Hoop PlusTollywood

Lokesh Ghosh: জীবন জুড়ে শুধুই বিতর্ক, অভিনেতা লোকেশের কাহিনী চোখে জল আনবে

লোকেশ ঘোষ (Lokesh Ghosh) টলিউডে নায়ক হতে এসেছিলেন। তাঁর কেরিয়ার দিব্যি ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল। বিয়ে করেছিলেন অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)-র জ্যেষ্ঠ কন্যা চুমকি চৌধুরী (Chumki Chowdhury)-কে। সফলতার মুখ দেখার পরেই ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল লোকেশের ব্যবহার। চুমকির উপর অকথ্য অত্যাচার করতেন তিনি। ডুবে থাকতেন মদের নেশায়। একসময় চুমকির সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অঞ্জনবাবুও নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে বার করে দেন লোকেশকে। ধীরে ধীরে লোকেশের হাতে কাজের সংখ্যা কমতে থাকে। একাধিক নারীসঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। 2013 সালে শেষবার ‘ভগবানের মাথায় হাত’ ফিল্মে দেখা গিয়েছে লোকেশকে। সাম্প্রতিক কালে একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বেসুরো গান গেয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন লোকেশ। তবে এত বিতর্ক, আইনি জটিলতা সম্পর্কেও লোকেশ বুঝতে পারেন না, ইন্টারনেট ঘাঁটলেই তাঁকে নিয়ে কেন নেতিবাচক খবর লেখা হয়।

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন লোকেশ। মুম্বইয়ে বেড়ে উঠেছেন লোকেশ। তাঁর বাবা একসময় নামী প্রযোজক ছিলেন ও মা ছিলেন বিখ্যাত অভিনেত্রী। মুম্বই ও কলকাতা জুড়ে কাজ করেছেন তিনি। লোকেশ জানালেন, কলকাতার টেকনিশিয়ান’স স্টুডিও তাঁর বাবার তৈরি। তিনি মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) অভিনীত মোট বাইশটি ফিল্ম প্রযোজনা করেছেন। অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan)-এর তিনটি ফিল্মও প্রযোজনা করেছেন লোকেশের বাবা। সঞ্জীব কুমার (Sanjiv Kumar) ও শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore) অভিনীত ফিল্ম ‘চরিত্রহীন’-এর নির্মাতা ছিল তাঁর প্রযোজনা সংস্থা। তাঁর শেষ প্রযোজিত ফিল্ম ‘ঝুটি’। দার্জিলিঙে সেন্ট পলস থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন লোকেশ। সেই সময় তাঁর বাবা আবারও নতুন করে প্রযোজনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। লোকেশ তাঁর বাবার কাছেই সহকারী পরিচালক হিষাবে কাজ শিখতে শুরু করেন।

তবে হঠাৎই ব্যক্তিগত কারণে লোকেশ কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় এসে তিনি লরির দালালি করে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন। পাশাপাশি বিজয় রায় (Bijoy Ray)-এর সাথে লোকেশ বিভিন্ন স্টুডিওয় যেতেন। কিন্তু তাঁর বাবা কলকাতার প্রযোজক -পরিচালকদের ফোন করে বলতেন ছেলেকে কাজ না দিতে। কারণ লোকেশের সাথে তাঁর বাবার ইগোর লড়াই ছিল। ফলে লোকেশ চেয়েছিলেন তাঁর নিজের চেষ্টায় কিছু করতে। সুযোগ দিলেন অঞ্জন চৌধুরী। তিনি লোকেশের বাবাকে চিনতেন। ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’ ফিল্মে চুমকির বিপরীতে নায়কের চরিত্রে লোকেশকে সিলেক্ট করেছিলেন অঞ্জনবাবু। কিন্তু এর মধ্যেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়ার ফলে অঞ্জনবাবু নির্মিত আরও একটি ফিল্ম ‘মুখ্যমন্ত্রী’-তে নায়কের চরিত্রে সুযোগ পেলেন লোকেশ। এরপর থেকে 2004 সাল অবধি প্রচুর কাজ করেছেন বলে দাবি লোকেশের। কিন্তু ওই বছরের একুশে জুলাই প্রয়াত হন তাঁর বাবা। বাবার শেষকৃত্য করতে মুম্বই পৌঁছে লোকেশ জানতে পারেন, তাঁর দিদি বাবার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। এরপর তিন-চার বছর মুম্বইয়ে ছিলেন লোকেশ। তবে কেন ছিলেন তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

