মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) পরবর্তী বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কান্ডারী ছিলেন অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury), প্রভাত রায় (Prabhat Roy)-রা। তাঁদের হাত ধরে উঠে এসেছেন বর্তমান কালের এক নম্বর নায়ক-নায়িকাদের একাংশ। প্রভাতবাবু, অঞ্জনবাবুরা নতুন মুখের সারি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু সেই নতুন মুখগুলি যখন তারকা হয়ে গেলেন, তাঁদের অনেকেই ভুলে গেলেন মেন্টরদের। অঞ্জনবাবু বহুদিন আগেই চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। বেশ কিছুদিন ধরে প্রভাতবাবু অসুস্থ। কিন্তু তাঁদের হাতে গড়া ভাস্কর্যরা প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে খুব ব্যস্ত। ফলে প্রভাতবাবুকে দেখতে যাওয়ার সময় নেই তাঁদের। কিন্তু লহমা ভট্টাচার্য (Lahoma Bhattacharya) প্রমাণ করে দিলেন, তথাকথিত তারকারা যাঁদের বলেন, এরা নতুন, এদের দ্বারা আদৌ কিছু হবে না, তাঁদের মধ্যেই রয়েছে সেই বিবেকবোধ। ফলে অবলীলায় উঠতি নায়িকা লহমা দেখতে গেলেন তাঁর প্রভাতজেঠুকে।
ফেসবুকে একটি পোস্ট করে সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করে নিয়েছেন লহমা। ফেসবুক থেকেই লহমা জানতে পেরেছিলেন, প্রভাতবাবু অসুস্থ। শনিবার দুপুরে তাঁর বাবা যখন প্রভাতবাবুকে দেখতে যাচ্ছেন, লহমাও বাবার সাথে উঠে পড়েন গাড়িতে। প্রভাতবাবুর বাড়িতে পৌঁছালে তাঁদের দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হয়ে উঠেছিলেন বর্ষীয়ান পরিচালক। সকলের সাথে লহমা শেয়ার করেছেন তাঁর শৈশবের একটি ঘটনা।
কুড়ি বছর আগে শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয়ে এসেছিলেন লহমা। ই টিভির জন্য সেই সময় প্রভাতবাবু তৈরি করেছিলেন ‘কাবুলিওয়ালা’ টেলিফিল্মটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর কালজয়ী উপন্যাস ‘কাবুলিওয়ালা’ অবলম্বনে নির্মিত এই টেলিফিল্মে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জী (Victor Banerjee)। মিনির ভূমিকায় ছিলেন লহমা। সেই সময় প্রভাতবাবু বা ভিক্টরবাবুর গুরুত্ব বোঝার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। ‘কাবুলিওয়ালা’-য় ‘ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে’-র সাথে নাচতে গিয়ে প্রভাতবাবুর বকুনি খেয়েছিলেন লহমা। বর্তমানে ঘটনাচক্রে আবারও অভিনয় জগতে ফিরেছেন লহমা। এখন অনুভব করেন, প্রভাতবাবু, ভিক্টরবাবুদের সাথে কাজ করতে পেরেছিলেন তিনি। নিজেকে লাকি মনে করেন লহমা।
বহু বছরের জমে থাকা কৃতজ্ঞতা নীরবে জানাতে গিয়েছিলেন লহমা। প্রভাতবাবু তাঁকে দেখে মজা করে বলেছেন, তিনি মোট সাড়ে তেরজন নায়িকা তৈরি করেছেন। সাড়ে তের নম্বরে অবশ্যই রয়েছে লহমার নাম। হেসে ফেলেছিলেন লহমাও। মনে মনে শুধু তাঁর একটাই প্রার্থনা, প্রভাতজেঠু যেন দ্রুত ভালো হয়ে ওঠেন।