মানবিকতার এক অসাধারণ নজির, ফ্রিতে দেন ওষুধ, বিনা পয়সায় অপারেশন করেন ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্ত চিকিৎসক
আসামের একজন বিখ্যাত ক্যান্সার চিকিৎসক হলেন ডক্টর রবি কান্নান। ক্যান্সারের রোগীকে চিকিৎসা করতে গেলে বা অস্ত্রোপচার করতে গেলে তিনি একটা টাকাও তাদের থেকে নেননা। রোগীদের কাছে ভগবান তুল্য রবি কন্নান। চেন্নাই এর আদ্যার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অংকলজি ডিপার্টমেন্টের হেড অফ দা ডিপার্টমেন্টে আছেন। তার এই অসাধারণ কাজের জন্য ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব দিয়েছেন। তিনি চেন্নাইয়ের কিল্পক মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস ডিগ্রী পান। তারপর পরবর্তীকালে নিউ দিল্লির মৌলানা আজাদ মেডিকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স অফ সাইন্স ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। তারপর ২০০৬ সালে আদ্যার ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে সার্জিক্যাল অঙ্কোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ভূমিকা পালন করতে থাকেন। তারপর চেন্নাই ছেড়ে দিয়ে তিনি তার বসতভিটে আসামে চলে আসেন সেখানে এসে বারাক উপত্যকার মানুষের জন্য শিলচরে কাছাড় ক্যান্সার হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার তৈরি করেন।
চিকিৎসা করতে করতে রবি খেয়াল করেছিলেন চিকিৎসা করানোর জন্য মানুষকে কত কষ্ট করতে হচ্ছে আর সেই প্রত্যেকটা ঘটনাই তার মনে আঁচড় কেটে ছিল। তিনি বলতেন, শুধুমাত্র ওষুধ লিখে দিলেই হয় না কিনে খাবার ক্ষমতা আছে কিনা তাও ডাক্তারকেই জানতে হবে। একজন চিকিৎসকের মুখ দিয়ে যখন এত বড় একটা কথা বেরোয় তখন তাকে চিকিৎসক নয় মানুষ ভগবানের স্থানে বসায়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ কি কি কাজ করতে পারে তা তার চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। ভিটেমাটি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়ে চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি নিজের ছেলেকে বন্ধ করে কেউ চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ধর্মনগরের এক ক্যান্সার রোগী।
অমন এক ভয়ঙ্কর ঘটনা তিনি যদি সামনে থেকে না চাক্ষুষ করতেন তাহলে হয়তো তার জীবনটা এমন পাল্টে যেতনা। ধর্মনগর থেকে বারবার শিলচর যাওয়া-আসা থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার সর্বস্ব ব্যবস্থা করতে গিয়ে এই রোগীর পরিবার একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসা শেষ করানোর জন্য যখন পরবর্তী তারিখটা দেওয়া হচ্ছে সেই সময় এই রোগী হাতজোড় করে ডাক্তারের কাছে অনুরোধ করেন তাকে যেন আর পরবর্তী তারিখ দেওয়া না হয়। হতবাক হয়ে যান চিকিৎসক রবি কান্নান। এমন ভেঙে পড়ার কারণ জানতে চাইলে, সেই রোগী এবং তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রোগের জন্য কাজকর্ম সব বন্ধ হতে বসেছে, এত খরচ আর কিছুতেই করা যাচ্ছে না। সমস্ত কিছুই বিক্রি হয়েছে বাকি আছে শুধু বসতবাড়ি। এমন ভয়ঙ্কর বাস্তবের সামনাসামনি এসে পাল্টে যায় রবির মানসিকতা। কান্নান সেদিন থেকেই বুঝতে পারেন একটা রোগীর জন্য শুধু ওষুধ লিখে দিলেই হয় না, ওষুধ কিনে খাওয়ার মতন ক্ষমতা আছে কিনা তাও জানতে হয় ডাক্তারকেই। আর যদি সেই ক্ষমতা না থাকে তাহলে ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সেই দিন থেকেই রবি সমস্ত রোগের তথ্যপঞ্জি লিপিবদ্ধ করা শুরু করতে থাকেন। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন এবং সাথে নিজের এবং তার পরিচিতজনের ফোন নম্বরও বিলি করেন যাতে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো সমস্যা না হয়। কোন কারণে যদি কোনো রোগী নির্দিষ্ট দিনে হাসপাতালে আসতে না পারে তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের ফোন করে না আসার কারণ জেনে তাদেরকে আনানোর ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও তিনি রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের ব্যবস্থা করে দেন। কাছাড় ক্যান্সার হসপিটাল এ তিনি প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি ক্যান্সার রোগীর জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন একেবারে বিনা পয়সায়। এছাড়াও তিনি সোসাইটি থেকে প্রতিমাসে সে বেতন পান তাও একজন ডাক্তারের বেতনের থেকে কিছুই নয়। কোন বাড়িতে ক্যান্সার যদি প্রবেশ করে তাহলে সেই বাড়ির রোগী থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন একেবারে তছনছ হয়ে যায়। চিকিৎসা করতে করতে চিকিৎসক অর্থ জোগাড় করতে করতে মানুষগুলো একেবারে শেষ হয়ে যায়। যাদের পরিবারে ঘটে তারাই বুঝতে পারে একই পরিস্থিতি চলে প্রত্যেকটা মানুষের উপর দিয়ে। এই রকম পরিস্থিতিতে ডক্টর রবি কান্নান হল রোগীর পরিবারের কাছে ঈশ্বর সমতুল্য।