আগে মানুষের মধ্যে অপেক্ষা নামক একটা শব্দ ছিল: সন্দীপ্তা সেন Exclusive Interview
‘বিউটি উইথ ব্রেন’ বলুন বা ‘রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী’, তিনি নিজেই একটি কমপ্লিমেন্ট। হ্যাঁ কথা হচ্ছে বাংলা টেলিভিশন জগতের অতি জনপ্রিয় মুখ সন্দীপ্তা সেন এর ব্যাপারে। তার হাতেখড়ি হয়েছিল ‘দুর্গা’ দিয়েই, এরপরে ‘টাপুর টুপুর’ হোক কিংবা ‘প্রতিদান’, সব চরিত্রেই বিজয়ী তিনি। বাংলার দর্শক এই সুন্দর মুখশ্রীকে আপন করে নিয়েছেন পাশের বাড়ির মেয়ের মতোই।
নতুন বছর শুরু হয়ে গিয়েছে আর এই নতুন বছরে আমরা সেই মানুষটিকে পেয়েছি যিনি যেমন একজন অভিনেত্রী তেমনই একজন সমাজসেবী। তারই সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় মেতে উঠলেন আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি সুস্মিতা কুন্ডু ও কৌশিক পোল্ল্যে।
“Behind my smile there’s a story you would never understand” আপনার একটি ছবির ক্যাপশন, এত সুন্দর মিষ্টি হাসির পেছনে রহস্য কি?
(প্রাণখোলা হাসি হেসে) রহস্য is nothing.. actually, স্ট্রেস ফ্রী থাকাটা ভীষণ ইম্পর্টেন্ট মানে স্ট্রেস লাইফে আসে, প্রবলেম লাইফে আসেই, সেই প্রবলেমকে কিভাবে সলভ করব এবং নিজের মেন্টাল হেলথকে কিভাবে ঠিক রাখব সেটা মেনটেন করা খুব ইম্পর্টেন্ট হয়ে যায়। মানে লাইফে অনেক নেগেটিভ দিক আছে তার মধ্যেও পজিটিভ দিকটা খুঁজে বের করাটাও মানুষের খুব ইম্পর্টেন্ট পয়েন্ট হওয়া উচিত তার লাইফে। আ্যসপেক্ট হওয়া উচিত। That’s it.
আপনি সদ্য পুরুলিয়া থেকে ফিরলেন, অযোধ্যা পাহাড় আর সরষে ফুলের হিল্লোল চাক্ষুষ করেছেন?
আমার পুরুলিয়া আগে যাওয়া হয়েছিল ২০১০ এ, দুর্গার শুটিংয়ে মুকুট মণিপুর তো আমি ওই অযোধ্যা পাহাড় , বামনি ফলস, মার্বেল লেক ওইসব জায়গায় কখনো যায়নি, যেটা সবথেকে বেশি ভালো লাগলো যেখানে আমি ছিলাম খয়রাবেড়া ড্যামের পাশে একটি ইকো রিসোর্ট ওখানে খয়রাবেড়া ড্যাম এর উপর দিয়ে কায়াকিং করেছি, আগে করলেও ওয়েস্ট বেঙ্গলের মধ্যে কোথাও কায়াকিং করিনি এবং এবারে সোলো কায়াকিং করেছি। সেই ভিডিও আমি কয়েকদিন পর আপলোড করব। সেখানে যেই সাইলেন্স রয়েছে আর একদম পলিউশন ফ্রি ওই জায়গাটা তো I really enjoyed a lot.
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর তসর শিল্পের জন্য খুব বিখ্যাত তো ওখান থেকে কিছু কিনলে নিজের জন্য?
না ওখান থেকে কিছু কেনা হয়নি। আমি মাস্ক এর একটা গ্রাম আছে ওখানে বিভিন্ন শিল্পীর মাস্ক বানায় মুখোশ বানানো বিভিন্ন রকমের ছৌ নাচের তো সেখানে গিয়েছিলাম এবং আমার মা কয়েকটা মাস্ক কিনেছে এবং আমার ভালো লেগেছে। অসাধারণ এখনশিল্পীদের এত নৈপুণ্য দেখে ভালো লেগেছে আর কি।
২০০৮ এ দুর্গা দিয়ে টেলিভিশনের অভিনয় ক্যারিয়ারের প্রথম পা, এরপর শুধুই উত্থান, জীবনকে কিভাবে পরিচালনা করতে ভালো লাগে আপনার?
