সত্যিই কি টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় পাওয়া যায় ভুতের দেখা!
‘ভুত’ আছে কি নেই, প্রশ্ন অবান্তর নয়। তবে তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। তবু বছরের বিশেষ একটি সময়ে পৃথিবীতে বিভিন্ন নামে পালিত হয় ‘ভুত’-এর আবাহন। তাই নয় কি? কোথাও ‘হ্যালোউইন’, কোথাও ‘ভুতচতুর্দশী’। ‘ভুত’ অর্থাৎ অতীত। তা নিয়ে একবার লিখতে বসলে শেষ হওয়ার কথা নয়। ভুতের অস্তিত্ব না মেনে থাকলে মানুষ কেনই বা তাঁদের তুষ্ট করতে পালন করেন ‘ভুতচতুর্দশী’। বেশ কিছু কথা কলম লিখে গেল গড়গড়িয়ে। এবার ধীরে ধীরে ধোঁয়াশা মুক্ত করা যাক রবি ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর সাহায্যে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অন্যতম প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের জীবনে হারিয়ে ফেলার সংখ্যাই বেশি। সেই কোন শৈশবে চলে গেলেন মা। একসময় হারালেন বন্ধুসম বৌঠান কাদম্বরীকে। এরপর থেকে শুধুই সুর্যাস্তের পালা। চলে গেলেন স্ত্রী মৃণালিনী, ছেলে-মেয়েরাও। একাকীত্ব বাধ্য করেছিল রবীন্দ্রনাথকে প্ল্যানচেট করতে। বহু ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন সময় প্ল্যানচেটের সাহায্য নিয়েছেন। অর্থাৎ কোথাও না কোথাও মানবজাতির বিশ্বাস রয়েছে সময়ের সেই পক্ষকালে যেখানে মৃত্যুর পর রয়েছে একটি জগৎ। টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়া যতই আধুনিক হোক না কেন, এখানেও সেই বিশ্বাস বলবৎ রয়েছে।
ইন্দ্রপুরী স্টুডিওকে বলা হয় ‘হন্টেড’। খোদ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)-ও অনুভব করেছিলেন অশরীরীর অস্তিত্ব। ইন্দ্রপুরীতে একটি বিশেষ ঘর রয়েছে। কোনো এক পর্বে সেটি মেকআপ রুম ছিল বলে মনে করা হয়। রাতে সেখানে নারীকন্ঠের হাসি, ঘুঙুরের আওয়াজ শোনা যায়। এক রাতে শুটিংয়ের কারণে স্টুডিওতে থাকতে হয়েছিল প্রসেনজিৎ-কে। অনেক রাতে ক্লান্ত হয়ে মেকআপ রুমে শুয়েছিলেন তিনি। সেই সময় প্রসেনজিৎ শুনেছিলেন সেই অপ্রাকৃত আওয়াজ। অভিনেতা দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় (Debanjan Chatterjee) ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে রাতে শুটিং করার পর থাকতে চাইতেন না। শুটিংয়ের শেষে যত রাতই হোক না কেন, তিনি বাড়ি ফিরে যেতেন। ইন্দ্রপুরীতে মহিলা সংক্রান্ত কোনো দুর্ঘটনার কথা শোনা না গেলেও টালিগঞ্জে প্রচলিত আছে এক টেকনিশিয়ানের আত্মহত্যার ঘটনা। শোনা যায়, কোনো ব্যক্তিগত কারণে তিনি নাকি ইন্দ্রপুরীর ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে এই ঘটনা কতদূর সত্য তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে!
View this post on Instagram
তবে ইন্দ্রপুরীর বিপরীতে একসময় ছিল নয় নম্বর সাউথ লজ স্টুডিও। একসময় এই স্টুডিওতে ‘সোনার হরিণ’, ‘চেনা অচেনা’-র মতো বহু বিখ্যাত বাংলা ধারাবাহিকের শুটিং হয়েছে। কিন্তু স্টুডিও হওয়ার আগে এটি ছিল একটি ট্যুরিস্ট লজ। সেই সময় ওই লজে ঘটেছিল দুর্ঘটনা। বিবাহিত পরিচয় দিয়ে এক যুগল এসে উঠেছিলেন ওই লজে। কিন্তু পরের দিন লজের কর্মচারীরা পুরুষটির দেহ লজের ডাইনিং হলে ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। মহিলাকে পাওয়া যায় বাথটাবের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায়। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছিল, ওই যুগল পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী নন। দুজনের আলাদা সংসার রয়েছে। যুগলের মৃতদেহ শনাক্ত করেছিলেন তাঁদের স্বামী-স্ত্রীরা। তবে ওখানেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে শোনা গিয়েছিল, মহিলাটিকে কুপিয়ে খুন করে বাথটাবে ফেলে পুরুষটি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
কারণ আজও জানা যায়নি। তবে এই ঘটনার পর লজটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তা স্টুডিওয় পরিণত হয়। কিন্তু স্টুডিওতে একাধিক কূশীলব সাক্ষী অতিপ্রাকৃত ঘটনার। অনেকেই দেখেছেন একসাথে দুটি ছায়া। ‘মীরাদি’ নামে পরিচিত এক হেয়ারস্টাইলিস্ট ওই স্টুডিওতে যতক্ষণ থাকতেন, হনুমান চালিসা পাঠ করতেন সময় পেলেই। মেকআপ আর্টিস্ট হিসাবে কাজ করতেন সুমন। নাইট শিফটে শুটিংয়ের পর ক্লান্ত হয়ে এক রাতে স্টুডিওর দোতলায় প্রপ হিসাবে রাখা খাটের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় খাটটি কাঁপার ফলে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু দ্রুত দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন সুমন। নিচে নেমে তিনি সেই সময় উপস্থিত সকলকে জানিয়েছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। সকলে তাঁকে সেই রাতে নিচে থাকতে বলেন। পরে সুমনকে ওই দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়েছিল।
তবে এরপর থেকে কেউ রাতে নয় নম্বর সাউথ লজ স্টুডিওতে থাকতে রাজি হতেন না। পরবর্তীকালে এই স্টুডিওটি ভেঙে উঠতে শুরু করেছে এক বহুতল। তবে নয় নম্বর স্টুডিও নামে পরিচিত ওই স্থানটির ঘটনা এখনও টলিউডের অন্দরে মুখে মুখে ফেরে। বর্তমানে ওই স্টুডিওর কোনো ছবি সেই ভাবে না পাওয়া গেলেও ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় (Bhaswar Chatterjee) ও সমতা দাস (Samata Das)- এর এই ছবিটি তোলা হয়েছিল নয় নম্বরে। এটি ছিল ‘সোনার হরিণ’-এর স্টীল।
অনেকেই হয়তো অতিপ্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাস করেন না। কিন্তু আলোর পাশাপাশি যেমন থাকে অন্ধকারের ঘনঘটা, প্রকৃতিতেও থাকে এক অতিপ্রাকৃত জগৎ।