সমস্ত বিতর্ককে অতিক্রম করে তিয়াত্তর বছর বয়সে পা দিলেন মহেশ ভাট (Mahesh Bhatt)। তিনি বিতর্কিত তাঁর জন্মলগ্ন থেকেই। বলিউডের আবহাওয়ায় জন্ম হয়নি মহেশের। গুজরাটি ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য নানাভাই ভাট (Nanabhai Bhatt)-এর সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল শিরিন মহম্মদ আলি (Shirin Mohammed Ali)-র। শিরিন পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু তিনি অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। নানাভাই-এর সাথে সম্পর্কের জেরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন শিরিন। 1948 সালের 20 শে ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল মহেশের। শোনা যায়, মহেশ তাঁর পিতাকে নাকি কোনোদিন দেখেননি। এই কথা যদি সত্য হয়, তাহলে মহেশের নাম হিন্দু কেন অথবা তিনি ‘ভাট’ পদবী ব্যবহার করেন কিভাবে? কারণ মাটুঙ্গার ডন বস্কো হাইস্কুলে পড়ার সময় স্কুলের খাতায় তাঁর নাম ছিল ‘মহেশ ভাট’। এমনকি সেখানে মহেশের পিতার নাম ছিল ‘নানাভাই ভাট’ যা তাঁর পিতার অনুমতি ছাড়া সম্ভব ছিল না। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, মহেশকে কি তাঁর পিতা নানাভাই দত্তক নিয়েছিলেন?
View this post on Instagram
অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরির মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মহেশ। একসময় পরিচালক রাজ খোসলা (Raj Khosla)-র সহকারী হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। এরপর মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে ‘মঞ্জিলে অউর ভি হ্যায়’-এর মাধ্যমে পরিচালক হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে ডেবিউ করেন মহেশ। একের পর এক হিট ফিল্মের পাশাপাশি মহেশের হাত ধরে বলিউডে আসতে থাকেন নতুন প্রতিভারা। রাতারাতি পরিচালক ও প্রযোজকের পাশাপাশি মেন্টর হয়ে ওঠেন মহেশ।
View this post on Instagram
কিন্তু কেরিয়ারে মহেশ যতটা সফল, ততটাই টালমাটাল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। দীর্ঘদিনের বান্ধবী লরেন ব্রাইট (Lorraine Bright)-কে বিয়ে করেছিলেন মহেশ। বিয়ের পর লরেন তাঁর নাম পরিবর্তন করে কিরণ ভাট (Kiran Bhatt) নামে পরিচিত হন। তাঁদের কন্যাসন্তান পূজা (Puja Bhatt) ও পুত্রসন্তান রাহুল (Rahul Bhatt)-এর জন্মের পর ক্রমশ বহির্মুখী হয়ে গিয়েছিলেন মহেশ। জনপ্রিয় নায়িকা পরভিন বাবি (Parveen Babi)-র সাথে মহেশের সম্পর্ক তৈরি হয়। কিরণ সব জেনেও বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটেননি। পরভিন স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে ক্রমশ তাঁর সাথে মহেশের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মহেশকে লেখা পরভিনের চিঠি বহুদিন অবধি সযত্মে সংরক্ষিত ছিল কিরণের কাছে। পরভিনের মৃত্যুর পর মহেশের আত্মীয় ও বলিউড পরিচালক মোহিত সুরি (Mohit Suri)-কে এই চিঠিগুলি দেখিয়েছিলেন কিরণ। চিঠিগুলিতে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় কঙ্গনা রাণাওয়াত (Kangana Ranawat) ও শাইনি আহুজা (Saini Ahuja) অভিনীত ফিল্ম ‘উও লমহে’।
View this post on Instagram
অপরদিকে মহেশের সাথে পরভিনের সম্পর্কের ইতি ঘটার পর সোনি রাজদান (Soni Razdan)-এর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। সোনির অভিনয় মুগ্ধ করেছিল মহেশকে। তাঁদের প্রেমের সূত্রপাত ঘটে। কিরণ বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য রাজি না হওয়ার ফলে মহেশ ও সোনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই কন্যাসন্তানের নাম আলিয়া (Alia Bhatt) ও শাহিন (Shaheen Bhatt)।
View this post on Instagram
তবে পূজা ভাট যখন নায়িকা হিসাবে বলিউডে সুপারহিট, সেই সময় মহেশের জীবনে আবারও ঘনিয়ে এসেছিল বিতর্ক। একটি ফিল্মি ম্যাগাজিনে মহেশের কোলে বসে তাঁকে লিপলক কিস করতে দেখা যায় পূজাকে। এই ছবিটি বলিউড তথা সমগ্র ভারতে বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে মহেশ এই ছবি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, পূজা তাঁর মেয়ে না হলে তিনি পূজাকে বিয়ে করতেন। একসময় মহেশের সাথে তাঁর কন্যা পূজার অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন রটেছিল।
বিতর্ক তৈরি হয়েছিল রিয়া চক্রবর্তী (Rhea Chakraborty)-র সাথে মহেশের সম্পর্ক ঘিরেও। মহেশ রিয়ার কাঁধে মাথা রেখে একটি ছবি তুলেছিলেন। এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রিয়া মহেশকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে তাঁর সাথে মহেশের সম্পর্কের আভাস খুঁজে পেয়েছিলেন নেটিজেনদের একাংশ। এমনকি রিয়ার বয়ফ্রেন্ড ও অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত (Sushant Singh Rajput)-এর মৃত্যুর জন্য অনেকে মহেশকে দায়ী করতে থাকেন।
View this post on Instagram
প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন মহেশের জীবনে এত বিতর্ক? মহেশ হয়তো বিতর্কিত হতে পছন্দ করেন। কারণ এই বিতর্কগুলির অধিকাংশের জন্মদাতা তিনি নিজেই। বিতর্কিত হয়ে মহেশ হয়তো চান তাঁর জন্ম রহস্যকে ভুলে থাকতে ও ভুলিয়ে রাখতে।
View this post on Instagram