দেখো এতদিন আমাকে খুব একটা পরিচালনা করতে হয়নি ফ্রাঙ্কলি স্পিকিং। কারণ আমি দুর্গার পর টাপুর টুপুর করেছি, এরপর তুমি আসবে বলে, তারপর প্রতিদান তো পরপর এটা চলেছে। কারণ একটার পর একটা কাজ এসেছে এবং আমি করেছি । তুমি আসবে বলে-এর পরেই আমি স্টার এর কন্টাক্ট এ ছিলাম, দুর্গার সময় কিন্তু আমি স্টারের কন্ট্রাক্টের ছিলাম না, সবাই যেটা মনে করে থাকেন যে আমি ছিলাম, it’s not like that আমি মৌখিকভাবেই কাজ করতাম। আমি কোন কন্ট্রাক্টে সাইন করিনি। প্রতিদান এর পর আমি আস্তে লেডিস করলাম, সেটাও আমার কাছে এসেছে এবং লকডাউন এর আগেও লকডাউন এর পরে প্রচুর কাজ এসেছে আমার কাছে কিন্তু কোন কারণে এখন আমার মনে হচ্ছে যে মেগাটা কয়েকদিন করবো না, এখন একটু ওয়েব সিরিজ, শর্ট ফিল্মের দিকে মন দিচ্ছি। মেগা ডেফিনেটলি ব্যাক করব, কিন্তু সেটা পরে এখন নয়।
মুম্বাই থেকে এখনো পর্যন্ত কোন ডাক এসেছে? ইচ্ছা আছে মুম্বাইতে গিয়ে কাজ করার?
প্রচুর ডাক এসেছে মানে দুর্গার শেষ হবার ছ মাস পরে টাপুর টুপুর এর ডাক আসে। এর মাঝে প্রচুর বোম্বে থেকে অফার এসেছে। এবং একটা প্রজেক্ট এর জন্য প্রচুর ওরা আমাকে বলে, আমার ফেসটা ভীষণ যাচ্ছিল ওই চরিত্রের সঙ্গে। কিন্তু আমি তখন করতে পারিনি তখন আমার মাস্টার্স চলছিল।
এখন যাবার ইচ্ছা আছে?
এখন ভালো কাজ হলে নিশ্চয়ই যাবো। এখন যদি কোনো ভালো কাজ আসে নিশ্চয়ই করব।
অনেকেই আপনার ছবিতে কমেন্ট করে যে আস্তে লেডিস টু কবে আসছে ? কারণ সিজন 2 নিয়ে আমরা খুবই এক্সাইটেড
আমার হইচই এর সঙ্গে যতটা কথা হয়েছে এবং যতটা আমি বুঝেছি সিজন 2 আসবে কি আসবে না সেটা তো আমাদের উপর ডিপেন্ড করে না, তবে আমার যতটুকু ধারনা যে আস্তে লেডিস টু আসবেনা। আস্তে লেডিস টু করার এদের কোন প্ল্যান নেই।
সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা, এই লকডাউনে কতটা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসতে পেরেছেন?
অনেকটা (স্বস্তির নিঃশ্বাস)। ফেসবুক প্রচুর পেজ থেকে লাইভে এসেছি। এছাড়া আমার এক বন্ধু আছে নাম – পার্নাশা গুপ্তা রায় একজন সাইকোলজিস্ট ও একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছিল লকডাউন এরমধ্যে সেখানে আমি এস এ সাইকোলজিস্ট প্র্যাকটিস করতাম। করছিও। আমি সেখানে আমি যেটা দেখলাম যে অনলাইনে মানুষ কতটা কম্ফোর্টেবল হবে, কারন অনেকেই এতে অসুবিধে অনুভব করেন, কিন্তু সেটা আসলে হয়নি। আরো কিছু সুবিধা হয়েছে যে লকডাউনে অনেক মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি এবং তাদের হেল্পের দরকার হয়েছে তো সেখানে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। এবং প্রচুর মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং ভালো সাপোর্ট পাই মানুষের থেকে।
আজকের দিনে আত্মহত্যা করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেড়েছে শুধু আজকের দিন মনে হয় বিগত ১০-১২ বছরের মধ্যে এর ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ ব্যাপারে আপনার মতামত?
