ভারতবর্ষের ইতিহাসে মহিলার নামে প্রথম রেলস্টেশন, তাও খোদ বাংলার বুকে, কে এই বেলা বোস!
‘চুপ করে কেন একি বেলা তুমি কাঁদছো’, সদ্য চাকরি পাওয়া এক যুবক ফোন করে তার প্রেমিকাকে বলছে ‘সম্বন্ধটা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো, মাকে বলে দাও বিয়ে তুমি করছনা’। অনেকদিন ধরে প্রেম করার পরে তারপরে যখন চাকরিটা পাকাপোক্ত হয়, তখন সম্পর্কের ভীতটা খানিকটা শক্তপোক্ত হয়। বেলা বোস গানটি একসময় তরুণ মনে আলোড়ন তুলেছিল। আর সেই গানের রেশ এখনো বাঙালি ভুলতে পারিনি। বেলা বোসকে চিনে রেখেছে সবাই। বেলা বোসের ফোন নাম্বারটাও সকলের মুখস্থ আছে তো?
তবে আজকে আমাদের গল্পের নায়িকা অঞ্জন দত্তের গানের বেলা বোস নয়, এই নায়িকাও একসময় সমাজে তোলপাড় করেছিলেন যার জন্য তার নামে নামাঙ্কিত ভারতবর্ষের প্রথম কোনো মহিলার নামের রেলস্টেশন ‘বেলানগর’। তার নামও বেলা বোস মিত্র। মহান ব্যক্তিদের নাম নিয়ে রেলস্টেশন হওয়ার ঘটনা এর আগেও দেখা গেছে। ধরে নেওয়া যাক বিধান নগর অথবা নন্দকুমার অথবা কৃষ্ণনগর। তবে এই রেল স্টেশন গুলির মধ্যে একটি বিশেষ মিল আছে, যেখানে দেখা যায় মহীয়সী ব্যক্তিত্বরা প্রত্যেকেই হলেন পুরুষ। তবে বেলানগর স্টেশনটির নামকরণ হয়েছিল বেলা বোস মিত্রের নামে।
তার গায়ে বইছে বিপ্লবীর রক্ত। তিনি হলেন নেতাজির সেজদা সুরেশ চন্দ্র বসুর কনিষ্ঠ কন্যা। ১৯২০ সালে কোদালিয়ার গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। তারপর ১৯৪০ সালে রামগড়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশন পরিত্যাগ করে নেতাজি যে আপোষ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন সেখানে নারী বাহিনীর প্রধান ছিলেন বেলা বোস। পরবর্তীকালে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর গুপ্তচর বিভাগের প্রধান হরিদাস মিত্রের তার সাথে বিয়ে হয় বেলা বোসের। নেতাজি পূর্ব এশিয়া থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর যে সমস্ত দলগুলিকে প্রেরণ করতেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নিরাপদে অবতরণ করানোর দায়িত্ব ছিল এই বেলার ওপরে।
পরবর্তীকালে বেলা বোস মিত্র ‘ঝাঁসির রানী’ নামে এক সেবা দল গঠন করেন। তারপরে আস্তে আস্তে বালি – ডানকুনির কাছে অভয়নগরে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন। ভীষণ পরিশ্রম করার ফলে তার শরীর আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করে। পরবর্তীকালে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে আরেকটি বিষয়ও আমাদের কাছে হয়তো অজানা তিনি হলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মা। তবে এখানেই শেষ নয়, বেলা বোস ‘ঝাঁসির রানী’ সমিতি গড়ে তোলেন। তবে তার নামে যে শুধু একটি রেল স্টেশনে আছে তাই নয়, কল্যাণী শহরে একটি কলোনি আছে বেলা বোসের নামে। গয়েশপুরে একটি স্কুল আছে তার নামে।