Hoop Story

শনিদেবের কৃপায় একটিও বাড়িতে নেই দরজা, ব্যাংকে নেই তালা, জানুন অদ্ভুত এই গ্রামের রহস্য

এই গ্রামে কোনোদিন চুরি হয়নি। গ্রামবাসীরা 'চুরি' শব্দটির মানেই জানেন না।

যে সময়টা দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের দরকারি জিনিসপত্রকে সাবধানে রাখতে ভীষণ তৎপর হয়ে উঠছি, সেই সময় ভারতবর্ষে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে গ্রামের কোনো বাড়িতে ঘরের দরজা নেই। ব্যাংকে, মন্দিরে কোথাও তালা নেই। তবে তো আপনার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এই গ্রামে তাহলে গ্রামেতে চোরেদের সংখ্যা অনেক বেশি। একেবারে নির্দ্বিধায় চুরি করতে অনেকটাই সুবিধা হবে। কিন্তু না, একেবারেই না, দরজা নেই বলে যে প্রচুর সংখ্যক চুরি হয় তাও নয়। এই গ্রামে কোনোদিন চুরি হয়নি। গ্রামবাসীরা ‘চুরি’ শব্দটির মানেই জানেন না।

ভারতের মহারাষ্ট্রের ‘শনি সিঙ্গাপুর’ নামে গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শনি দেবতার নাম। আহমেদনগর থেকে গ্রামটি দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। একবার গ্রামে কালো রঙের একটি পাথর পাওয়া গিয়েছিল। হঠাৎ করেই এত বিশাল পাথর দেখে গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা অজানা কৌতুহল জেগে ওঠে। অনেকেই ভাবতে থাকেন, এটা নদী থেকে স্বাভাবিকভাবে কোন কারনে ভেসে উঠে এসেছে। আবার কেউ কেউ ভাবেন, এটার মধ্যে কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে। যখন পাথরটি দেখে এমন আলাপ-আলোচনা চলছে সেই মুহুর্তে একজন পাথরের গায়ে লাঠি দিয়ে স্পর্শ করতে পাথর থেকে বেরিয়ে পড়ল রক্তের বন্যা। গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে চারিদিকে ছুটতে লাগলেন। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এরকম করতে করতে রাত পার হলো। সবাই যখন ঘুমে কাদা তখন গ্রামের সবার কাছে স্বপ্নে এলেন শনি দেবতা। তিনি স্বপ্নে বললেন তার এই মুহূর্তে থেকে সংরক্ষণ করতে হবে আর গ্রামের কেউ যেন ঘরের দরজা না লাগায়। কারণ এই পুরো গ্রামবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন শনি দেবতা। কেউ যদি তার কথা অমান্য করে দরজা লাগায় তাহলে তার চরম বিপদ ঘটবে। সকালবেলা গ্রামবাসীরা ঘুম থেকে ওঠার পরে দেখলেন সেই পাথর থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে। তারপর শনি দেবতার কথা অনুযায়ী, শনি মন্দির তৈরি করা হয়।

মনে করা হয়, ভারতবর্ষের এটি সর্ববৃহৎ শনি মন্দির। এই গ্রামের ঘরে কোনো দরজা নেই। শুধুমাত্র ঘর ই নয়, অফিস, দোকান, ব্যাংক সমস্ত কিছুতেই দরজা নেই। এমনভাবে দরজা খুলে রেখেই তারা এদিক ওদিক চলে যান। সবচেয়ে মজার কথা, গ্রামটির পাবলিক টয়লেট এও দরজা দেখা যায়না। শনি দেবতার আশীর্বাদে এই গ্রামের দুঃখ-দুর্দশার সমস্ত দূর হয়ে যায়। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, যদি চোর কখনো চুরি করতে আসে, তাহলে শনি দেবতার কোপে তিনি মারা যাবেন বা চরম ক্ষতির শিকার হবেন। কথিত আছে, একবার এক লোক নিজের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির অজুহাতে ঘরের দরজা তৈরি করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, মর্মান্তিক এক রোড অ্যাকসিডেন্টে পরের দিন সকালেই সেই মানুষ মারা যান।

Related Articles