ছয় হাজারেরও কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণের সহজ টোটকা মাথায় রাখুন
আপনি কি দার্জিলিং যেতে পছন্দ করেন? তাহলে অবশ্যই এই জায়গাটি একবার ঘুরে আসতে পারেন, কারণ বাঙ্গালীরা বেড়াতে যেতে ভীষণ পছন্দ করে কলকাতা যখন প্রচন্ড গরম পড়েছে, তখন কিন্তু মানুষ দার্জিলিংকেই বেছে নিয়েছে, তার গন্তব্যস্থল হিসাবে ১০-১৫ দিন কাটিয়ে এসে একটা সুন্দর ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করতে চেয়েছেন। দার্জিলিং এ বেড়াতে গেলে অবশ্যই আপনি এই দশটি জায়গা ঘুরে আসবেন, জায়গা গুলি কিন্তু ভীষণ ভালো। দার্জিলিং এ গেলে এই জায়গাগুলো দেখে আসতে একেবারেই মিস করবেন না, তাই তাড়াতাড়ি চটপট একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন, তবে শুধু বেড়ানো নয়, ৫০০০ টাকায় কি করে পুরো টুর শেষ করতে পারেন, তাও জানিয়ে দিচ্ছি। দার্জিলিং যাওয়ার আগে একটা চটপট লিস্ট দেখে নিন।
১) সাইড সিন দেখার জন্য সব সময় ট্যাক্সি বা গাড়ি বুক করবেন না, যে জায়গাগুলো দেখার আছে সেগুলো কিন্তু পরিবারের সঙ্গে পায়ে হেঁটে দেখে আসতে পারেন, যেহেতু পাহাড়ি এলাকা, ঠান্ডা ঠান্ডা মনোরম পরিবেশে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে কিন্তু খারাপ লাগবে না।
২) দার্জিলিঙে গেলেই প্রত্যেকের গ্লেনারিসে ব্রেকফাস্ট করেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু একটু পকেটে টান পড়তে পারে, তাই রাস্তাঘাটে যে ছোটখাটো রেস্তোরাঁ গুলো আছে সেখানে দাম কিন্তু খুব কম। তাই রেস্তোরাঁ থেকেই ম্যাগি, মোমো তাছাড়াও তিব্বতীয়, ভুটানি, নেপালি খাবারে স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।
৩) দার্জিলিংয়ে অনেক ভালো ভালো থাকার জায়গা আছে কিন্তু যদি একটু সস্তার জায়গা খুঁজতে চান, তাহলে আপনার জন্য উপযুক্ত হলো সরকারি লজ। ১০০০ টাকার মাথাপিছু খরচ করে থাকতেই পারেন, আর যদি ম্যাল থেকে একটু দূরে থাকতে চান, তাহলে হোমস্টে গুলো আপনার জন্য ভীষণ উপযুক্ত।
৪)অনেকে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শেয়ারে প্রাইভেট গাড়ি বুক করেন কিন্তু আপনি কি জানেন? এখান থেকে যদি আপনি টোটো ধরে তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ডে আসেন, সেখান থেকে মাত্র ১০০ টাকা খরচ করে বাসে চেপে চলে আসতে পারবেন দার্জিলিং।
৫) অনেকে আছেন যারা কিন্তু অনেক দামী বাসে করে শিলিগুড়ি যান, উত্তরবঙ্গ যদি যেতেই হয় তাহলে ট্রেনের স্লিপার কামরায় যান, তাহলে কিন্তু খুব সহজে খুব অল্প টাকা খরচা করে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন দার্জিলিং।
১) চৌরাস্তা মল- দার্জিলিং শহরের চৌরাস্তা মল এই শৈল শহরের প্রাণকেন্দ্র। চারটি রাস্তার সঙ্গমস্থল হওয়ায় এই জায়গাটির নাম চৌরাস্তা মল। এখানে একেবারে খোলামেলা পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যে যদি গরম গরম চায় চুমুক দিতে দিতে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যায় তাহলে কিন্তু দুর্দান্ত লাগবে। এছাড়া এখান থেকে আপনি নানান রকম জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারেন। ২) বাতাসিয়া লুপ- দার্জিলিং থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে, বাতাসিয়া লুপ আসলে একটি সুসজ্জিত বাগানের চারপাশে একটি গোলাকার রেলপথ। বাগানটি প্রায় পঞ্চাশ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং ফুলগাছ ও নানা ধরনের বাহারি গাছপালা দিয়ে সাজান। দেখতে একেবারে ছবির মত লাগে, ঘুম স্টেশনের একেবারে প্রথমেই এটি অবস্থিত এখান থেকে টয়ট্রেননে করে লুপে চলে, আর সেই জন্যই এই জায়গাটির এমন নাম হয়েছে। এখানের অসাধারণ দৃশ্য আপনাকে পাগল করে দেবে। আশেপাশের উপত্যকা পর্বতমালার ফাটাফাটি দৃশ্য দেখতে অবশ্যই আপনাকে এক থেকে ক্যামেরাটা বার করে ফেলতে হবে, এখানে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা সৈন্যদের সম্মানে বাতাসিয়া লুপের মধ্যেই রয়েছে একটি যুদ্ধ স্বারক। এখানে প্রবেশ করতে আপনাকে ১৫ টাকা দিতে হবে।