এরপর মুম্বই থেকে কলকাতায় ফিরে লোকেশ দেখেন, তাঁর পরিবর্তে এসে গিয়েছে প্রচুর নতুন মুখ। তাঁর সময়ের নায়করাও যথেষ্ট সক্রিয়। কিন্তু লোকেশের পায়ের তলার মাটি আর শক্ত নেই। এরপর ‘বেজন্মা’ নামে একটি বাংলা ফিল্মে লোকেশ অভিনয় করলেও তা ফ্লপ করে। অভিনয় করেছিলেন ‘লোফার 2’-তেও। কিন্তু এই ফিল্মটি রিলিজ করতে আগ্রহী ছিলেন না নির্মাতারা। 2013 সালের শেষে লোকেশ দার্জিলিঙে চলে যান। সেখানে হোটেল চালাতে শুরু করেন লোকেশ। কিন্তু কিছু পর্যটক তাঁকে চিনে ফেলেন। অনেকেই তাঁর হোটেল চালানোর খবর শুনে ও তা স্বচক্ষে দেখে অবাক হয়ে যান। ফলে দার্জিলিঙ থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন লোকেশ। অর্থ যোগাড় করে ‘লোফার 2’ ফিল্মটি কিনে নিয়ে 2018 সালে রিলিজ করেন তিনি। কিন্তু ত্রিশ লক্ষ টাকার লোকসান হয় তাঁর। কারণ সেই সময় একই সাথে রিলিজ করেছিল ‘বাহুবলী : দ্য কনক্লুশন’।

এরপর লোকেশ ‘লাভগুরু’ নামে একটি ফিল্ম প্রযোজনা করেন। কিন্তু এই ফিল্মের শুটিং শুরু ছয় দিনের মাথায় দেশ জুড়ে শুরু হয় লকডাউন। লকডাউনের সময় প্রয়াত হন ‘লাভগুরু’-র পরিচালক আশীষ মিত্র (Ashish Mitra)। লোকেশ প্রায় সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। লকডাউনের পর সোমনাথ (Shomnath) পরিচালিত ফিল্ম ‘পিকলু’-এ একদম অন্যরকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন লোকেশ। বর্তমানে এই ফিল্মের এডিট চলছে। এছাড়াও ‘লোফার সিরিজ’ নামে একটি সিরিজে অভিনয় করছেন লোকেশ। অপরদিকে চলতি বছরের পুজোর পর শুরু হতে চলেছে তাঁর নতুন ফিল্ম ‘কিডন্যাপ’-এর শুটিং। আরও কয়েকটি ফিল্মের কাজ শুরু হবে বলে জানালেন লোকেশ।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Lokesh Ghosh (@lokeshghosh24)

তবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের হারিয়ে যাওয়া জমি আজও ফিরে পাননি লোকেশ। নিজেকে একটু ‘মুডি’ বলেও মনে করেন লোকেশ। কারণ তাঁর জীবনে এসেছে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত। লোকেশের দাবি, যাঁদের তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁরা মিষ্টি কথা বলে তাঁর পিছনে ছুরি মেরেছেন। ভোজপুরি ফিল্মের প্রস্তাব পেয়েছিলেন লোকেশ। কিন্তু সেই সময় নামী প্রযোজনা সংস্থার তরফে একটি বাংলা ফিল্মের প্রস্তাব এসেছিল তাঁর কাছে। ফলে ভোজপুরি ফিল্মের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি তিনি। এই ফিল্মে পরে খেসারিলাল যাদব (Kheshari lal Yadav)-কে নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলা ফিল্মটি থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল লোকেশকে। ওটিটিতে পা রাখতে চান না লোকেশ। কারণ তাঁর মনে হয়, ওয়েব সিরিজগুলি পর্ণোগ্রাফি ছাড়া আর কিছুই নয়। লোকেশ মনে করেন, তিনি বাংলার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। ফলে মাচা শো করতে পছন্দ করেন তিনি। কারণ লোকেশের মতে, দিনের শেষে দর্শকরাই ভগবান।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Lokesh Ghosh (@lokeshghosh24)

Related Articles