গতকাল চলে গিয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। সকাল হতেই আবারও ইন্দ্রপতন। চলে গেলেন ‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পী লাহিড়ী (Bappi Lahiri)। প্রথমে সকলে ভেবেছিলেন, প্রতিবাদের মতো এবারেও পুরোটাই গুজব। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জানা গেল, সত্যিই নেই ‘ডিস্কো কিং’। শোকস্তব্ধ আসমুদ্রহিমাচল। লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পী লাহিড়ী। সুরলোকে পাড়ি দিলেন বাগদেবীর বরপুত্র-পুত্রীরা।
View this post on Instagram
কথা ছিল না ‘ডিস্কো কিং’ হওয়ার। জলপাইগুড়ির এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাপ্পী। বাড়িতে মা বাঁশুরি লাহিড়ী (Bansuri Lahiri) ও বাবা অপরেশ লাহিড়ী (Aparesh Lahiri)-র সৌজন্যে রীতিমত গানের আবহ। তবে সবসময়ই ভেসে আসে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও শ্যামা সঙ্গীত। দূরসম্পর্কের মামা কিশোর কুমার (Kishor Kumar)। তাতে কি! তিন বছর বয়স থেকেই বাপ্পীকে মা -বাবা বসিয়ে দিলেন তবলা শিখতে। বাড়ির কড়া শাসনে তবলা বাজানো শিখলেও বিধির বিধান ছিল অন্য।
View this post on Instagram
অপরেশ ও বাঁশুরির পুত্র বাপ্পীর পছন্দ এলভিস প্রেসলি (Elbhis Presley)। বলিউডের প্রতি টান। ফলে মাত্র উনিশ বছর বয়সে বাপ্পী পাড়ি দিলেন তৎকালীন বম্বে। তাঁর প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা 1973 সালে ‘নানহা শিকারি’ ফিল্মে। তাঁর সুরে গান গাইলেন মুকেশ (Mukesh)। এরপরেই 1974 সালে তাঁর সুরে ‘দাদু’ ফিল্মে গাইলেন কিংবদন্তী লতা। বাপ্পী বুঝতে পারছিলেন, তিনিও পারেন। মুকেশ ও লতার মতো গায়ক-গায়িকাদের জন্য গান তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। আত্মবিশ্বাসী বাপ্পী এবার ভারতে নিয়ে এলেন আন্তর্জাতিক ডিস্কো বিটস। কিন্তু ভারতবাসী প্রথমেই নিতে পারেনি তাঁর আধুনিকতা। সমালোচিত হতে হয়েছিল তাঁকে। ধীরে ধীরে বাপ্পীর অন্য ধারার ডিস্কো সং হিট হতে শুরু করল। সঙ্গীতের ইতিহাসে বাপ্পীই প্রথম সুরকার যিনি বিদেশী গায়িকা সামান্থা ফক্স (Samantha Fox)-কে ভারতে নিয়ে এসে নিজের সুরে গান গাইয়েছিলেন। ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালকের সুর শুনে উচ্ছ্বসিত ছিলেন সামান্থাও। মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)-র বেশ কয়েকটি ফিল্মে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন বাপ্পী। প্রত্যেকটি সুপারহিট।
View this post on Instagram
সঙ্গীত পরিচালনার সঙ্গে আরও একটি শখ যুক্ত হয়েছিল, সোনার গয়না। বলিউডে বাপ্পীর মতো এত সোনার গয়না কেউ পরেননি। একটি পার্টিতে অভিনেতা রাজকুমার (Rajkumar) মজা করে বলেছিলেন, বাপ্পীর গলায় মঙ্গলসূত্র কই! প্রকৃতপক্ষে, বিদেশী গায়কদের পরনের সোনার গয়না বাপ্পীকে টানত। লড়াইয়ের দিনগুলিতে তিনি স্থির করেছিলেন, সফল হলে সোনার গয়না পরবেন। ফলে সফলতার সঙ্গেই পরা শুরু হল সোনার গয়না।
View this post on Instagram
কিন্তু একটা সকাল, কেড়ে নিল ‘ডিস্কো কিং’-কে। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই শরীর ভালো যাচ্ছিল না। সম্প্রতি প্রায় একমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও শরীরে মারাত্মক কষ্ট। আবারও হাসপাতালে ভর্তি হলেন। কিন্তু এবার আর ফিরলেন না। বুধবার ভোরে সবকিছু অতীত করে দিয়ে চলে গেলেন বাপ্পী।
View this post on Instagram