এটা নিয়ে একটা বড় কনভার্সেশন হতে পারে, কিন্তু সংক্ষেপে বলছি, ডিপ্রেশন অনেক আগে থেকেই ছিল কিন্তু বর্তমানে এর প্রচার বেড়েছে। লাস্ট ফাইভ ইয়ার্স সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভিটি আমাদের অনেক বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা মানুষ অনেক জানতে পারছে যে ডিপ্রেশন কি , অ্যাংজাইটি কি, এবং বিভিন্ন রকম সাইকোলজিকাল প্রবলেম কি কি হতে পারে এবং মেন্টাল হেলথ কিভাবে সাপোর্ট নেওয়া উচিত এইগুলো অনেকটাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের মাথার মধ্যে ঢুকে যায়।
2 হচ্ছে যে এরকমও দেখা যায় যে মানুষ একটু মন খারাপ হলে বলে আমি ডিপ্রেশনে চলে গেছি, ব্যাপারটা কিন্তু সেটা নয়। ২০২০ তে যদি আমরা দেখি মার্চ থেকে যেরকম যাচ্ছে , ব্যাপারটা এরকম নয় যে যা যা খারাপ লাগছে তার পরের দিনই ঠিক হয়ে যাবে, তাই মন খারাপ হওয়া টা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই মন খারাপ দুই-তিন দিন থাকতেও পারে, হতেই পারে যে বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করছেই না, মুডটা খুব অফ কোন কাজ করতে ইচ্ছে করছে না, কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, এটা দু-তিনদিন হতে পারে এবং এটা শুধু মন খারাপের লক্ষণ। এটা কিন্তু ডিপ্রেশন নয়। ডিপ্রেশন আমি তখনই বলবো যখন আমাদের ক্রাইটেরিয়া গুলো ম্যাচ করবে, সব অসুখ এরই কিছু ডায়াগনোসিস ক্রাইটেরিয়া থাকে সে ক্ষেত্রে মেন্টাল হেলথ এর যদি কোন সমস্যা হয় মানুষের তারও প্রচুর ক্রাইটেরিয়া থাকে, যদি রকম টানা দুই সপ্তাহ দেখা যায় মন খারাপ থেকে কিছুতেই বেরনো যাচ্ছেনা কিংবা অন্যান্য সিমটমস থাকে সেগুলো যদি দেখা যায় একটা মানুষের মধ্যে রয়েছে তখন আমরা থেকে ডায়াগনোসিস করতে পারি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেসড বলে। কিন্তু তার আগে নয়।
আরেকটা ব্যাপার হলো, মানুষের কাছে সবকিছু ভীষণভাবে সহজলভ্য হয়ে গেছে। আগে মানুষের মনের মধ্যে অপেক্ষা নামক একটা শব্দ ছিল এবং যেটা হেল্প করত অনেক কিছু এডজাস্ট করতে , কিন্তু এখন মানুষের কাছে সব টা খুব ইজিলি এভেলেবেল হয়ে গেছে। মানুষ এখন আর ওয়েট করতে পারে না। যেমন ঝগড়া হয়ে গেছে ব্লক করে দেই, এইসব জিনিসগুলো হতো না আগে। মানুষের ধৈর্যটা অনেক কমে গেছে। তো তার জন্য বেশ কিছু প্রবলেম বাড়ছে। অপেক্ষা জিনিসটা চলে গিয়ে আমাদের নিজস্ব জীবনটা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
লিভ ইন বনাম বিয়ে নাকি লিভ ইন এবং বিয়ে কোনটা স্বাভাবিক বলে মনে হয় আপনার?
নিয়ে একটা সোশল ইনস্টিটিউশন যেটা আমাদের মধ্যে রয়েছে। প্রত্যেকটা কাপলের একটা স্টোরি থাকে, এটা নির্ভর করছে সেই কাপল কি চায়। ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আমি লিভ ইন মানি না হলে বিয়েই। মানে বিয়েকেই প্রাধান্য দিই।
আপসের মাধ্যমে জয় নাকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জয়, কোন চিন্তাভাবনা থাকা উচিত একজন টিনেজার এর মধ্যে?
