বাংলা থিয়েটার দিয়ে হাতেখড়ি হয় বাংলা সিনেমা জগতের স্বনামধন্য অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তীর। ২০০৮ সালে রুদ্রনীল ঘোষ এর সাথে ক্রস কানেকশন এ কাজ করার মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন। রোম্যান্স হোক বা থ্রিলার বা কমেডি সবেতেই জমিয়ে রাখতে পারেন তিনি দর্শকদের। সিক্স প্যাক নেই তাঁর, বিগ মাসল নেই তাঁর, এমনকি চকচকে ঝকঝকে স্কিনও নয় তবুও এই বাবাই দা হিট। কলেজ স্টুডেন্ট হোক বা সিনেমা প্রেমী পরিনত কোন মানুষ সকলের পছন্দের তারকা হলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী।
আপনিও যদি সিনেমাকে মন থেকে উপভোগ করেন তবে ঋত্বিকের ‘শব্দ’ আপনাকে শুনতে শেখাবে, ‘নগর কীর্তন’ আপনাকে বুঝিয়ে দেবে ভালবাসার সঙ্গীর জন্য সব উজাড় করে দেওয়া যায়, এর কোন রূপ নেই রং নেই কিছুই নেই। আবার আপনি যদি ‘পরিণীতা’ দেখতে বসেন তবে সেই বাবাই দা আপনার স্কুল লাইফের প্রেমের কথা মনে করিয়ে দেবে। সত্যি ঋত্বিক হলেন এক ‘ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বটল’। আজ এই মানুষের অন্দরমহলে ডুব দেব আমরা সকলে। পরিচয় করে নেব তাঁর একমাত্র সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে। এনার স্ত্রী যে শুধু সুন্দরী তা নয়, অভিনয়েও যথেষ্ট দক্ষ।
অপরাজিতা ঘোষ দাস কে বিয়ে করেন বাংলার বাবাই দা ঋত্বিক চক্রবর্তী। ২০১১ তে গাঁটছড়া বাঁধেন এই দুই অন্যতম তারকা। যেই বছর ‘নেকলেস’ করলেন ঋত্বিক, সেই বছরেই স্ত্রীর গলায় ফুলের নেকলেস দেন, অর্থাৎ মালাদান সেই বছরেই হয়। এখনও দুইজন একে অপরকে তুই বলেই সম্মোধন করেন। বাড়িতে ‘পান্তা’ আছে, কিন্তু তাতে কি? পান্তার সামনেই চলে বন্ধুত্বের সহজ সরল সমীকরণ। আরে মশাই পান্তা হল এই দুই জুটির একমাত্র ছেলে।
২০০২ থেকে প্রেম তারপর ১১ তে বিয়ে এরপর সন্তান, এখনও এই দুই জুটি চুটিয়ে সংসার করছেন গাঙ্গুলিবাগানে। জীবনে আড়ম্বর খুব কম রেখেছেন। এই দুইজনের আবাসনে তেমন অতিরিক্ত কোন আড়ম্বর নেই কিন্তু এক নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ আছে। এখনও এই দুই দম্পতির মধ্যে একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ খুব কমই হয়, দুইজনেই ব্যস্ত শ্যুটিং এ কিন্তু কোথাও গিয়ে দুজনের মধ্যে ভালবাসা আজকেও অটুট। একদিকে অপরাজিতা ডেলিসোপ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। আর ঋত্বিক বেশ কয়েকটা ছবির শ্যুটিং করছেন।
অপরাজিতার কথায় ঋত্বিক আসলে ফ্যামিলি-সিক এবং আমাদের জীবনে পার্টি বা সোশ্যাল গ্যাদারিং খুব কম। আপনি হয়তো জানলে অবাক হবে বাবাই দার কাছে তেমন কোন ফোন নেই আর থাকলেও তাতে গুঁটি কয়েক ফোন নম্বর সেভ। ব্যাস। অপরাজিতার কথায় ঋত্বিক আসলে ভীষণ বাচ্চা। ছেলের সঙ্গে সময় পেলেই খেলা করে সময় কাটায়। ছেলে পান্তাও নাকি বাবার খুব ফ্যান।
অপরাজিতার কথায় ঋত্বিক নাকি এই লোক ডাউনে বিশাল ঘুমিয়েছে। ঋত্বিকের কথায় ‘ল্যাদ’ হল বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাদ্য-যা চোখে দেখা যায় না বটে তবে খেতে মন্দ লাগে না। এমনকি ‘ল্যাদ বর’ নামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন ফিল্মে অভিনয় পর্যন্ত করে নিয়েছেন বাবাই দা। নিজেকে স্টার বলতে ও ভাবতে পছন্দ করেন না ঋত্বিক এমনকি অপরাজিতাও একই পথের পথিক। নিজেকে অভিনেতা হিসেবে ভাবতে ও বলতে পছন্দ করেন এই মানুষটি। অথচ তিনি কিন্তু স্টারদের ছবি দেখেন।
ঋত্বিক মানেই অসম্ভব ক্যাজুয়াল একজন অভিনেতা পাশাপাশি অপরাজিতাও খুব সাধারণ। দুইজনের অভিনয় দেখলেই মনে হয় সত্যি থিয়েটার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। থিয়েটার যে শুধু চরিত্র আর দর্শকদের কাছে আনে তা নয়, দুটো মনকেও বেঁধে রাখতে পারে। ঋত্বিক-অপরাজিতার জন্য অসংখ্য শুভেচ্ছা।