whatsapp channel

গোপনাঙ্গে দেওয়া হয় লঙ্কাগুঁড়ো, তবু ইংরেজদের সামনে মুখ খোলেননি মহীয়সী নারী ননীবালা

ইতিহাস বইয়ের পাতা উল্টালেই বিপ্লবীদের নাম এখনো জ্বলজ্বল করে। ক্ষুদিরাম বসু, সূর্যসেন, বিনয়-বাদল-দীনেশ আরো কয়েক দল নক্ষত্রের নামের পাশাপাশি মহিলাদের নামও দেখা যায়। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা যাদের মধ্যে ছিলেন…

Avatar

HoopHaap Digital Media

ইতিহাস বইয়ের পাতা উল্টালেই বিপ্লবীদের নাম এখনো জ্বলজ্বল করে। ক্ষুদিরাম বসু, সূর্যসেন, বিনয়-বাদল-দীনেশ আরো কয়েক দল নক্ষত্রের নামের পাশাপাশি মহিলাদের নামও দেখা যায়। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা যাদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। কিন্তু যে মানুষটির নাম ইতিহাসের পাতায় খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। তিনি হলেন বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা।

যার গল্প পড়লে এখনও শিউরে উঠতে হয়। মানুষটার উপর হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার। তবুও তার মুখ দিয়ে কোন রকম কথা বার করতে পারেনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। বাংলার দামাল ছেলেদের নাম ফলাও করে ইতিহাসের পাতায় থাকলেও আজও ইতিহাসে ঠাঁই পায়নি এই সাহসী মহিলার নাম। যা খুবই দুঃখজনক। মুখ থেকে একটা টু শব্দ তিনি বার করেননি। যাকে বলে তার থেকে মুখ থেকে কথা বের করতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশের। তাও তিনি দাঁতে দাঁত চেপে শেষ দিন পর্যন্ত থেকে গিয়েছিলেন।

জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাওড়া জেলার বালিতে। যে বয়সে মেয়েরা হেসে খেলে বেড়ায়, সেই বয়সে অর্থাৎ মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তার জীবনে নেমে এসেছিল বৈধব্য যোগ। ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করবেন। কিন্তু রক্ষণশীল বাবা তাকে তা করতে দেয়নি। সে যুগে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হলে সমাজের অনেকাংশের সমস্যা হয়ে যাবে। তবে শুধুমাত্র সে যুগে কেন বর্তমানেও মেয়েরা যদি শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, তাহলে কোথাও যেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তাদেরকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। অত দিন আগেও দমে যাননি তিনি। বিধবা হওয়ার পর পিতৃগৃহ থেকে বেরিয়ে এসে ভর্তি হয়েছিলেন আড়িয়াদহ মিশনে। যেখানে যুগান্তর দলের বিখ্যাত বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ননীবালা দেবীর ভাইপো ছিলেন। তার হাতেই তার প্রথম বিপ্লবী স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষা লাভ। শুরুটা হয়েছিল সেখান থেকেই।

১৯১৫ সালে জেলে বন্দি রয়েছেন রাম চন্দ্র মজুমদার, তার কাছে রয়েছে সমস্ত গোপন তথ্য। তার কাছ থেকে খবর নিয়ে আসতে পারলে বিপ্লবীরা নতুন করে পরিকল্পনা করবেন। কিন্তু এই বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে অর্থাৎ তার কাছে গিয়ে গুপ্ত খবর আনবে কে? সামনে এগিয়ে এলেন ননীবালা। রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে ঢুকলেন আলিপুর জেলে সমস্ত খবর নিয়ে সন্তর্পনে। কাকপক্ষী কেউ টের পেলনা।

চন্দননগরে থাকাকালীন পুলিশের তাড়া খেয়ে বিপ্লবী আশ্রয় নিয়েছিল তার গৃহে। পুলিশ দরজায় ধাক্কা দিতে এক অবলা নারী ননীবালা। মুখ দেখে বুঝতে পারেননি যে তার মধ্যে রয়েছে বিপ্লবের আগুন। সেদিন শেষ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলেন সেই বিপ্লবী। ভিতরে ছিল ছাইচাপা আগুন। যা উপর থেকে দেখা যেত না, কিন্ত এই আগুন নিভে যাওয়ার নয়। তার উপরে চলেছিল ভয়ংকরভাবে পুলিশি তল্লাশি। তাও এতটুকুও ভয় বুক কাঁপেনি সাহসী মহিলার।

তবে এর মাঝে হঠাৎই তিনি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। যেইনা খবর পাওয়া সেইমাত্র পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করলেও, শারীরিকভাবে দুর্বল ননীবালার ঠাঁই হলো বেনারস জেলে। শুরু হয়, ননীবালার উপরে অকথ্য অত্যাচার শুরু হয়। গোপনাঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয় লঙ্কাগুঁড়ো। কিন্তু তার মুখ দিয়ে একটা কথা বার করতে পারেনি। লঙ্কাগুঁড়ো জ্বালায় ছটফট করেছেন কিন্তু মুখ দিয়ে কোনরকম কথা বের করেননি তিনি। তারিখ সাহসিকতা একগুঁয়ে জেদি মনোভাবের কাছে হার মেনে ছিল ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাকে পাঠানো হয় প্রেসিডেন্সি জেলে।

অবশেষে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে যখন সমস্ত রাজবন্দীদের ছাড়া দেওয়া হয়, তখন ননীবালাও ছাড়পান। জীবনের শেষ দিন থাকতে চেয়েছিলেন বাপের বাড়িতে, কিন্তু বাপের বাড়িতে তাকে কেউ নিতে চাননি। তারপর রোগব্যাধিতে জর্জরিত, একাকী মহিলার একেবারে নিঃসঙ্গ জীবন কাটতে থাকে। সরকারি পেনশন যখন পৌঁছে ছিল তখন সব শেষ হয়ে গেছে।

ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই যখন বিপ্লবীদের ক্ষেত্র পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিত্রটা চোখে পড়ে তখন, দেখে মনে হয়, যে আধুনিক সমাজের আর কি ভুল আছে, যেখানে এই সমস্ত নারীরা-পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য এতোখানি অবদান রেখে গেছেন, তাদেরই যখন ঠাঁই হয়না, তখন বর্তমানের আধুনিক সমাজের নারীরা তো কোন ছাড়। সমাজ ভুলে গেছে ননীবালাকে। কিন্তু তার মতো নারী’রা না থাকলেও স্বাধীনতাটা এতটা সহজে আসতনা, একথাও স্বীকার করতে হবে সমাজকে।

whatsapp logo
Avatar
HoopHaap Digital Media