এক্ষেত্রেও গল্প প্রত্যেকের নিজস্ব লাইফস্টরি আছে এবং নিজস্ব লক্ষ্য আছে। কি চাইছো জীবনে সেটা সবথেকে বেশি ইম্পর্টেন্ট। এবং কি চাইছো ও কিভাবে চাইছো এই দুটো প্রশ্ন খুব ইম্পর্টেন্ট। এই দুটো প্রশ্নের উত্তরটা তাকে নিজেকে দিতে হবে। এই দুটো প্রশ্নের উত্তরটি পেয়ে গেলে সে তার লাইফে এগোতে পারবে।
বড় পর্দায় কবে দেখতে পাবো?
আমিও ভাবছি সেটা কবে দেখতে পাবো। ভালো কাজ পেলে নিশ্চয়ই করব। আমি অনেক দিন ওয়েট করে ওয়েব সিরিজ করেছিলাম, এবং সেটা মানুষের ভালো লেগেছে।
কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে? কার কাজ খুব ভালো লাগে?
বাংলায় অনেক ডিরেকটর রয়েছেন যারা ভীষণ ভালো কাজ করেন, শ্রীজিৎ মুখার্জী রয়েছেন, কমলেশ্বরদা এরকম বহু আছেন আসলে আমি নাম বলতে চাই না কারণ অনেক সময় নাম মিস হয়ে যায়।
আপনিতো খুব ভ্রমণ বিলাসী, লকডাউন এর আগে পর্যন্ত কোন কোন জায়গায় ঘুরলেন?
লকডাউন এর আগে বেনারস, নর্থ বেঙ্গল, গোয়া।
দেশের বাইরে?
২০২০ তে যাওয়া হয়নি তবে তার আগে গিয়েছিলাম সুইজারল্যান্ড এবং তারপরই ক্যালিফোর্নিয়া।
নাচ আর সন্দীপ্তা সেন কতটা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত?
অভিনয়ের থেকেও বেশি, কারণ সন্দীপ্তা জন্মানোর পর প্রায় আড়াই বছর বয়স থেকে সে নাচ করতে শুরু করে। আমার ফাস্ট স্টেজ পারফরম্যান্স আড়াই বছর বয়সে। তাই আগে ডান্সার তারপরে অভিনেত্রী। নাচ টা আমার কাছে অক্সিজেন এর মতো।
পুরনো বাংলা গান শোনেন? শ্যামল মিত্রের, “যাক যা গেছে তা যাক, যাক যা গেছে তা যাক” এই গান শুনেছেন? তাহলে যাক যা গেছে তা যাক নাকি বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী কোনটা আপনার কাছে সঠিক মনে হয়?
প্রথম গানটা। হ্যাঁ মানে যেটা গেছে তা গেছে। ফিউচার টা নিয়ে ভাবা উচিত। আমার যেটা মনে হয় Jo Gaya wo Gaya.
কেমন পরিবারে বিয়ে করার ইচ্ছে?
এইরে আমি না খুব একটা ইন্টারেস্টেড নই বিয়ে নিয়ে। আমি ছোটবেলা থেকেই প্রথমে পড়াশোনা এবং কাজ তার উপরে বাবা-মা এই নিয়ে চলেছি। আমি বড্ড বেশি বাবা-মা কেন্দ্রিক। আমি আড্ডা মারি বন্ধুদের সঙ্গে এবং বাবা-মা ও সেখানে থাকেন। স্কুল থেকে এটা হয়ে আসছে, যখনই আড্ডা মারতাম কাকু কাকিমা নেই কেন, তুমি বাবা মা সব সময় থাকেন। তাই বিয়ে নিয়ে এখনো কোনো প্ল্যান নেই।
তবে যদি কখনো বিয়ে করি তবে সেই মানুষটাকে খুব সৎ হতে হবে, এবং ইন্টেলিজেন্স থাকাটা খুব দরকার, ফ্যামিলি ডেফিনিটলি খুব ভালো হওয়া দরকার যেটা আমার ফ্যামিলির মেন্টালিটির সঙ্গে ম্যাচ করবে।
আপনার জীবনে আদর্শ মানুষ কে?
ওরকম কেউ নেই। অনেক মানুষের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। একজন মানুষ কখনো পারফেক্ট হয় না। যার যেটা ভালো আছে তার থেকে সেটা শেখার চেষ্টা করি।
২০২১ ভগবানের কাছে কি প্রার্থনা করবেন?
আমি ২০২০ আগের পৃথিবী দিকে ফিরে পেতে চাই।২০২০ কে আমরা পানিশমেন্ট হিসেবে ধরি। ২০২১ আমরা কোরোনা ফ্রী জীবন যেন পাই।