Hoop PlusHoop VideoTollywood

Bhaswar Chatterjee: ‘তুমি কি উত্তমকুমার?’ বিদ্রুপের শিকার হয়েছিলেন অভিনেতা ভাস্বর

অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় (Bhaswar Chatterjee) -র জীবন ভরা চড়াই-উতরাই-এ। দুইবার বিয়ে ভেঙেছে। প্রথমবার মিথ্যা অভিযোগে আইনি জটিলতায় জড়িয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর পৌত্রী নবমিতা (Nabamita)-কে। বিয়ে ভাঙলেও আজও তাঁরা বন্ধু। তবে দ্বিতীয়বার বিবাহ বিচ্ছেদের পর মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছিল ভাস্বরকে। নিজের সাথে লড়াই করেছেন তিনি। একাকীত্ব থেকে বেরোতেই শিখেছেন কাশ্মীরি ভাষা। ভাষা শিখতে গিয়ে ভালো লেগে যায় কাশ্মীরি সংস্কৃতিকে। বর্তমানে সময় পেলেই কাশ্মীরে পাড়ি দেন ভাস্বর। সম্প্রতি ‘জোশ টকস’-এর মঞ্চে নিজের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরলেন তিনি।

শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। প্রথম যুক্তাক্ষর লিখেছিলেন ‘বাঞ্ছারামের বাগান’। তখনও স্কুলে শেখানো হয়নি যুক্তাক্ষর। ভাস্বরের কর্মকান্ডে চমকে গিয়েছিলেন সকলে। স্মিতা পাটিল (Smita Patil) অভিনীত ফিল্ম ‘দেবশিশু’ রিলিজ করেছিল। তা দেখে ভাস্বর নিজের মতো করে বাড়িতে ‘দেবশিশু’ সাজতেন। বাড়ির সকলে ইঞ্জিনিয়ার হলেও ভাস্বর চেয়েছিলেন অভিনেতা হতে। মা-বাবার সমর্থন ছিল। আত্মীয়-বন্ধুরা করেছিলেন সমালোচনা। কিন্তু ভাস্বরের মা-বাবা বলেছিলেন, জোর করে কিছু হয় না। পাড়ার নাটকে হাতেখড়ি। কলেজে পড়ার সময় নাটকের সাথে যুক্ত ছিলেন ভাস্বর। কলেজ থেকে পাশ করার পর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর চাকরি করতেন ভাস্বর। একসময় সেই চাকরি করতে করতেই অভিনয়ে চলে আসেন ভাস্বর। তবে তিনি মনে করেন, স্বপ্ন দেখা ও তা বাস্তবায়িত করার মধ্যে রয়েছে বহু পার্থক্য। মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)-র হাতে ক্যামেরা সুইচ অন হওয়ার পরেও রিলিজ হয়নি ভাস্বরের প্রথম কাজ।

চাকরি করার পাশাপাশি হাতে ছবি নিয়ে স্টুডিওপাড়ায় ঘোরা ছিল ভাস্বরের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। তবে সেই সময় স্টুডিওয় ঢোকা ছিল কঠিন। এভাবেই একদিন সুযোগ এসেছিল ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর। ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ভাস্বর। দূরদর্শনে সম্প্রচারিত সেই ধারাবাহিকের নাম ছিল ‘কনকাঞ্জলি’। পাঁচ দিনের কাজ শেষ হওয়ার পর ওই সিরিয়ালের সহকারী পরিচালককে ফোন করেছিলেন ভাস্বর। ফোন ধরেছিলেন ওই ব্যক্তির মেয়ে। অত্যন্ত অশ্রদ্ধা ভরে বলেছিলেন, ভাস্বর তো এক্সট্রা, ছোট পার্ট করেন। ভাস্বর কথা বলতে চেয়েছিলেন সহকারী পরিচালকের সাথে। তাঁর মেয়ে বলেছিলেন, ছোটখাট পার্ট করেন, ফলে অযথা বিরক্ত না করতে। তাছাড়া ওই সহকারী পরিচালক সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। আঘাত পেয়েছিলেন ভাস্বর।

একবার বারুইপুর রাজবাড়িতে শুটিং চলছে। তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খাবার দিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ভাস্বর প্রোডাকশন ম্যানেজারকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর খাবার দিতে। বিদ্রুপ করে ওই প্রোডাকশন ম্যানেজার বলেছিলেন, “তুমি কি উত্তম কুমার নাকি? যাও নিচে গিয়ে খেয়ে এসো”। নিচে গিয়েই খেয়ে এসেছিলেন ভাস্বর। আউটডোর শুটিংয়ে ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার সময় তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল টেকনিশিয়ান ভ্যান যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যেত না। প‍্যাক আপ হয়ে যাওয়ার পর ভাস্বরকে বলা হয়েছিল, তাঁর একার জন্য গাড়ি কলকাতায় যাবে না। তাঁকে নিজেকেই ফিরে যেতে হবে কলকাতায়। সেদিন তিন-চার ঘন্টা লেগেছিল বাসে চেপে কলকাতা ফিরতে। কিন্তু ছবিটা বদলে গিয়েছিল সফলতার পর।

তবে ভাস্বর মনে করেন, এই ভাবে আঘাত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মুম্বই থেকে অভিনয় করে ফেরার পর তাঁকে আলাদা সম্মান দেওয়া হতে থাকল ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু আজও স্টারডমের অহংকার স্পর্শ করতে পারেনি ভাস্বরকে। হতাশ হওয়ার রাস্তাও কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Related Articles