Tourism: দীঘা-পুরী আর নয়, সপ্তাহান্তে ঘুরে আসুন ছবির মতো সুন্দর এই গ্রাম থেকে
“কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে।”- শীত পড়তে না পড়তেই মনে হচ্ছে তো ব্যাগ গুছিয়ে একেবারে পৌঁছে যাই কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে শহরের কোন কোলাহল আপনাকে ছুঁতে পারবে না সমস্ত মানসিক সমস্যাকে কাটিয়ে আপনি সেখানে ছুটে চলে যেতে পারবেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো, তাহলে আর দেরি কেন? তবে বেড়াতে যেতে চাইলে অনেকেই এই তিন জায়গার কথা ভেবে ফেলেন, তা হল বাঙালি চিরাচরিত ভ্রমণস্থল দীঘা, পুরী, দার্জিলিং। কিন্তু দী-পু-দা যেতে আর ভালো লাগছে না? মন বলছে একটুখানি পাহাড় দেখলে ভালো হয়, কিন্তু অফিস থেকে খুব বেশি ছুটি পাওয়া যায়নি? এত কিছু যদি একসঙ্গে মেনে নিতে হয় তাহলে দার্জিলিং নয়, দার্জিলিংয়ের খুব কাছে একটি অসাধারণ ডিস্টিনেশন শুখিয়াপোখরি থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
অনেক সময় এক জায়গায় যেতে যেতে মনটা যেন কেমন উদাস হয়ে পড়ে, রাস্তাঘাটগুলো সব চেনা চেনা হয়ে যায় বর্তমানে দীঘা, পুরী, দার্জিলিং রীতিমতো পাড়ার মতন হয়ে গেছে। এত ভিড়ভাট্টা অনেক সময় ভালো লাগেনা, তবে অল্প ছুটি, ছাঁটার জন্য এই জায়গা গুলো মন্দ না কিন্তু এবার থেকে লিস্টে যোগ করে নিন এই অসাধারণ প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম শুখিয়াপোখরি। এই গ্রামটি থেকে খুব সুন্দর ভাবে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পারবেন। যারা একা বেড়াতে যেতে ভালবাসেন তারা অনায়াসে এই জায়গাটিকে বেছে নিতে পারেন। পাহাড়কে সামনে রেখে একাকীত্বকে অনুভব করতে মন্দ লাগবে না।
শুখিয়াপোখরি একটি অত্যন্ত ছোট্ট গ্রাম। পাহাড়ের মাঝে এমন ছোট গ্রাম আপনি আর পাঁচটা দেখতে পাবেন না। দার্জিলিং থেকে ১৮ কিলোমিটারের দূরে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি প্রায় ৭১৯৮ ফুট উঁচুতে। বসন্তকালে এখানে রডোডেনড্রন হয়, আপনি যদি বসন্তে যেতে চান তাহলে গিয়ে রডোডেনড্রন দেখতে পাবেন। এছাড়াও স্থানীয় ফুল হেমলক, ম্যাগনেলিয়া ইত্যাদি তো দেখতেই পাওয়া যায়। তবে এই বর্তমানে এই জায়গাটি অধিকতর মানুষের কাছে বেশি ভালোবাসা জায়গায় পরিণত হয়েছে, তার কারণ হলো গুরসে ফরেস্ট রিসোর্ট এর জন্য।
মানেভঞ্জন বা মিরিক যাওয়ার পথে পড়ে এই অসাধারণ প্রত্যন্ত গ্রামটি। শুখিয়াপোখরি, লেপচা জগতের মাঝে ঘুরে আসতে পারেন মিম টি গার্ডেন। চারিদিকে শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ ইচ্ছা করবে আর ওখান থেকে না আসতে। সুখিয়াপুকুর থেকে মাত্র দু কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরেকটি জমজ গ্রাম জোরপোখরি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। জোরপোখরি কথাটির মানে হল জোর অর্থাৎ যমজ আর পোখরি মানে পুকুর। শুখিয়াপোখরি থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে মানেভঞ্জন থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। এখানে বেড়াতে গেলে এখানকার যে লোকাল মার্কেটে আছে তা ঘুরে দেখতে কিন্তু একেবারেই ভুলবেন না, আর আসার সময় প্রিয় মানুষদের জন্য এখানকার মানুষদের হাতে বানানো জিনিস আনতে অবশ্যই মিস করবেন না যেন।
থাকার জন্য এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হোমস্টে এছাড়া দার্জিলিং এ থেকেও কয়েক ঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, চা বাগান, পাইন গাছের জঙ্গল, পাখি এছাড়া পরিবেশের এমন সৌন্দর্য দেখে আপনিও মুগ্ধ হবেন। তবে যাওয়ার সময় ক্যামেরাটি হাতে করে নিয়ে যেতে কিন্তু ভুলবেন না। কারণ প্রকৃতির মাঝে দেখবেন, এমন এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা কিন্তু স্মৃতির পাতায় বেশি দিন থাকবে না, তাকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতেই হবে।
দার্জিলিং থেকে খুব সহজেই আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন এই প্রত্যন্ত গ্রামে। তাই যাতায়াতের খুব একটা অসুবিধা হবে না। আর এখানে যাওয়ার অন্তত খুব ভালো সময় হলো অক্টোবর, নভেম্বর কিংবা এপ্রিল, মে মাস। নভেম্বর মাস তো চলে গেল তাই এপ্রিল মে মাসটা কিন্তু টার্গেট রাখুন এই অসাধারণ অফবিট ডেসটিনেশনে একবার ঘুরে যাওয়ার জন্য, কিংবা আচমকা উইকেন্ড কাটাতে ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যেতেই পারেন এই অসাধারণ জায়গায়।