একসময় নিজের চেহারা নিয়ে শুনতে হয়েছিল অনেক কটূক্তি, যা আত্মবিশ্বাস ভাঙ্গার পর্যায়ে চলে যায়, তাও নিজেকে হারতে দেননি তিনি, নিজের আত্মবিশ্বাসকে ফিরিয়ে আনতে সবরকম প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। কোনও সময়ে তিনি ডার্টি পিকচারের সিল্ক চরিত্রে, কোনও সময়ে তাঁর কিসমাত কানেকশন জড়িয়েছে অভিনেতা শহিদ কাপুরের প্রেমে, আবার কোনও সময়ে রাজনর্তকীর বেশে, আবার তিনি পরিণীতা। বলিউডে পা রাখতে তাকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক কিছু। হাল ছাড়তে তিনি মোটেও পক্ষপাতী নন, তাই তো তিনি আজ বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একটি জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিদ্যা বালন। তবে জানেন কি তাঁর জীবনের নানান দিকগুলি! আজ সেই প্রসঙ্গেই অনেক কথা জানাব আপনাদের!
তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান বিদ্যা, তাঁর শৈশব কেটেছে মুম্বইয়ের চেম্বুরে। ছোটবেলা থেকেই বাবার কড়া শাসনে তিনি বড় হয়েছেন। ছোট থেকেই বিদ্যার ইচ্ছে ছিল বলিউডের অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু যা হয় তাঁর এই স্বপ্নে বাঁধ সাধে তাঁর পড়াশোনা। কেননা তাঁর পরিবার ছিল রক্ষণশীল। কলেজে পৌঁছেই তিনি তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হন। কয়েকটি অডিশনের পর একটি ধারাবাহিকে মনোনীত হলেও তা বেশিদিন চলে না, মাত্র অল্প কয়েক দিনেই থমকে যায় সেই ধারাবাহিক। তারপর তিনি সুযোগ পান একতা কপূরের ‘হম পানচ’-এ। অভিনেত্রী অমিতা নাঙ্গিয়া সেই ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে থাকলেও তিনি কাজটি বেশি দূর করতে পারেনি তাই তাঁর জায়গায় রাধিকা মাথুরের ভূমিকায় অভিনয় করেন বিদ্যা। সেই সময়ে একতা-বিদ্যা সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। এমনটাও শোনা গিয়েছিল যে একতা তাঁর ভাই তুষারের সঙ্গে বিদ্যার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
কিন্তু সেই ধারাবাহিকও বেশিদিন না টেকায় অহেতুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁর হাত খরচ চলত। শেষমেশ মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে I তিনি সোশ্যিয়োলজিতে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন। এরপর অনেক দক্ষিণী ছবিতে তিনি সাইন করেন কিন্তু তা সফল হয়নি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘চক্রম’ যেখানে তাঁকে মনোনীত করেই মাঝপথে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদিও বেশিদিন চলেনি। এই দক্ষিণী ছবির কাজ তাই এর জন্যে বিদ্যাকে ‘অপয়া’ উপাধি নিতে হয়েছিল। চক্রম’-এর সুবাদে বারোটি ছবিতে তিনি সুযোগ পেলেও অপয়া’ উপাধির জন্য তাঁকে সব ছবি হারাতে হয়। এরপর হতাশা হয়ে বিদ্যা নিজেকে সবকিছুর থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও পরবর্তীকালে বাংলা ছবিতে অভিনয়ের পথ বেছে নেন তিনি। এমনকি তাঁর একটি বাংলা ছবি খুব সফল হয়। এরপর তিনি সুযোগ পান প্রদীপ সরকারের ছবি ‘পরিণীতা’। তবে পরিণীতা করার জন্য তাকে অনেকবার স্ক্রিন টেস্ট দিতে হয়েছিল। এই ছবি প্রচণ্ড সাফল্য পায়। তারপরেই থেকেই তিনি বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতাদের বিপরীতে কাজ করার সুযোগ পেতে থাকে।
‘গুরু’, বেবি’ এবং ‘কিসমত কানেকশন’ এর মতন ছবিতে তিনি নায়িকার চরিত্রে কাজ করেন। তবে কিসমত কানেকশন ছবির সেটের বাইরে তাঁকে ভারী, মোটা চেহারা ও ফ্যাশন নিয়ে অনেক কটূক্তি করা হয়। তবে শোনা গিয়েছিল এই সময়ে অভিনেতা শহিদ কাপুরের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক হয়। তবে পরে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। তবে শাহিদের নাম না করেই বিদ্যা বলেছিলেন, সে সময় তাঁর বয়ফ্রেন্ডও তাঁর চেহারা ও পোশাক নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন। পরে অবশ্য বিদ্যা নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের জন্য শাড়ি লুকে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করতে উদ্যত হন। সেইমতই বলিউডে তাঁর খ্যাতি হয়েছিল ‘রেখার পরে বিদ্যাকেই শাড়িতে এত সুন্দর লাগে’ এই ভাবমূর্তিতে। কিন্তু বিদ্যা তাঁর সব ইমেজ ভেঙে দিয়ে ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য । সিল্ক স্মিতার ভূমিকায় তিনি ধরা দিলেন ছকভাঙা অভিনয়ে। এই ছবির জন্য নিজের বাড়িয়ে ফেলেন, সিল্ক চরিত্রে অভিনয় করে কাঁপিয়ে দেন সকল দর্শকদের। বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার এই ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তবে ছবি কম বাজেট হলেও বিদ্যা সবসময় গুরুত্ব দেন চিত্রনাট্যের উপরে তাই তিনি ‘কাহানী’ ছবিতে নিজের অভিনয়ের পরিচয় দিয়েছিলেন।
সাফল্যের শিখরে ওঠার আগেই পরিচালক করণ জোহারের পার্টিতে দেখেই বিদ্যাকে পছন্দ করে নেন প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায় কপূর। মাত্র কয়েকদিনের প্রেমের সম্পর্কে বিদ্যা রাজি হয়ে যার সিদ্ধার্থ রায় কাপূরের তৃতীয় স্ত্রী হওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যক্তি সিদ্ধার্থকে চেনার পরে তাঁর কোনও দ্বিধা থাকে না এই বিষয়ে। তবে এখন বিয়ের পরে কাজ কমিয়ে দেন বিদ্যা। তাঁর যুক্তি ছিল, দীর্ঘদিন পরিশ্রমের পরে এবার ঘর সংসারে মন দেবেন তিনি। প্রচুর ছবির সুযোগ পেলেও আপাততঃ বিজ্ঞাপনেই মন রয়েছে তাঁর। তবে তাঁর কথায় ‘তিনি শুধু স্ক্রিপ্টের জন্যই অভিনয় করেন তা নয়, তাঁকে ভেবেই গল্প লেখা হয়। আগামী দিনেও তিনি সকল অনুরাগীদের মন এভাবেই জয় করবেন।