ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় (bhaswar chatterjee)-র জীবনে একের পর এক ঝড় এসেছে। পরপর দুটি বিয়ে ভেঙে গেছে। প্রথম বিয়ে ভাঙার সময় ভাস্বরের নামে তাঁর স্ত্রী পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন। ফলে তার প্রভাব পড়েছিল ভাস্বরের কেরিয়ারেও। কিন্তু তারপরেও ভাস্বরের নিস্তব্ধতা সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। ফলে এবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কলম ধরেছেন ভাস্বর।
2019 সালে রীতিমতো ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছিলেন ভাস্কর। ততদিনে দ্বিতীয় স্ত্রী নবমিতা (nabamita chatterjee)-র সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ভাস্বরের। কাজের মধ্যে থাকার সময় সবকিছুই ঠিক থাকত। কিন্তু বাড়িতে পা দিতেই ছেঁকে ধরত একাকীত্ব। 2020 সালে সুশান্ত সিং রাজপুত (sushant singh Rajput)-এর মৃত্যুতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ভাস্বর নিজেও। বলিউডের স্বজনপোষণ নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে লেখেন ভাস্বর। সেইসময় ভাস্বরের লেখা পড়ে অনেকেই তাঁর কাছে মানসিক অবসাদ নিয়ে লেখার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভাস্বর লেখেননি। কারণ তিনি তখনও অবসাদমুক্ত নন। কিন্তু এখন তিনি মানসিক অবসাদের হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পেয়েছেন।
সম্প্রতি ভাস্বর লিখেছেন, মানসিক অবসাদ কখনও তারকা বা সাধারণ মানুষ দেখে আসে না। এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে করোনা অতিমারীর ফলে প্রতিদিন জীবনের সংঘর্ষ। টিভি বা সংবাদমাধ্যমে সবসময়ই মৃত্যুর খবর একটি মানুষের জীবনে ক্ষয় আনতে যথেষ্ট। ভাস্বরের বাড়িতে ভাস্বর ও তাঁর বাবা থাকতেন। নবমিতার সঙ্গে তিনি যে ঘরে থাকতেন, সেই ঘরে ঢুকতে কষ্ট হয় ভাস্বরের। কাউকে মনের কথা বলতে পারতেন না তিনি। একসময় মানুষের সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছা করত না তাঁর, বিরক্ত বোধ হত। মাঝে মাঝেই ভাবতেন, চৌদ্দ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবেন। এভাবে নয় মাস কাটার পর ভাস্বরের মনে হয়েছিল, এত সহজে হেরে গেলে চলবে না। ফলে তিনি মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এখনও অবধি সমাজের ধারণা, মনোবিদের কাছে উন্মাদরা যান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়, একজন নামী খেলোয়াড়-এরও মনোবিদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কারণ তাঁদের উপর তৈরি হয় প্রত্যাশার পাহাড়। তবে মনোবিদ রাস্তা দেখিয়ে দিলেও পথ চলার দায়িত্ব সম্পূর্ণ নিজের। সেই জায়গা থেকেই জন্ম হয়েছে ভাস্বরের নতুন সত্ত্বার।
সবার মতো ভাস্বরেরও বিয়ে করে সংসার করার ইচ্ছা ছিল। দুইবার বিয়ে হয়েছে। দুইবারই চূড়ান্ত অসফল। বারবার তাঁর বিয়ে ভাঙা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কাটাছেঁড়া হয়েছে। সবাই ভাস্বরকে দায়ী করেছেন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, বিয়ে ভাঙার কথা নিয়ে ভাস্বরেরও কিছু বলতে কষ্ট হত, শুনতে কষ্ট হত। একসময় নিজেকে ভালোবেসে জীবনমুখী হলেন ভাস্বর। অভিনয় করা ছাড়াও শর্ট ফিল্ম পরিচালনা করেছেন তিনি। এছাড়াও শিখছেন একটার পর একটা ভাষা। সবকিছুই শুধুমাত্র নিজেকে ব্যস্ত রাখতে, ভালোবাসতে। নিজের মায়ের নামে তৈরি অপর্ণা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মানুষের জন্য কাজ করছেন তিনি। ভাস্বর নিজেই বলেছেন, একসময় তাঁর সংসার ছিল না, অথচ আজ সেই ভাস্বরেরই বিরাট ঘর-সংসার।