Hoop Special

আজকের গল্প: সবজিওয়ালার বউ « সুস্মিতা কুন্ডু

দুপুরে ঘুম পাড়ানি গান শুনতে ভালো লাগে না উমার। মেয়ের বয়স ১৬ পার, কিন্তু ঠাম্মার আদর কিছুতেই বুঝতে চায় না যে উমা বড় হয়ে গেছে। স্কুল বন্ধ, লকডাউনে প্রায় ঘরবন্দি। দুপুরবেলা তাই ঠাম্মার হাতে আদর খেতে খেতে সময় কেটে যায়। ‌ একটা সবজিওয়ালা রোজ সাইকেল করে সবজি বিক্রি করতে আসে, বউ সাইকেলের পিছনে বসে থাকে। ওই বউটার মাথাতেও থাকে একটা ছোট্ট পুটলি। সাইকেলের সামনে ইয়া বড় ঝুড়িতে কখন থাকে পালংশাক, কখনো টমেটো, কখনো গাজর, কখনো লাউ। মা মাঝেমধ্যে সবজি কেনে। কিন্তু ওই বউটার অদ্ভুত চাওনি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত।

চুলে মনে হয় তেল বা শ্যাম্পু কিছুই দেওয়া হয় না, ঠোঁট দুটো কালো হয়ে গেছে, প্রায় দিনই একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরে আসে। গায়ের রং চাপা, চোখ দুটো বিড়ালের চোখ কেউ হার মানাবে, কপালে সব সময় লাল টকটকে সিঁদুরের টিপ আঁকা থাকে। একদিন তো উমা বলেই বসলো, মাসি তোমার মাথায় ঐ পুটলিতে কি আছে? সবজিওয়ালার বৌ উত্তর তো দিলনা উল্টে আরো জড়োসড়ো হয়ে বসলো।

সেদিন ঠান্ডাটা একটু বেশিই লাগছিল, সংক্রান্তির জন্য উত্তুরে হাওয়ার দাপট বেড়ে ছিল। সন্ধ্যেবেলা ছোট কাকার ঘরে বোনের জন্মদিনের কেক কাটার পর্ব চলছে। এমনিতে চারিদিক নিস্তব্ধ। হঠাৎ মনে হল কেউ যেন বাড়ির গেটের সামনে বসে ফিস ফিস করে কথা বলছে। এক ছুটে বাইরে যেতেই চোখ গেল ভাঙ্গা সাইকেলে, চারিদিকে খুচরো কয়েন ছড়িয়ে, পচা টমেটো সাইকেলের পাশে থেঁতলে গেছে। সবজিওয়ালা বসে একা একা কথা বলছে আর কাদছে। বউ কোথায়? উত্তর নেই। ফিরে এসে মাকে ডেকে নিয়ে যেতেই উধাও সাইকেলে, পচা টমেটো, কোয়েন আর সবজিওয়ালা।

টানা সাত দিন ওই সবজিওয়ালা আর আসেনা। বিকেলের টিউশন শুরু হয়েছে, আনলক পর্ব চালু হতে হতেই পড়াশুনোর পাঠ চালু। ঘড়িতে তখন একদম আটটা। রাস্তা ফাঁকা ফাঁকা ছিল। রোডের আলো কোনটা জ্বলছে আবার কোনটা নিভে যাবে যাবে করছে। কেমন একটা পচা গন্ধ নাকে আসছে। রান্নাঘরের ডাস্টবিনে এরকম গন্ধ হয়। হঠাৎ মনে হল কেউ কানের সামনে খুব জোড়ে সাইকেলের বেল দিচ্ছে। বিরক্ত হতে পিছনে তাকাতেই চোখে এলো ফোনের আলো। ফোনের রিং টোন চেঞ্জ কে করলো ভাবতে ভাবতে কলটা কেটেই গেল।

বাড়ি ফিরেই বোনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু। রিং টোন চেঞ্জ করার জন্য বোনের শাস্তি ছিল বারান্দায় দশ মিনিট কান ধরে দাড়িয়ে থাকা। সেদিন রাতে চটপট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ ছিলনা, যদিও পরের দিন আবার সন্ধ্যায় টিউশন।

সেই একই রিংটোন। বোনের উপর রাগ আজ বেড়ে দ্বিগুণ। পিঠ ফাটিয়েই শান্তি। যাহ হঠাৎ লোডশেডিং। এখনো ১০ মিনিট হাঁটলে তবেই বাড়ি। তাড়াতাড়ি করে ফোনের আলো জ্বালাতেই পায়ে একটা কি বাঁধলো। তাকাতেই একটা পুঁটলি। কেমন চেনা চেনা। সাহস হটাৎ করে মাথায় চেপে বসতেই সোজা ওই পুটলিতে হাত। গিট খুলতেই একটা লোহার ছোট্ট দা বেরোলো আর একটা স্টিলের টিফিন বক্স। ওই বক্স খুলতেই নাকে ঠেকলো পচা ভাতের গন্ধ। মনে হল অনেকদিনের পচে যাওয়া ভাত আর পিয়াজ। হটাৎ ফোনটা আবার বেজে উঠলো অদ্ভুত আওয়াজে। কিন্তু ফোন হাতে তবে কি কেউ সাইকেলে নিয়ে পাস দিয়ে চলে গেলো!

রাতে প্রায় ১০২ জ্বর উমার। সকাল হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কিন্তু যাওয়ার ক্ষমতা নেই।।হটাৎ বাবার চিৎকার, উমার মা দেখ দেখ আমাদের পাড়ায় কি নৃশংস ঘটনা ঘটে গেছে। আজ পেপারে দিল, ইস সব শেষ গো উমার মা…….!!!
[সমাপ্ত]

গল্প: অর্পিতা বসু
পোস্টার ডিজাইন: কৌশিক ব্যানার্জি

(গল্প কেমন লাগল জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন।
***এবার থেকে গল্প পাঠাতে পারেন আপনিও। আপনার লেখা গল্প সরাসরি পাঠিয়ে দিন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। মৌলিক ও অপ্রকাশিত গল্প সর্বদা গ্রহণযোগ্য হবে। গল্প নির্বাচিত হলে অবশ্যই প্রকাশিত করা হবে প্রতি শনি ও রবিবার।***)

Related Articles