেমার মতো সুন্দরী যে কোনো পুরুষের স্বপ্নের নারী। কিন্তু তার জন্য তাঁর স্বামী ধর্মেন্দ্রকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অধিকার কারোর নেই। প্রকাশের কথায় কি কোনো সুপ্ত বিদ্রুপ ছিল! জানা নেই, তবে আজও ধর্মেন্দ্রর পৈতৃক ভিটেতে প্রকাশ থাকেন। সেখানে পা রাখার অধিকার পাননি হেমা। বোধহয় প্রকাশ আগেই জানতেন তাঁর পূর্ণ অধিকারের কথা। তাই হয়তো স্বামীকে বাধা দেবার চেষ্টা তিনি করেননি। এই কারণে হেমা ধর্মেন্দ্রর স্ত্রী হয়েও পেলেন না তাঁর পরিবারের বৌ হওয়ার তকমা যার অধিকার আজীবন থাকল প্রকাশ কৌরের কাছেই।
আমির খান (Ami khan) ও রীনা (Reena) ছিলেন শৈশবের বন্ধু। একসময় দুজনের বিয়ে হয়। জন্ম হয় ইরা (ira) ও জুনেঈদ (junaid)-এর। কিন্তু ‘লগন’ ফিল্মের সময় আমির প্রেমে পড়ে যান এই ফিল্মের থার্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কিরণ রাও(kiran Rao)-এর। রীনা শত চেষ্টা করেও নিজের সংসার বাঁচাতে পারেননি। আমির ও রীনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আমির কিরণকে বিয়ে করেন। কিন্তু আমিরের বহুগামিতা কিরণকে ডিপ্রেশনের শিকার করে দেয়। আমির ও কিরণের বিয়ে আজও টিকে আছে, না টাকার মতো করে।
সইফ আলি খান (saif Ali khan)ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন অমৃতা সিং(Amrita singh)-কে। কিন্তু স্টারডম আসার সাথে সাথেই পাল্টে যেতে শুরু করেন সইফ। তাঁর জীবনে আসেন বিদেশী নর্তকী ও অভিনেত্রী রোজা (Rosa)। একটি ফিল্ম ম্যাগাজিন এই বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্কের কথা প্রকাশ করলে সইফকে নিয়ে সেই ম্যাগাজিনের দপ্তরে পৌঁছে গিয়ে মানহানির মামলা দায়ের করার হুমকি দিয়েছিলেন অমৃতা। পরে যখন সত্য প্রকাশ পায়, তখন দুই সন্তান সারা (sara ali khan) ও ইব্রাহিম (Ibrahim khan)-কে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন অমৃতা। সইফ ও অমৃতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রোজা সইফকে ছেড়ে চলে যান। এই ঘটনার কয়েক বছর পরে সইফের সঙ্গে করিনা (kareena Kapoor khan)-এর বিয়ে হয়। কিন্তু কোথাও কি আজও সইফ আফশোস করেন অমৃতার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য? তাই কি এখনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর ভরসার স্থান অমৃতা সিং, যাঁকে সইফ এখনও ডাকেন ‘ডিঙ্গি’ বলে?