Pallavi Sharma: বাবার মৃত্যুর পর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সকলে, নিজের লড়াইয়ের গল্প বললেন পল্লবী
‘জোশ টকস’-এর মঞ্চে বিভিন্ন ক্ষেত্রের লড়াকু কূশীলবরা মন খুলে তাঁদের জীবনের কথা তুলে ধরেন। এই মঞ্চের মাধ্যমে তা পৌঁছে যায় সারা পৃথিবীর কাছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই এই মঞ্চে নিজের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন পল্লবী শর্মা (Pallavi Sharma), দর্শকদের কাছে যিনি জবা নামেই অধিক পরিচিত অন্যতম বিতর্কিত ধারাবাহিক ‘কে আপন কে পর’-এর দৌলতে। আপাতদৃষ্টিতে ঝাঁ চকচকে পল্লবীর জীবনের অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে একরাশ দুঃখ, নেতিবাচকতা।
ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় হঠাৎই পল্লবী জানতে পারেন, তাঁর মায়ের ব্রেন টিউমার হয়েছে। ছোট্ট পল্লবীকে পাশের বাড়ির প্রতিবেশিনীর কাছে রেখে পল্লবীর বাবা ও দাদা তাঁর মাকে নিয়ে চেন্নাই যান। ওই প্রতিবেশিনীকে পিসি বলে ডাকতেন পল্লবী। কিন্তু এরপর থেকে তাঁর মা বাড়ি ফিরে আসেননি। চেন্নাই-এ চিকিৎসার পর তাঁর মাকে মুম্বই ও পরে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। পল্লবী ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলেন। মায়ের স্থান না নিতে পারলেও প্রতিবেশিনী পিসি তাঁর ভালোবাসা ও যত্নের মাধ্যমে পল্লবীর মায়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করেছিলেন। পিসি একসময় অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সাথে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন পল্লবী। সেখানে এক পরিচালকের মনে হয়, পল্লবী অভিনয় জগতে আসার উপযুক্ত। তাঁর মাধ্যমেই সানন্দা টিভিতে সম্প্রচারিত ‘নদের নিমাই’ সিরিয়ালের মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় পল্লবীর।
View this post on Instagram
লাগাতার তিন মাস অভিনয়ের পর পল্লবী অভিনীত চরিত্রটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর আইসিএসই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পল্লবী। তবে পিসির কাছেই থাকতেন তিনি। কারণ তাঁর বাবা কাজের সূত্রে বাইরে থাকতেন। বাবার সাথেই থাকতেন দাদাও। কলকাতায় ফিরলে অন্তত একদিন করে পিসির বাড়িতে পল্লবীর সাথে দেখা করে যেতেন তাঁর বাবা। ক্লাস টেনের পরীক্ষার আগের দিন হঠাৎই পল্লবীর দাদার ফোন আসে, বাবা অসুস্থ, পল্লবী যেন একবার দেখা করে যান। পল্লবী দ্রুত বাবার কাছে পৌঁছে দেখেন, তাঁর বাবা খাটে শুয়ে আছেন। বাবা মেয়েকে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি ঠিক আছেন, পল্লবী যেন বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু রাতে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পল্লবীর বাবাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকাল সাতটায় প্রয়াত হন তিনি। সেদিন পল্লবীর পরীক্ষার প্রথম দিন ছিল। আত্মীয়রা পল্লবীকে পরীক্ষা দিতে যেতে বারণ করলেও তিনি শোনেননি। একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।
পরীক্ষা দিয়ে পল্লবী বাড়ি আসার পর তাঁর বাবাকে নিয়ে আসা হয়। এরপর হয় সৎকার। সেই সময় অন্য মা-বাবারা যখন পরীক্ষার হলের বাইরে তাঁদের সন্তানদের জন্য ডাবের জল নিয়ে অপেক্ষা করতেন, পল্লবী টিফিন বক্সে হবিষ্যি করে নিয়ে যেতেন খাওয়ার জন্য। এভাবেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। যথেষ্ট ভালো রেজাল্ট করেছিলেন পল্লবী। কিন্তু তাঁর আশেপাশের লোকজনদের মনে হল, অনাথ পল্লবীর বিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু পল্লবী পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি কালার্স বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘দুই পৃথিবী’-তে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। সিরিয়ালে কাজ করতে গিয়ে একাদশ শ্রেণীতে অ্যাডমিশন নিতে পারেননি পল্লবী। ফলে তিনি যখন কাজ ছেড়ে পড়াশোনার জগতে ফিরতে চান, তাঁকে বলা হয়, তা সম্ভব নয়। পল্লবীকে অপশন দেওয়া হয়, বিয়ে অথবা কাজ-এর। তিনি সকলের কাছে অচিরেই ভার হয়ে উঠেছিলেন কারণ তাঁর বাবা ছিলেন না। কিন্তু পল্লবী দুই বছর সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কলেজে উঠলে পার্ট টাইম কাজ করে তিনি নিজের খরচ চালাতে পারবেন।
ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার পর 2016 সালে ‘কে আপন কে পর’-এর অফার আসে পল্লবীর কাছে যা তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটিতে অ্যাডমিশন নেন পল্লবী। ‘কে আপন কে পর’ পাল্টে দেয় পল্লবীর জীবন। দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হন তিনি। এই ধারাবাহিকে অভিনয় করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পল্লবী নিজের ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি সেখানে একাই থাকেন। তিনি যোদ্ধা। একাকীত্ব তাঁর শক্তি। নিজের জন্য নিজে লড়াই করেছেন পল্লবী। জীবন তাঁর লড়াইয়ের মূল্য দিয়েছে।
View this post on Instagram