Kaushik Sen: অসম প্রেম ‘গোধূলি আলাপ’ সত্যিই কুরুচিকর! মুখ খুললেন কৌশিক সেন
মঞ্চাভিনেতা কৌশিক সেন (Koushik Sen) বহুদিন পর ফিরেছেন নায়কের ভূমিকায়। স্টার জলসার নতুন সিরিয়াল ‘গোধূলি আলাপ’-এ অ্যাডভোকেট অরিন্দম-এর ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে নায়িকা হাঁটুর বয়সী সমু সরকার (Somu Sarkar)। দুঁদে আইনজীবীর ভূমিকায় কৌশিক প্রশংসিত হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু চিত্রনাট্য কি আদৌ গ্রহণ করতে পারবেন দর্শকদের একাংশ?
বহু আগে অসমবয়সী প্রেম নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘বিকালে ভোরের ফুল’। বিংশ শতকের সেই সময় নারী অনেকটাই পুরুষের থেকে বয়সে ছোট হলেও মেনে নিত সমাজ। এই ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। তাঁর বিপরীতে ছিলেন সুমিত্রা (Shumitra)। উত্তম কুমারকে মেকআপের সাহায্যে দেখানো হয়েছেন প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায়। কিন্তু সুমিত্রা তখন নেহাতই টিনএজ। ফিল্মটি অত্যন্ত হিট হয়েছিল। বহু বছর পর ‘গোধূলি আলাপ’ উস্কে দিয়েছে সেই স্মৃতি। প্রৌঢ় আইনজীবি অরিন্দমের সঙ্গে টিনেজার নোলকের বিয়ে হয়তো সমালোচনার মুখে পড়তে পারে বলে মনে করেন কৌশিক সেন। তাঁর মতে, ‘কাকু-জেঠুর বয়সী’ একটি চরিত্র বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করছে, এটা কিন্তু প্রথমেই দর্শকদের বিমুখ করতে পারে। ইতিমধ্যেই তাঁর স্ত্রী রেশমি সেন (Reshmi Sen) ও পুত্র ঋদ্ধি সেন (Ridhdhi Sen)-এর পছন্দ হয়নি এই ধরনের কনসেপ্ট। পরিচিতরাও একই কথা বলছেন। তবে প্রায় সকলের কনসেপ্টটি ইন্টারেস্টিং লেগেছে। কৌশিক মনে করেন, এটি একটি ইতিবাচক দিক।
তবে কৌশিক বলেছেন, অনেকের কাছেই এই ধরনের প্রেম ‘ভালগার’ লাগতে পারে। কিন্তু প্রেমের মধ্যে কখনও মিশে যায় স্নেহ, গাইডেন্স। তাই কৌশিক তাঁর অনুরাগীদের অনুরোধ করেছেন, সিরিয়ালটি একটু ধৈর্য ধরে দেখতে। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান সমাজ এমন একটি স্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে যেখানে হয়তো কাকু-জেঠুর বয়সী না হলেও এখনও অবধি অন্তত বয়সে আট-দশ বছরের বড় পুরুষের সঙ্গে মহিলাদের বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ‘পাত্রী চাই’-এর বিজ্ঞাপন দেখলে হামেশাই নজরে পড়ে পাত্রের বয়স বত্রিশ। পাত্রীর বয়স ছাব্বিশ বছরের মধ্যে হওয়া আবশ্যিক। অথচ এই হিসাবটি যখন উল্টে যায়, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (Priyanka Chopra Jonas) যখন তাঁর তুলনায় বয়সে কিছুটা ছোট নিক জোনাস (Nick Jonas)-কে বিয়ে করেন, তখন এই সমাজ নিন্দা করে প্রিয়াঙ্কার। এখনও কিন্তু মনে করা হয় পুরুষ হবেন উচ্চতায় লম্বা ও নারী একটু বেঁটে। নারী পুরুষের তুলনায় লম্বা হয়ে গেলেই তা যেন বিসদৃশ।
এই ধারণাগুলি জন্ম দেয় নারী-পুরুষ বৈষম্যের। যদি কৌশিক ও সমু অভিনীত ‘গোধূলি আলাপ’-এর কাহিনী ভালগার বলে অধিকাংশ দর্শকদের মনে হয়, তাহলে জেনে রাখা ভালো, একবিংশ শতকের আধুনিকতার মোড়কের নিচে এখনও অবধি রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য যা বিয়ের ক্ষেত্রেও কাজ করে। ‘বিকালে ভোরের ফুল’, ‘গোধূলি আলাপ’ তো অনেক পরে, সমাজের মজ্জায় অনেক আগেই চারিয়ে গিয়েছে বিবাহ সম্পর্কে বয়স, উচ্চতা সব দিক দিয়েই নারীকে নিম্নমুখী করে রাখা। সতীদাহ প্রথা, কূলীন বিবাহ অনেক কিছুর বলি হয়েছেন নারীরা। তার রেশ এখনও রয়েছে সামাজিক কাঠামোয়। তাই শুধু শুধু একটি নির্দোষ সিরিয়ালের সমালোচনা না করে ‘গোধূলি আলাপ’ ধৈর্য ধরে দেখাই যায়। হয়তো আজ যাঁদের ভালগার মনে হচ্ছে, একটু ধৈর্য ধরলে তাঁরাই হয়ে উঠবেন এই সিরিয়ালের অনুরাগী।
View this post on Instagram