৩) জাপানি পিস প্যাগোডা- দার্জিলিংয়ে জালাফার পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত, জাপানি পিস প্যাগোডা শান্তির একটি বিশ্বব্যাপী প্রতীক, এবং বুদ্ধের চারটি অবতার দেখাযায় এখানে। তাই দার্জিলিং বেড়াতে গেলে অবশ্যই এই জায়গাটি দেখে আসতে ভুলবেন না কিন্তু। ৪) পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানা- এখানে গেলে পদ্ম জানাই চিড়িয়াখানা টি ভ্রমণ করে আসতে ভুলবেন না কিন্তু, প্রায় আটষট্টি একর জমির ওপরে তৈরি করা হয়েছে অসাধারণ এই চিড়িয়াখানা। এখানে গেলে বিভিন্ন প্রজাতিকে দেখতে পাবেন, আর আপনি যদি বন্যপ্রাণীর ফটো তুলতে পছন্দ করেন তাহলে বলব এই জায়গাটি আপনার জন্য। আপনার জন্য এই জায়গাটি ভীষণ উপযুক্ত এইখানে গেলে দেখতে পাবেন সাইবেরিয়ান বাঘ আর তুষার চিতাবাঘ। এখানে লক্ষ্যণীয় হলো তিব্বতি নেকড়ে, লাল পাণ্ডা, তুষার চিতাবাঘ। এখানে গেলে কোন প্লাস্টিকের দ্রব্য বা বোতল নিয়ে যাওয়া যাবে না, কোন বন্যপ্রাণীকে অকারণে জ্বালাতন করা যাবে না, তাদের জন্য কিছু খাওয়ার নিয়ে যেতে পারবেন না, এছাড়াও এখানে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন বা অন্যান্য খেলাও খেলতে পারবে না।
৫) হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট- আপনি যদি ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন, তাহলে এই ইনস্টিটিউশনটি আপনার জন্য ভীষণ উপযুক্ত এক একটি জাদুঘর বোর্ডিং হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্কের পাশাপাশি এখানে গেলে অনেক কিছু দেখতে পাবেন। এখানে গেলে পর্বতারোহণে সরঞ্জামও আপনি গেলে দেখতে পাবেন। বৃহস্পতিবার এই ইনস্টিটিউশন বন্ধ থাকে, যারা ওখানে যাচ্ছেন তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রক ক্লাইম্বিং করতে পারেন, জাদুঘরের ভেতরে কিন্তু ছবি তোলা একেবারে নিষিদ্ধ। ৬) টাইগার হিল- থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে অসাধারণ টাইগার হিল, এখানে গেলে প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে পাগল করে দেবে, যে সময় পর্যটকরা ভীষণ যাতায়াত করে, সেখানে সেই সময় গেলে কিন্তু প্রচুর ভিড় পাবেন টাইগার হিল, দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে সর্বোচ্চ বিন্দু এই হিলের চূড়াতেই রয়েছে মানমন্দির।
৭) ঘুম মঠ বা মনাস্ট্রি- দার্জিলিং থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঘুম মত বা ঘুম মনাস্ট্রি, দার্জিলিং এ বেড়াতে গেলে অবশ্যই আপনি অসাধারণ এই জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন অত্যন্ত বিরল আর হাতে লেখা বৌদ্ধ পান্ডুলিপি, যদি দেখতে চান তাহলে এখানে দেখে আসবেন। ৮) লেপচাজগত- দার্জিলিং বেড়াতে গেলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন লেপচা জগত থেকে, এটি কিন্তু অসাধারণ একটা জায়গা এখানে গেলে ওক, পাইন, রডোডেনড্রনের বনের মধ্যে কোথাও যেন একটা শান্তি খুঁজে পাবেন এখানে লেপচাদের বাস, তাইতো এই জায়গার এমন নামকরণ প্রকৃতির কোলে যদি একটু নির্জনতা খুঁজতে চান তাহলে এই জায়গাটি আপনার জন্য। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) প্রায় 2.5 ঘন্টা দূরে। লেপচাজগতে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি বা জীপ ভাড়া করা যায়।৯) সান্দাকফু – এই জায়গাটি ভ্রমণের সেরা সময় হল মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত, এছাড়া অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে গেলে রডোডেনড্রন ফুল দেখতে পাবেন, যা কিন্তু ভীষণ সুন্দর লাগে। দার্জিলিং সফরের সঙ্গে সঙ্গে যেতে অবশ্যই ভুলে যাবেন না কিন্তু, এখানে বসন্তের সময় এখানে গেলে প্রচুর পরিমাণে ফুল আর অর্কিড দেখতে পাবেন।১০) রক গার্ডেন্স -দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চূন্নু সামার ফলসের পাশেই রয়েছে। তাই দার্জিলিং বেড়াতে গেলে অসাধারণ এই জায়গাটি ঘুরে আসতে ভুলবেন না, জলপ্রপাতের পাশে অসাধারণ বাগান দেখতে কিন্তু ভীষণ ভালো লাগে।