পরিচালক যশ চোপড়া তখনই কুড়ুল দিয়ে আঘাত করে যখন দুটো মন পরস্পরের কাছাকাছি আসতে চাইছে। একজন তখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭৩ সালের ৩ জুন জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন বিগ বি। জঞ্জিরের সাফল্যের পরই জয়া ভাদুড়িকে বিয়ে করেন তিনি। বাবার বকুনিতেই চটজলদি বিয়ে করেন জয়া-অমিতাভ। ১৯৭৪ এ আসে প্রথম সন্তান শ্বেতা আর ১৯৭৬ এ আসে অভিষেক।
যেই বছর অভিষেক জয়া-অমিতাভের ঘরে আসে, সেই বছর অমিতাভের জীবনেও গোপন প্রেমের অভিষেক হয়। ১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ দিয়ে শুরু হয় প্রথম দেখা। তখন প্রথম আলাপ হয় সুদর্শন অমিতাভের সঙ্গে সুন্দরী রেখার। এরপর ‘খুন-পাসিনা’। ঠিক তাঁর এক বছর পর ‘মিস্টার নটবরলাল’। একদিকে সিনেমার সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনই প্রেমের আগুন। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’ ছবিটি। সুপার-ডুপার হিট হয়। বিগ বি তাঁর রিয়েল লাইফের হিরোইনকে পেয়েও গিয়েছিলেন, উপরি পাওনা হিসেবে দুই সন্তানকে কাছে পেয়েছিলেন। সবই সুন্দর ভাবে চলছিল, কিন্তু একজন পরিচালকের চোখ যে জহুরীর চোখ হয়। সে যেমন শিল্পী চেনে তেমনই জানেন, “আনখোন কি মাস্তি কে মাস্তানে হাজারো হৈনে”। রেখার চোখের ভাষা বুঝেছিলেন পরিচালক যশ চোপড়া। অভিনয় করতে করতে রেখা যে সত্যি সত্যি অমিতাভকে খুব পছন্দ করতেন এবং চাইতেন তা ওনার চোখ এড়ায়নি।
১৯৮০ তেই রেখা ও জয়া বচনকে এক ফ্রেমে আনলেন পরিচালক যশ চোপড়া। বানিয়ে ফেললেন বিতর্কিত, চর্চিত মুভি ‘সিলসিলা’। ১৯৮১ তে মুক্তি পেল ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনী। শ্যুটিং হয়, সিনেমা মুক্তিও পায়। কিন্তু এরপর আর অমিতাভ-রেখাকে এক স্ক্রিনে কখনো দেখা যায়নি, এমনকি পরিচালক যশ চোপড়ার সঙ্গেও অমিতাভের সম্পর্কের ফাটল ধরে। যদিও দীর্ঘ বছর পর ‘মোহাব্বতে’ সিনেমার হাত ধরে যশ-অমিতাভের সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ হয়।
‘সিলসিলা’ মুক্তি পাওয়ার পরেই রেখার কাছে জয়ার একটা ফোন কল আসে। জয়া তাঁর শ্বশুরবাড়িতেই রেখাকে নিমন্ত্রণ করেন। এদিকে রেখার মনে দ্বিধা কাজ করলেও উপস্থিত হন অমিতাভের বাড়িতে। সেদিন জয়া আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি রাখেননি। রেখাকে আদরে যত্নে রেখেছিলেন কিছুটা সময়। জয়া যেদিন রেখাকে ডেকেছিলেন সেদিন বাড়িতে অমিতাভ ছিলেন না। জয়া তাঁর সাম্রাজ্য ঘুরে দেখিয়েছিলেন রেখাকে। বিদাই জানানোর সময় শুধু একটা কথা বলেছিলেন তিনি রেখাকে, “যাই-ই হোক, আমি কিন্তু কখনও অমিতকে ছেড়ে যাব না।” ‘রেখা – দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ থেকে রেখার জীবনের প্রতিটি রেখার গল্প তুলে ধরেছেন লেখক ইয়াসির উসমান।
১৯৮০ সালে ঋষি কাপুর ও নীতু সিং গাঁটছড়া বাঁধেন। সেইসময় মাথায় সিঁদুর দিয়ে আসেন রেখা। এই নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। সাইলেন্ট প্রেমকে অনেক অজানা হাত দুমড়ে দেয়। এরপর রেখা ১৯৯০ সালে দিল্লীর প্রখ্যাত শিল্পপতি মুকেশ আগারওয়ালকে বিয়ে করেন। এক বছর পর যখন রেখা অমেরিকাতে তখন মুকেশ কয়েকবার চেষ্টার পর আত্মহত্যা করেন এবং চিরকুটে লিখে যান ‘কারো কোন দোষ নেই’। তখনও রেখা আরও একবার লেডি ভিলেন হয়ে গেলেন। এখনও রেখাকে সিঁদুর পড়তে দেখা যায়। আজকের দিনে দাড়িয়েও রেখা-অমিতাভ সহস্র যোজন দুরেই রয়েছেন। যদিও কোন অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হলেও সৌজন্যতা বজিয়ে রেখেছেন রেখা। এখনও জয়াকে দেখলে রেখা আলিঙ্গন করেন। কিন্তু পুরনো ঘা কখনো ক্যামেরার সামনে আনেননি তিনি। দিব্যি সিঙ্গেল থেকে, প্লাস্টিক সার্জারি করে চিরসবুজ হয়ে উঠছেন রেখা।