2020 সাল থেকে বিনোদন জগত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বহুদিন কাজ বন্ধ ছিল। এই মুহূর্তে বাংলা ফিল্ম রিলিজ করলেও প্রযোজক ও পরিচালকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত অনুরাগীদের অনুরোধ করছেন তা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার জন্য। অপরদিকে সমগ্র ভারত চিন্তিত করোনার চতুর্থ ওয়েভ নিয়ে। সব মিলিয়ে আপাতদৃষ্টিতে কিছু বোঝা না গেলেও পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্গীন। এর মধ্যেই মে দিবসে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উপর নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় (Tathagata Mukhopadhyay)।
2022 সালে একাধিক বাংলা ফিল্ম মুক্তি পেলেও এখনও অবধি বক্স অফিসে চূড়ান্ত সফলতা পেয়েছে ‘টনিক’। উপরন্তু প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রযোজক ও পরিচালকদের অনুরোধ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বাংলা ফিল্ম দেখার। অথচ বলিউড বা দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু কেউ এই ধরনের অনুরোধ করছেন না। এর আগে গত রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রযোজক ও পরিচালকদের এই ধরনের অনুরোধের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty)। এই রবিবার প্রতিবাদ করলেন তথাগত। তিনি প্রশ্ন তুললেন, বাংলা ফিল্মের মান খারাপ হলেও তার পাশে দাঁড়াতে হবে কেন! এই ঘটনাকে সমাজ সেবার সঙ্গে তুলনা করেছেন তথাগত। তথাগতর পোস্টটি বিদ্রুপাত্মক ও দীর্ঘ।
নিজের একটি ছবি শেয়ার করে তথাগত লিখেছেন, তিনি ভয়ঙ্কর রেগে আছেন কেউ বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াচ্ছেন না দেখে। সিনেমা কোনো বিনোদনমূলক মাধ্যম নয়, এটা সর্বৈব সমাজকল্যাণমূলক কাজ। তাই পেঁয়াজ না খেয়ে, এসি বন্ধ করে, পেট্রল ছেড়ে সাইকেল চালিয়ে বাংলা ফিল্মকে বাঁচিয়ে রাখা তাঁদের আশু কর্তব্য। প্রেক্ষাগৃহে জাতীয় সঙ্গীত চালানোর সময় যেভাবে উঠে দাঁড়ানোর জন্য জোরাজুরি চলে, তার সাথে বাংলা ফিল্ম দেখানোকেও তুলনা করলেন তথাগত। মজা করে তিনি বললেন, হিন্দি, দক্ষিণী অথবা বিদেশি ফিল্ম দেখতে ইচ্ছা করলেও সেই ইচ্ছাকে দমন করে বাংলা ফিল্ম দেখতে হবে!
তথাগতর মতে, দিনের পর দিন পড়ছে বাংলা ফিল্মের মান। তথাগত লিখেছেন, বাংলা ফিল্ম যত জঘন্য, যত খারাপ। 2022 সালে টেকনিক্যালি যত দুর্বল, গল্পের বিষয়বস্তু যতই 1955 সালের হোক না কেন, তা দেখতেই হবে। নইলে করণ জোহর (Karan Johar)-এর থিওরি অফ নেপোটিজম ভুল প্রমাণিত হয়ে যাবে। তথাগত মনে করেন, খারাপ ফিল্ম হচ্ছে, তাই লোকে দেখছে না। কিন্তু বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দর্শকদের মতামতকে অপপ্রচার হিসাবে গণ্য করছে। এমনকি অধিকাংশ ফিল্মে সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)-কে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানোর ঘটনাকেও কটাক্ষ করে তথাগত লিখেছেন, ওটাই সবথেকে পুরানো ও বিশ্বস্ত দেওয়াল। যাতে যখন তখন …. লেখার পর ‘হ্যাপি লেবার ডে’ লিখেছেন তথাগত। তাঁর মতে, পাশে দাঁড়ানোটাও একটা লেবার।
পরিশেষে বলতেই হবে, লেবার ডে অর্থাৎ শ্রমিক দিবস কিন্তু মোটেও ‘হ্যাপি’ নয়। অন্তত ইতিহাস ঘাঁটলে এই দিনটি মোটেও আনন্দময় অথবা সুখকর নয়। উপরন্তু এটাও বোঝা দরকার, সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করলেই সব বদলে যাবে না। একজোট হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কারণ প্রত্যেকেই একই পরিস্থিতির শিকার। সময়মতো ঘুরে না দাঁড়ালে মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) পরবর্তী পরিস্থিতির আর বেশি বাকি নেই। আর কিছু লেখার দরকার নেই। বুদ্ধিমানদের জন্য সামান্য এই লেখাটুকুই যথেষ্ট।