BollywoodHoop Plus

Kangana-Ajay: ‘ভারতের সংবিধান অনুসারে হিন্দি রাষ্ট্র ভাষা’, অজয়ের মন্তব্যে সমর্থন কঙ্গনার

শৈশব থেকে সমগ্র ভারতবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণ জ্ঞান ও ভুগোলের বইতে পড়েছেন, হিন্দি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু ভারতমাতার এতটাই দুর্ভাগ্য, একবিংশ শতকে এসেও সকলকে বোঝাতে হচ্ছে, ভারতের রাষ্ট্রভাষা কি! সম্প্রতি অজয় দেবগণ (Ajay Devgan)-এর রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত একটি টুইট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার অজয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন কঙ্গনা রাণাওয়াত (Kangana Ranawat)। ‘থালাইভি’ অজয়কে সমর্থন করে আবারও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা।

দক্ষিণ ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ক্রমাগত সাফল্য পেয়েই চলেছে। ‘পুষ্পা’, ‘আরআরআর’, ‘কেজিএফ-চ্যাপ্টার টু’-র চূড়ান্ত সফলতার পর এই মুহূর্তে দক্ষিণী তারকারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। ফলে একটি সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে দক্ষিণী তারকা কিচ্চা সুদীপ (Kichcha Sudip) বলেছেন, হিন্দি আর ভারতের রাষ্ট্রভাষা নেই। এরপরেই গর্জে উঠেছেন অজয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের রাষ্ট্রভাষার উপর এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত গর্হিত। অজয় টুইটে লিখেছেন, যদি হিন্দি রাষ্ট্রীয় ভাষা না হয়, তাহলে কিচ্চা সুদীপ কেন তাঁর মাতৃভাষায় তৈরি ফিল্ম হিন্দিতে ডাবিং করে রিলিজ করেন! অজয় লেখেন, হিন্দি তাঁর মাতৃভাষা, সকলের রাষ্ট্র ভাষা এবং তা বরাবর থাকবেই। এরপর ‘জনগণমণ’ কথাটি লিখে অজয় তাঁর বক্তব্য শেষ করেছেন। এরপরেই মুখ খোলেন কঙ্গনা।

মহালক্ষ্মীতে ‘ধাকড়’-এর ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে কঙ্গনা বলেন, ভারতের সংবিধান হিন্দিকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। যখন জার্মান, স্প্যানিশ বা ফ্রান্সে ভ্রমণ করতে যাওয়া হয়, তখন দেখা যায়, তাঁরা তাঁদের ভাষা নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। ঔপনিবেশিক ইতিহাস অন্ধকার হওয়া সত্ত্বেও ইংরাজি এই মুহূর্তে ভাব আদান-প্রদানের যোগসূত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি দেশের মধ্যেও ইংরাজি ব্যবহার করা হচ্ছে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে। এই বিষয়ে উচিত-অনুচিত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কঙ্গনা। তাঁর মতে, হিন্দি-তামিল-সংস্কৃত যোগাযোগের মাধ্যম হওয়া উচিত এবং এই বিষয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

কঙ্গনার মতে, এখনও পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী, হিন্দি জাতীয় ভাষা। এই কারণে অজয় হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বলে ভুল কিছু বলেননি। তবে কঙ্গনা মনে করেন, সংস্কৃত ভারতের জাতীয় ভাষা হওয়া উচিত। কারণ হিন্দি, জার্মানি, ফরাসি সব ভাষার জন্ম সংস্কৃত থেকে। কঙ্গনার মতে, রাষ্ট্রীয় ভাষা ঘোষণা করার পাশাপাশি সংস্কৃতকে প্রত্যেকটি স্কুলে বাধ্যতামূলক করা উচিত।

অপরদিকে কোণঠাসা হয়ে কিচ্চা সুদীপ বলেছেন, অজয় তাঁকে ভুল বুঝেছেন। একদম ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তিনি এই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তবে বিতর্ক না বাড়িয়ে অজয়ের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে চান সুদীপ।

পরিশেষে, ‘হুপহাপ’(HOOPHAAP)-এর তরফ থেকে ভাষা সম্পর্কিত কিছু তথ্য অবশ্যই পেশ করা উচিত বলে মনে হয়। কঙ্গনা বলেছেন, সংস্কৃত ভাষা থেকেই জন্ম হয়েছে বিভিন্ন ভাষার। তাঁর বক্তব্য কিছুটা অংশে সঠিক হলেও অধিকাংশই ভুল। কারণ ভাষাতত্ত্ব অনুসারে, সংস্কৃত ভাষাকে বলা হয় নব্য ভাষা। প্রাচীন ভাষা হিসাবে প্রাকৃত ভাষাকে মনে করা হলেও তা সম্পর্কে সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে প্রাকৃত ভাষার পাশাপাশি আরও একটি প্রাচীন ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে যার নাম পালি। বহু ভাষাবিদের মতে, প্রাকৃত ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল মাগধী ভাষার। সেখান থেকেই আবির্ভাব সংস্কৃত ভাষার। তবে তার মধ্যে রয়ে গেছে একটি ‘মিসিং লিঙ্ক’। সেই মিসিং লিঙ্কটি নিয়ে চলছে গবেষণা। কারণ এটিও ছিল একটি প্রাচীন ভাষা। সংস্কৃতের কিছু শব্দ জার্মান, ফরাসি, স্প্যানিশ, রাশিয়ান, ইংরাজির মতো বিদেশি ভাষাতে পাওয়া গেলেও মনে করা হচ্ছে, মিসিং লিঙ্ক থেকে এই ভাষাগুলির উদ্ভব হয়েছে। এই ঘটনা অসম্ভব নয় কারণ সেই সময় ভারতীয় মানচিত্র ছিল পুরোপুরি আলাদা। সুতরাং মিসিং লিঙ্ক থেকে বিদেশি ভাষার উদ্ভব ও সংস্কৃতের সঙ্গে ভাষাগুলির মিল অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Ajay Devgn (@ajaydevgn)

ফলে এই মুহূর্তে ভারতীয় সংবিধান অনুসারে মনে করা উচিত, ভারত এমন একটি দেশ যাতে বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে ঐক্য। অযথা ভাষা নিয়ে বিতর্ক সেই ঐক্যকে ব্যাহত করছে। এমনকি এর ফলে বিশ্বের দরবারে ভারতের মলিনতা সহজেই ধরা পড়বে।