রবি কিষণ (Ravi Kishan) বর্তমান শুধুমাত্র সফল অভিনেতাই নন, তিনি একজন সাংসদ। তবে অভিনেতা-সাংসদ হয়ে ওঠার যাত্রাপথ কখনও সহজ ছিল না তাঁর জন্য। মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজের একটি চওলে জন্ম হয়েছিল রবি কিষণের। পিতৃদত্ত নাম রবীন্দ্র শ্যামনারায়ণ শুক্লা (Ravindra Shyamnarayan Shukla)। দশ বছর বয়সে পরিবারের সাথে রবি মুম্বই ছেড়ে চলে যান উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে তাঁদের পৈতৃক ভিটেয়। তিনি নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওই সময় তিনি তাঁর বাবাকে চাষ-আবাদের কাজে সাহায্য করতেন। কিন্তু রবির মন টিকছিল না। ফলে একসময় বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন রবি। সেই সময় তাঁর বয়স মাত্র সতের বছর। হাতে ছিল পাঁচশো টাকা। রবি জানিয়েছেন, জৌনপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে মাটির বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। যথেষ্ট দরিদ্র ছিল তাঁদের পরিবার। রবির বারবার মনে হত, মুম্বই ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেছিলেন তাঁর বাবা। ফলে পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করতেই আবারও মুম্বই আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রবি।
View this post on Instagram
কিন্তু তাঁর পরিবার রাজি ছিল না। ফলে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বই আসতে হয়েছিল রবিকে। মুম্বই এসে সান্তাক্রুজের চওলে নিজেদের পুরানো ঘরেই থাকতে শুরু করেন রবি। তাঁর বন্ধু হৃদয় শেঠি (Hriday Shetty)-র মাধ্যমে একজন ফিল্ম পরিচালকের সাথে রবির পরিচয় হয়। তিনি ‘পীতাম্বর’ নামে একটি বি গ্রেড ফিল্মে রবিকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এই ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty), রাজা মুরাদ (Raja Murad) প্রমুখ। এই ফিল্মে অভিনয় করে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন রবি। এরপর মুম্বইয়ের মাটিতে যথেষ্ট লড়াই করতে হয়েছিল তাঁকে।
ধারাবাহিকে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করতে করতেই আসে ভোজপুরি ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব। সেই সময় হিন্দি ধারাবাহিকের পাশাপাশি বলিউডের ফিল্মে পার্শ্ব চরিত্রে দেখা যেত রবিকে। 2003 সালে ‘সঁইয়া হামার’ ফিল্মের মাধ্যমে ভোজপুরি ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক ঘটে তাঁর। ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যখন রবির পায়ের তলার মাটি শক্ত হচ্ছে, সেই সময় তাঁর কাছে আসে ‘বিগ বস’-এর প্রস্তাব। 2006 সালে ‘বিগ বস’-এর প্রথম সিজনে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন রবি। সেকেন্ড রানার আপ হয়েছিলেন তিনি। এরপরেই ঘুরে যায় রবির কেরিয়ারের মোড়। ভোজপুরি ফিল্ম তো বটেই, বলিউড থেকেও রবির কাছে আসতে থাকে অজস্র কাজের প্রস্তাব। অভিনেতা-সাংসদ ছাড়াও বর্তমানে রবি একজন সফল ফিল্ম প্রযোজক। হিন্দি ও ভোজপুরি ছাড়াও দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্মে দেখা গিয়েছে তাঁকে। টেলিভিশন সঞ্চালকের ভূমিকাতেও রবি সমানভাবে সফল।
View this post on Instagram
বর্তমানে রবি ফিল্ম পিছু পারিশ্রমিক নেন পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। এছাড়াও সাংসদ-ভাতা হিসাবে দুই লক্ষ টাকা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান তিনি। রবির অফিস বিল্ডিংটি যথেষ্ট বিলাসবহুল। এর আনুমানিক মূল্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। রবির জৌনপুরের বাড়ির মূল্য দুই কোটি টাকা। মুম্বইয়ের বুকে এক কোটি ও দুই কোটি টাকা মূল্যের মোট ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। গ্যারাজে রয়েছে হার্লে ডেভিডসন সহ কয়েকটি দামি বাইক। এছাড়াও বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ সহ অনেকগুলি উন্নত ও বিলাসবহুল মডেলের গাড়ি রয়েছে রবির সংগ্রহে।