সঞ্জয় লীলা ভনশালী (sanjay leela bhansali) নির্মিত ‘দেবদাস বলিউড ফিল্মের একটি মাইলস্টোন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (sharatchandra chattopadhyay)-এর কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হলেও মূল গল্প থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছিল সঞ্জয়ের ‘দেবদাস’। এই ফিল্ম নিয়ে অজস্র বিতর্ক তৈরী হলেও ‘দেবদাস’-এর গান ‘ডোলা রে ডোলা’ যথেষ্ট বিখ্যাত হয়েছিল। এখনও অবধি বিভিন্ন ডান্স রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চে প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় আইকনিক এই গান। কিন্তু ‘ডোলা রে ডোলা’-র সঙ্গে নাচের সময় ঐশ্বর্য (Aishwarya Rai Bachchan) ও মাধুরী (Madhuri Dixit nene)-র যুগলবন্দী নজর কাড়লেও আড়ালে চলে গিয়েছিল বিশেষ কিছু সত্য।
‘ডোলা রে ডোলা’-র কোরিওগ্রাফার ছিলেন কিংবদন্তী ‘মাস্টারজী’ সরোজ খান (saroj khan)। পরবর্তীকালে ‘ডোলা রে ডোলা’-র কোরিওগ্রাফি প্রসঙ্গে সরোজ বলেছেন, মাধুরী ও ঐশ্বর্য দুজনেই খুব ভালো নৃত্যশিল্পী। কিন্তু দুজনের নাচের স্টাইল আলাদা হওয়ার কারণে সরোজকে কোরিওগ্রাফার হিসাবে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হত। ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানেন, সরোজ কতটা পারফেকশনিস্ট। ফলে ‘ডোলা রে ডোলা’-র এক একটি স্টেপ-এর অনেকগুলি রিটেক করাতেন ‘মাস্টারজী’। কিন্তু তাঁকে হয়তো এতটা পরিশ্রম করতে হত না, যদি ঐশ্বর্য তাঁর সঙ্গে কো-অপারেট করতেন। ঐশ্বর্য ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হলেও মাধুরী তাঁর সিনিয়র ছিলেন এবং সেই সময় তাঁর থেকে অনেক বেশি বিখ্যাত ছিলেন। কারণ একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, মাধুরীকে দেখার জন্য অধিকাংশ দর্শক ‘দেবদাস’ দেখতে গিয়েছিলেন। ফলে মূল গল্প থেকে সরে গিয়েছিল ‘হাউসফুল’ হয়েছিল ‘দেবদাস’-এর প্রতিটি শো। ঐশ্বর্য যখন জানতে পেরেছিলেন মাধুরীকে ‘দেবদাস’-এ চন্দ্রমুখীর চরিত্রে কাস্ট করা হয়েছে, তখন সঞ্জয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে ঐশ্বর্য ‘দেবদাস’ -এর অফার ছাড়েননি। কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে ছিল ‘ইগো’। মাধুরী সময়মত ‘ডোলা রে ডোলা’-র রিহার্সালে পৌঁছালেও ঐশ্বর্য তাঁর মেকআপ ভ্যানে বসে থাকতেন। ফলে মাধুরীকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হত ঐশ্বর্যর জন্য। একজন সিনিয়র আর্টিস্টের কাছে এই ঘটনা অপমানজনক হলেও প্রফেশনাল অভিনেত্রী মাধুরী কোনোদিন তা নিয়ে কোনও প্রতিবাদ করেননি।
এছাড়াও ঐশ্বর্যর ধারণা ছিল মাধুরী সরোজের যথেষ্ট কাছের মানুষ হওয়ার কারণে সরোজ হয়ত ‘ডোলা রে ডোলা’-য় মাধুরীকে হাইলাইট করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সরোজ তা করেননি। তিনি দুই নায়িকাকেই সমান ভাবে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ‘ডোলা রে ডোলা’-র ডান্স সিকোয়েন্সে ঐশ্বর্যর কানের দুল নিয়ে ঘটেছিল আরেক বিপত্তি। ঐশ্বর্যর কানের দুল এতটাই ভারী ছিল, সেই কারণে তাঁর কান দিয়ে রক্তপাত হতে শুরু করে। কিন্তু শেষ অবধি ঐশ্বর্য সমস্ত যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করে ‘ডোলা রে ডোলা’-য় নেচেছিলেন।
‘ডোলা রে ডোলা’-র থিম ছিল বাঙালির দুর্গাপুজো। সরোজ খান এই নাচের কোরিওগ্রাফিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন ভরতনাট্যম ও কথ্থক-এর সনাতন স্টাইল। অনবদ্য এই কোরিওগ্রাফির জন্য শ্রেষ্ঠ কোরিওগ্রাফার হিসাবে সরোজ তাঁর জীবনের অষ্টম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডটি পেয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে ‘ডোলা রে ডোলা’ সঞ্জয়, মাধুরী, ঐশ্বর্যর থেকেও বেশি সরোজের কাছের। ‘ডোলা রে ডোলা’ বলিউডকে আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছিল, বলিউডের ‘মাস্টারজী’ একজনই। তাঁর নাম সরোজ খান।